কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক: চৌত্রিশের ধারেকাছে এলে সিপিএমের মধ্যে কিছু একটা হয়। হয় হারের পদধ্বনি শোনে, না হয় কোনও বোধোদয় হয়, নতুন কোনও ‘শপথ’ নেওয়াও বিচিত্র নয়।
আজ ‘কাকাবাবু’ মানে মুজফ্ফর আহমেদের ১৩৩ তম জন্মদিন। সামনের বছরেই ১৩৪। এই সময় বিমান বসু ‘গণশক্তি’তে একটি মোক্ষম প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘আমরা যারা এখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছি আমি সহ তাদের সকলকেই আত্মজিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন যে আমরা পার্টির জন্য কত সময় ব্যয় করি?’
আরও পড়ুন-সিপিএম থেকে বহিষ্কারের মুখে অনিল কন্যা অজন্তা
বিমানবাবু জানেন, দলের কর্মীরা এখন মাঠে-ঘাটে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন না। তাঁদের সময় চলে যায় ফেসবুকে। সেখানে বিপ্লব-স্পন্দিত বুকে সবাই লেনিন। বিরোধীদের কথার জালে শুইয়ে দেওয়া, সামান্য কাজকে অসামান্য করে দেখানোর বাকচাতুরি—-এসবে ফেসবুকে খানিক পিঠ চাপড়ানি জোটে বটে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বিপ্লব তো দূরের কথা, বিধানসভায় একটি আসনও জোটে না। মানুষের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জ্বালাই ফুটে উঠেছে একদা মাঠ-ঘাট চষে ফেলা নেতা বিমানের কলমে।
কাকাবাবুদের ‘গৌরবজনক গাঁথা’ স্মরণ করে বিমানবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, মেথর-ঝাড়ুদার, পীড়িত মানুষদের দুয়ারে গিয়ে যে-কাজ কর্মীদের করার কথা ছিল, সেই কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে কটাক্ষ, কাউকে অকারণ স্তুতি—-এই নিয়েই চলছে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের সলতে পাকানো। ফেসবুকের কথা বিমান উল্লেখ করেননি বটে, কিন্তু তাঁর নিশানায় যে মার্ক জাকারবর্গের চণ্ডীমন্ডপও আছে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
আরও পড়ুন-সিপিএম দিশাহারা, খাবি খাচ্ছেন নেতারা
বিমানের মতে, ‘গত শতাব্দীর বিশের দশক ও তিরিশের দশকে অসংখ্য ছোট ছোট লড়াই-সংগ্রামের পথ বেয়ে বড় লড়াইয়ের ভিত্তি গড়ে উঠেছে। আমরা যেন ভুলে না যাই আজকেও স্থানীয় ভিত্তিতে ছোট ছোট লড়াই সফলভাবে সংগঠিত করার ভিতের উপরে দাঁড়িয়েই ভবিষ্যতে বড় লড়াই সংগঠিত করার দামামা বেজে উঠবে।’ চল্লিশের দশকে দুর্ভিক্ষে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে জেলায় জেলায় লঙ্গরখানা, কৃষকদের নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন—-কমিউনিস্টদের নানাবিধ গৌরবগাঁথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা।
কিন্তু ‘জনগণের জীবনযন্ত্রণা’ লাঘবে এখনকার কর্মীদের যে কোনও তাপউত্তাপ নেই তা খোলাখুলি জানাতে ভোলেননি বিমান। তিনি লিখেছেন, ‘কাকাবাবুদের সবসময় ধ্যানজ্ঞান ছিল কী করে পার্টি জনগণের জীবনযন্ত্রণা লাঘব করতে পারে, এ কাজে কত ভালো ভাবে নিজেকে যুক্ত করা যায়। জনগণের মধ্যে পার্টিকে প্রসারিত করতে পার্টি পরিচালিত বিভিন্ন গণসংঠনের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ পরিচালনা করতে যা যা করা উচিত তা কি আমরা সব ঠিকঠাক সম্পন্ন করার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করি?’
আরও পড়ুন- সিপিএম-কে ফ্যাসিস্ট বলে আক্রমণ দেবাংশুর, পালটা জবাব শতরূপের
কিছুদিন আগেই তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে দলীয় কর্মীদের একাংশের তোপের মুখে পড়েছেন অজন্তা বিশ্বাস। তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শৃঙ্খলাভঙ্গ যদি অপরাধ হয়ে থাকে তা হলে কমিউনিস্ট দলে আত্মত্যাগের অভাব কেন অপরাধ নয়? বিমান কি তা হলে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন?
বিমান আসলে কাকাবাবুর জন্মদিনে কমিউনিস্টদের ইতিকর্তব্য মনে করিয়ে দিতে চাইছেন। যা করা উচিত, সেটা যে করা হচ্ছে না, সেটাই বিমানের লেখার মূল উপজীব্য। শেষে কাকাবাবুর ১৩৩ জন্মদিনে তিনি সেই বহুচর্চিত ‘শপথ’-এর কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আমরা পার্টির যে স্তরে থেকেই কাজ করি না কেন, তা পরিকল্পিত ভাবে ও সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য আমাদের শ্রেষ্ঠ শ্রম ও সময় দেব।’
বিমানের বক্তব্য নতুন কোনও বিতর্কের জন্ম দেবে কি না, তা সময়ই বলবে।