সিঙ্ঘু: দিল্লিতে তাপমাত্রা নেমেছে ১০ ডিগ্রিতে৷ কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় জবুথবু রাজধানী৷ তার উপর আজ সকাল থেকে সিঙ্ঘু সীমান্তে বইছে খুশির হাওয়া৷ শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বড় ঘোষণা৷ বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিচ্ছে কেন্দ্র৷ আন্দোলনকারীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল৷ কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা আমরা কয়েকজন কৃষককে বোঝাতে পারিনি৷’
আরও পড়ুন: প্রথম থেকেই আন্দোলনকারীদের পাশে তৃণমূল, মোদির ঘোষণার পরেই কৃষকদের শুভেচ্ছা মমতার
প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই ঘোষণা শুনতেই এতদিন দীর্ঘ আন্দোলন ও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন কৃষকরা৷ আজ মোদির ঘোষণা তাঁদের লড়াইকে সফল করে তোলে৷ কেউ কেউ বলছেন, এক বছর ধরে চলতে থাকা আন্দোলনের ফসল পেলেন কৃষকরা৷ সিঙ্ঘু সীমান্তে তাই বাঁধনহারা উচ্ছাস৷ ভাঙড়া গানে চলে নাচ৷ একে অপরকে আলিঙ্গন করে সেলিব্রেশনে মজেছেন কৃষকরা৷ জিলিপি বানিয়ে বিতরণ করা হয় সকলের মধ্যে৷ সবার চোখে-মুখে আনন্দ৷ এক বছর পর বাড়ি ফিরবেন তাঁরা৷ গত বছর নভেম্বর থেকে বাড়ি ঘর ছেড়ে সীঙ্ঘু সীমান্তে অস্থায়ী ঠিকানা গড়ে উঠেছিল হাজার হাজার কৃষকের৷ রোদ-বৃ্ষ্টি-ঠান্ডা উপেক্ষা করেই দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন প্রতিবাদীরা৷ আজ সেই সব কথা মনে পড়ে চোখ ভিজে আসছে আন্দোলনরত কৃষকদের৷ দীর্ঘ আন্দোলনে ৭০০ সঙ্গীকে হারিয়েছেন তাঁরা৷ তাতেও গতি হারায়নি অহিংস আন্দোলন৷ কৃষকরা বলতেন, আন্দোলন তুলে নিলে ‘শহীদদের’ আত্মত্যাগ বৃথা হয়ে যাবে৷

আরও পড়ুন: আইন প্রত্যাহারে অর্ডিন্যান্স নয় কেন, প্রশ্ন তুললেন প্রিয়াঙ্কা
২৫ নভেম্বর ২০২০৷ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ওই দিন দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা৷ দাবি ছিল, এই কালা আইন প্রত্যাহার করতে হবে৷ তার পর দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন কৃষকরা৷ প্রথম থেকে রাকেশ টিকায়েতদের একটাই দাবি ছিল৷ কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে৷ কিন্তু সরকারও গোঁ ধরে ছিল৷ কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া তাঁদের বাকি দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু কৃষকরা নিজেদের দাবিতে অটল ছিলেন৷ দেশ জুড়ে ধর্মঘট, রেল রোকো, রাস্তা অবরোধ, লাল কেল্লা অভিযান, সংসদ ভবন অভিযান- বাদ যায়নি কিছুই৷ এ লড়াইয়ে তাঁরা পাশে পেয়েছিলেন দেশের বিরোধীদের৷ সেই সঙ্গে নাগরিকদের একটা বড় অংশের মানুষের সমর্থনও কৃষকদের পাশে ছিল৷ এই সমর্থনই তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ ও প্রেরণা জোগায়৷ যার জেরে, ৫৬ ইঞ্চির ছাতি নতিস্বীকারে বাধ্য হলেন৷ তার পর থেকে দেশবাসী ও বিরোধী নেতা-নেত্রীদের শুভেচ্ছা ও আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে কৃষকদের মধ্যে৷ এক বাক্যে বিরোধীরাও বলছেন, কৃষকদের সত্যাগ্রহে মাথা নত অহঙ্কারের৷