বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (The World Health Organization) বা সংক্ষেপে হু (WHO) একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে দেড় ডজনেরও বেশি ছত্রাককে সূচিত করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পক্ষে ক্ষতিকারক (Fatal) হয়ে উঠছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাবি, মানবজাতির (Humanity) জন্য এই ছত্রাকগুলি আগামী দিনে সর্বনাশা ব্যাধি ডেকে আনতে পারে। হু যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে যে ১৯টি ছত্রাককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, সেগুলিকে “প্রায়োরিটি প্যাথোজেন্স (PriorityPathogens)” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছত্রাক ইস্ট (Yeasts) এবং ছাঁচ (Mould) গোত্রীয়। তার চেয়েও বড় কথা হলো, এই ছত্রাকগুলি দ্রুত বিবর্তন (Evolve) ঘটাচ্ছে এবং প্রচলিত চিকিৎসার প্রতিরোধক হয়ে উঠছে। যা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
রিপোর্ট বলছে, প্রতি বছর ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ গোটা বিশ্বে গুরুতর সংক্রমণের শিকার হন। প্রত্যেক বছর সারা বিশ্বে ১৭ লক্ষ মানুষ কেবলমাত্র ছত্রাক সংক্রমণ (Fungus Infections)-এ মারা যান। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। মহামারী হলে যে কী হতে পারে, তা বর্তমান বিশ্বকে কোভিড সংক্রমণ দেখিয়ে দিয়েছে। মহামারী চলাকালীন যে কোনও ধরনের সংক্রমণ মারাত্মক আকার নেয়। বিশেষ করে হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা, যাঁদের রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা (Immune System) ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাঁদের মধ্যে এই সমস্ত ছত্রাক সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: IVF: ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন চলাকালীন বিরল সমস্যা, মৃত্যু বছর তেইশের তরুণীর
যেমন কোনও ব্যক্তি যখন কোভিড সংক্রমিত হন, তাঁর রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। কোভিড চিকিৎসার অন্যতম বিকল্প হল স্টেরয়েড (Steroid), কিন্তু এই স্টেরয়েড আবার ছত্রাকের বিরুদ্ধে শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়। তখনই রোগীর শরীরে প্যাথোজেন গিয়ে তার রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে। কিন্তু শরীর রুগ্ন হয়ে পড়ার কারণে তা প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়াদের নিয়ে একটি তুলনামূলক তালিকা প্রকাশ করেছে হু। পাশাপাশি আরও একটি তালিকা তৈরি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে যে সমস্ত ছত্রাকজনিত প্যাথজেন নিয়ে গবেষণা পুরোপুরি চালানো যাচ্ছে না, সেই ছত্রাকদের ওই তালিকায় স্থান দেওয়া হয়ে। হু-এর দাবি এই সমস্ত ছত্রাকগুলি মানবজাতির জন্য বড় সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। যেহেতু অপর্যাপ্ত তহবিলের কারণে গবেষণা চালানো যাচ্ছে না ঠিক মতো, তার ফলে ওই প্যাথোজেনগুলির সঠিক রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত ফাঁকফোকড় রয়ে যাচ্ছে।
হু-এর সতর্কবার্তা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল ডক্টর হানা বলখি জানিয়েছেন, “ব্যাক্টেরিয়াল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স প্যানডেমিক (Bacterial Antimicrobial Resistance Pandemic)-এর ছায়ায় বেড়ে ওঠা ছত্রাক সংক্রণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এমনকি চিকিৎসার প্রতি এখন আরও প্রতিরোধক হয়ে উঠছে, যা সারা বিশ্বের জনসংখ্যার স্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয়।” বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এজন্য বিশ্বের প্রতিটি দেশকে ১৯টি বিপজ্জনক ছত্রাককে চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা জানিয়ে উপযুক্ত ধাপে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
ছত্রাক সংক্রণ বৃদ্ধি কারণ
গোটা পৃথিবী বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে চিন্তিত। যেহেতু ক্রমাগত বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই ছত্রাকগুলি বিবর্তিত হচ্ছে, যার ফলে তারা আরও বেশি করে মানবশরীরে ছড়িয়ে পড়ার মতো সক্ষম হয়ে উঠছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ছত্রাকের বৈশিষ্ট্য, তার বাসস্থল এবং যে প্রাণী দেহে বেড়ে উঠে, তার পরিবর্তন ঘটছে। এর থেকে আবার নতুন ধরনের ছত্রাক দেখা দিচ্ছে। নতুন ধরনের ছত্রাক এবং ছত্রাকের রোগ বিস্তারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক না থাকলে, মানবজাতির জন্য আগামী দিনে তা সর্বনাশা আকার ধারণ করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে হু।