কলকাতা: ট্রামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কলকাতার (Kolkata) হৃদয়ের সম্পর্ক। তিনশো বছরের প্রাচীন কলকাতায় এখন ট্রামের (Tram) দেড়শো বছর পূর্তি উৎসব (One Hundred and Fifty Years Celebrating) চলছে। এই ট্রাম যারা কাকভোর থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বুকে ছুটিয়ে নিয়ে যেত, তাদের মধ্যে রাম পরিবারের সঙ্গে ট্রামের সম্পর্ক একশো বছরেরও বেশি সময়ের। রাম পরিবার বছরের পর বছর ধরে বংশ পরম্পরায় ট্রাম ছুটিয়ে চলেছে। সেই রাম পরিবারের (Familly) শেষ প্রজন্ম গোপাল রামের আজ ট্রামের সঙ্গে সম্পর্কের (Relation) শেষ দিন।
১৯৮২ সালে গোপাল রাম তাঁর বাবা জগন্নাথ রামের নমিনি হয়ে চার পুরুষের ড্রাইভার হিসেবে ট্রাম কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিলেন। বাবা জগন্নাথ রাম, দাদু মহাবীর রাম, দাদুর বাবা অন্তূরাম দারোয়ান হিসেবে ব্রিটিশ মালিকানাধীন ট্রাম কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বলতে গেলে রামে আর ট্রামে নিবিড় যোগাযোগ। এই পরিবারের প্রাচীনরা ট্রামের উত্থান দেখেছেন, ঘোড়ায় টানা ট্রামের কাহিনী শুনেছেন বাপ ঠাকুরদাদের মুখে মুখে। ট্রাম নিয়ে শহরে বিভিন্ন আন্দোলন ও উন্মাদনাও সাক্ষী রাম পরিবার।
আরও পড়ুন: Teacher Crisis: স্কুলে বদলির হিড়িক দেখে উদ্বিগ্ন বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি
গোপাল রাম জানান, তাদের পরিবার ঘোড়ায় টানা ট্রাম থেকে স্টিম ইঞ্জিন চালিত ট্রাম, তা নিয়ে মানুষের উন্মাদনা, ট্রাম শ্রমিকদের উপর ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার, বিভিন্ন সময়ে ট্রাম শ্রমিকদের আন্দোলন, এক পয়সা ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে ট্রাম পোড়ানোর মতো নানা ঘটনার সাক্ষী। ট্রামকে সরকারি সংস্হা হিসাবে অধিগ্রহণের দাবি, এক আনা ভাড়া থেকে সাত টাকা ভাড়া, ট্রামের ধাক্কায় কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু, ট্রামের মধ্যেই বাউল সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চার পুরুষ ধরে সবটাই চোখের সামনে দেখেছে রাম পরিবার।
ট্রামের সঙ্গে সম্পর্ক শেষের কথা ভাবতে ভাবতেই মনটা কেমন উদাস হয়ে গেল গোপালের। চোখের কোণে চিকচিক করে উঠল জল। চোখ মুছতে মুছতে গোপাল বলছিলেন, ট্রাম নাকি রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি করে বলে অনেকে মনে করে। এটা কি সম্ভব? আসলে ট্রাম কারও পথ আটকায় না, বরং অন্যরায় ট্রামের পথ আটকায়। ট্রাম পরিবেশের বন্ধু। আমি এখনও মনে করি, কলকাতা শহরে ট্রাম বাঁচলে পরিবেশও বাঁচবে।