হায়দরাবাদ: পূর্বনির্ধারিত সময়েই ‘স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি’ (Statue of Equality)-র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সন্ত রামানুচার্যের(Sant Ramanucharya) ১০০৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার তাঁরই ২১৬ ফুট উচ্চতার মূর্তি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী৷ তেলঙ্গনায় হায়দরাবাদের নিকটস্থ সামশাবাদে ৪৫ একর জমিতে এই মূর্তি নির্মাণ করে সাম্যের বার্তা বহনকারী সন্ত রামানুচার্যের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘জগৎগুরু শ্রী রামানুচার্যের এই বিশাল মূর্তির মাধ্যমে ভারত শক্তি এবং অনুপ্রেরণাকে মূর্ত করছে। রামানুচার্যের এই মূর্তিটি তাঁর জ্ঞান, বিচ্ছিন্নতা এবং আদর্শের প্রতীক। এই মূর্তি আমাদের সাম্যের বার্তা দিচ্ছে৷ এই বার্তা নিয়েই আজ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’ মন্ত্রে দেশ তার নতুন ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করছে।’’
Statue of Equality is a tribute to the eternal teachings of Sri Ramanujacharya, particularly the emphasis on harmony, brotherhood and social empowerment. pic.twitter.com/mclErDw9yh
— Narendra Modi (@narendramodi) February 5, 2022
মোদি আরও বলেন, ‘‘একদিকে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ ঐক্যের শপথের পুনরাবৃত্তি করছে৷ অন্যদিকে রামানুচার্যের ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি’ সমতার বার্তা দিচ্ছে।
একাদশ শতাব্দীতে গোটা দেশে পায়ে হেঁটে ঘুরে সাম্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন সন্ত রামানুচার্য। তিনি ছিলেন একজন ধর্মতাত্ত্বিক ও দার্শনিক। তিনি শ্রী রামানুচার্য, উপাধ্যায়, লক্ষ্মণ মুনি নামেও পরিচিত। সাধারণভাবে হিন্দুরা তাকে হিন্দু দর্শনের বিশিষ্টা দ্বৈত বেদান্তের প্রধান ব্যাখ্যাদানকারী হিসেবে দেখেন। বৈষ্ণব আচার্য রামানুচার্যের শিষ্য রামানন্দ। যার শিষ্য ছিলেন কবি ও সুরদাস। রামানুজ বেদান্ত দর্শনের উপর ভিত্তি করে তাঁর নতুন দর্শন বেদান্ত রচনা করেছিলেন। বেদান্ত ছাড়াও রামানুজাচার্য সপ্তম-দশম শতকের মরমী ও ভক্ত আলওয়ার সাধুদের ভক্তি দর্শনের এবং দক্ষিণের পঞ্চরাত্র ঐতিহ্যের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।
সেই সন্ত রামানুচার্যের সহস্রাব্দী সমারোহ উপলক্ষ্যে টানা ১৪ দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে হায়দরাবাদে। ৩ ফেব্রুয়ারি যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মূর্তির উদ্বোধন করেন। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি রামানুচার্যের ১২০ কেজি সোনার মূর্তির উন্মোচন হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, ৫৪ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ‘ভদ্রা বেদী’ ভবনের উপর স্ট্যাচু অব ইক্যুয়ালিটি নির্মীত বসানো হয়েছে। সোনা, রুপো, তামা, ব্রাস ও জিঙ্ক-এই পঞ্চধাতু দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছে। মূর্তির গর্ভগৃহের ভিতরেও ৫৪ ইঞ্চি উচ্চতার ১২০ কেজি সোনা দিয়ে একটি মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। একটি তলে বৈদিক ডিজিটাল গ্রন্থাগার ও গবেষণাকেন্দ্র, ভারতীয় প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহালয়, থিয়েটার, রামানুচার্যের জীবন সম্পর্কিত শিক্ষামূলক গ্যালারি রয়েছে। গোটা প্রকল্পে প্রায় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে প্রাপ্ত দানের টাকায় কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi: প্রধানমন্ত্রী নন, দেশ চালাচ্ছেন এক রাজা, রাহুলের নিশানায় ফের মোদি
রামানুচার্যের মূর্তি নিয়ে মোদি সরকার যতই সাম্যের কথা বলুক না কেন, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে আদতে হিন্দুত্বের বার্তা দিতে চেয়েছে বিজেপি৷ ঠিক যেমন হায়দরাবাগ পুরনিগমের ভোটে বিজেপির প্রচারে যোগী আদিত্যনাথের মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের নিয়ে আসা হয়েছিল৷ যদিও তখন অনেকেই ভেবে ছিলেন পুরভোটে হায়দরাবাদে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক হারাবে বিজেপি৷ আদতে কিন্ত তা হয়নি, হায়দরাবাদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত একাকায় ব্যাপক সংখ্যক ভোটে জিতে বোর্ড গঠন করে বিজেপি৷ তাই, ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি’র মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদের বার্তা দিলেও মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কে সহজেই ফাটল ধরানো যাবে না তা জানেন বিজেপি নেতারা৷