ইম্ফল: ফের অগ্নিগর্ভ মণিপুর (Manipur Violence)। রাজ্যে মেইতি এবং কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে অশান্তিতে ইম্ফলের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চল, বিষ্ণুপুর জেলায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে বুধবার। গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক যুবক। ঘটনায় আহত হয়েছেন দু’জন। বিষ্ণুপুর জেলায় উত্তেজিত জনতা পিডব্লিউডি মন্ত্রী কোন্থৌজাম গোবিন্দাসের (PWD Minister Konthoujam Govindas) বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ। কিছু কিছু বাড়িতে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রথম কোনও মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। এই হিংসার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। তাঁদের মধ্যে একজন প্রাক্তন বিধায়ক বলেও জানা যায়।
স্থানীয়রা এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ। তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং, গোবিন্দাস এবং অন্যান্য বিজেপি বিধায়করা অশান্তির বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছেন। সশস্ত্র জঙ্গিদের থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট যথাযত কাজ করছেন না। তাই ক্ষোভের বশে বিজেপি নেতা তথা মণিপুরের মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা চালায় তাঁরা। তবে এই ভাঙচুরের সময় মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের কোনও সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। বাড়ির দরজা, জানালা, আসবাবপত্র ও কিছু ইলেকট্রনিক গেজেট এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: Typhoon Mawar | গুয়াম দ্বীপে ২৪০ কিমি বেগে আছড়ে পড়ল ‘মাওয়ার’!
রাজ্যে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধায় নতুন করে সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনীকে তলব করা হয়েছে। জারি হয়েছে কারফিউ। বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা। অন্যদিকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন সেনাকর্তা এবং রাজ্য প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। ওই হিংসায় প্রায় ৭০ জনের প্রাণ গিয়েছিল বলে জানা যায়। আর এই অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম কোনও মন্ত্রীর বাড়়িতে হামলা হল। এদিকে, পূর্ব সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আর পি কলিতা স্থল নিরাপত্তা পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করতে বুধবার সংঘর্ষ-বিধ্বস্ত মণিপুরে তিন দিনের সফর গিয়েছেন। মণিপুরে যাতে অশান্তি না ছড়়ায় সেই দিকেও নজর রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই আশান্তির পিছনে আছে মণিপুর হাইকোর্টের একটি নির্দেশ। মেতেই সম্প্রদায়ের লোকজন তাদেরকে তফসিলি উপজাতি করা দাবি করেছিল। এই দাবি বিবেচনা করে দেখার জন্য মণিপুর সরকারকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এর ফলে, কুকি-ঝাোমি ও টাংখুল নাগাদের মতো রাজ্যের সংখ্যালঘু আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে। তারপরেই এই নির্দেশের বিরোধিতায় পথে নামে আদিবাসীরা। গত ৩ মে থেকে সে রাজ্যে দুই সম্প্রদায় কুকি-ঝোমি ও অন্য আদিবাসীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চলছে। এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৭০ জন। আহত হয়েছেন ৩০০ জনের বেশি। একাধিক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মণিপুরে জনগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকশো বছর ধরে তা চলছে।