নয়াদিল্লি: আইনের অস্তিত্বহীনতা মনে করিয়ে দেয় বুলডোজার (bulldoze case) । ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্তের সম্পত্তি ভাঙা যায় না, কড়া নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। আদালত জানিয়ে দিয়েছে, কোনও অপরাধে অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত হলেই তার বাড়ি বা সম্পত্তি প্রশাসন ভেঙে গুড়িয়ে দিতে পারে না। এই ধরনের প্রশাসনিক কাজ আইনবিরোধী।
বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই ধরনের কাজ একইসঙ্গে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতির বিরোধী। আদালত অভিমত প্রকাশ করে বলে, ব্যক্তির অপরাধ বিচার করে সাজা দেওয়ার এক্তিয়ার আদালতের। কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করার অধিকার প্রশাসনের নেই। তাই সাজা দেওয়ার ক্ষমতাও নেই।
আরও পড়ুন: ৭০০ বছরের পুরনো সৌধে জবরদখল! ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট
প্রশাসন যখন বুলডোজার দিয়ে কোনও বাড়ি এমন ক্ষেত্রে ভেঙে দেয়, তা নিঃসন্দেহে শিহরণ উদ্রেককারী। কারণ সে ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া মানা হয়নি। সেই সঙ্গে আইনের অস্তিত্বহীন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। যেখানে ক্ষমতাধরদের অধিকার শেষ কথা বলে। অথচ আমাদের সংবিধান আইনের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে রাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই। এমন ক্ষেত্রে কঠোর আইনি পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আমাদের সাংবিধানিক নীতি ও মূল্যবোধ এমনই যে, সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ নেই, জানিয়েছে আদালত।
শীর্ষ আদালত জোর দিয়ে বলে, আশ্রয় একটি মৌলিক অধিকার এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তা কেড়ে নেওয়া উচিত নয়। সংবিধানের ১৯ এবং ২১তম অনুচ্ছেদেও এর উল্লেখ রয়েছে। এই আবহে সংবিধানর ১৪২ নং অনুচ্ছেদের অধীনে থাকা ক্ষমতা প্রয়োগ করে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির কর্মকর্তাদের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশব্যাপী নির্দিষ্ট নিয়ম পালন করা বাধ্যতামূলক। আধিকারিকদের দায়বদ্ধতা থাকতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, এখন থেকে যদি কোনও বেআইনি নির্মাণও ভাঙতে হয় তাতেও সেই বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম থাকা উচিত। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে আগে কারণ জানিয়ে নোটিস পাঠাতে হবে। সেই নোটিস পাঠানোর পর ১৫ দিন সময় দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে। এই বিষয়ে জেলাশাসককে জানাতে হবে। জেলাশাসকের নিয়োগ করা নোডাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে উল্লেখিত নির্মাণটি ভাঙার কথা বিবেচনা করে দেখা হবে।
আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে বাড়ি ভেঙে দেওয়া যায় না, এটি নিঃসন্দেহে বেআইনি কাজ। সেক্ষেত্রে আইন নিজের হাতে নেওয়ার দায়ে প্রশাসন অপরাধী। তাই যে বা যারা বাড়ি ভাঙায় যুক্ত থাকবে, তাদেরকেই এমন পদক্ষেপের দায় নিতে হবে। কারণ এমন কাণ্ডের ফলে সাজাপ্রাপ্তের সঙ্গে তার নিরাপরাধ পরিবারকেও ভুগতে হয়।
উল্লেখ্য, বুলডোজার জাস্টিস বন্ধ করার দাবিতে জামিয়াত উলেমা-ই হিন্দ ও আরও বেশ কিছু আবেদনকারীর এক গুচ্ছ মামলায় রায় দিল শীর্ষ আদালত।
দেখুন অন্য খবর: