জয়জ্যোতি ঘোষ
১৯৯৩-এর নভেম্বর। শীতের কলকাতাতেও হিরো কাপ সেমিফাইনালকে ঘিরে উষ্ণতা বাড়ছিল। রোমহর্ষক ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা। এই হিরো কাপ সেমিফাইনালের যাবতীয় রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু শচীনের করা শেষ ওভার।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ১৯৫ রান তোলে ভারত। ৯০ রানের ক্যাপটেনস নক খেলেন মহম্মদ আজহারউদ্দিন। অন্যদিকে, ৪৮ রান করে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন প্রভিন আমরে। এরপর ১৯৬ রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেট পতন শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার। একদিক থেকে যদিও ধরে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেন অ্যান্ড্রু হাডসন। তাঁর ৬২ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি বাউন্ডারি। এই ম্যাচের আসল টুইস্ট আসে শেষ ওভারে। ৪৯ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ১৯০। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬ রান। এমন অবস্থায় ভারতীয় বোলারদের মধ্যে জাভাগাল শ্রীনাথ-মনোজ প্রভাকর-কপিল দেব-সলিল আঙ্কোলার ওভার বাকি ছিল। অধিনায়ক আজহার প্রথমে কপিলকে শেষ ওভার করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ৯০,০০০ দর্শকে ঠাসা ইডেন গার্ডেন্সে এরকম একটা হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চাননি ৮৩-র বিশ্বজয়ী অধিনায়ক। একই পথের দিশারি জাভাগাল শ্রীনাথ-মনোজ প্রভাকর-সলিল আঙ্কোলাও। সেই সময়ে ভারতীয় দলের ম্যানেজার অজিত ওয়াদেকর অধিনায়ক আজহারকে বার্তা পাঠান শেষ ওভার শচীন তেন্ডুলকরকে দিয়ে চেষ্টা করা যেতেই পারে। কারণ হিসেবে অজিত ওয়াদেকর পরবর্তীতে বলেছিলেন, ‘শচীনকে শেষ ওভার দিতে বলেছিলাম তার কারণ দক্ষিণ আফ্রিকার কোনও ব্যাটার সেই ম্যাচে তাঁকে খেলেননি। তাই শচীনকে ফেস করা প্রোটিয়া ব্যাটারদের কাছে এতটা সহজ হত না।’ আর এই গেমপ্লেনই হয়ে ওঠে মাস্টারস্ট্রোক!
আজহার সোজা শচীন তেন্ডুলকরের কাছে গিয়ে শেষ ওভার করার প্রস্তাব দেন। শচীন কিন্তু হাসি মুখে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন। শীতের রাত হওয়ায় শচীনের শরীর কিছুটা স্টিফ ছিল। ফলে শেষ ওভার করার আগে কিছুটা ওয়ার্ম আপ করেন লিটল মাস্টার। তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কিছু ভুল করেননি। পরবর্তীতে শচীন নিজে বলেছিলেন, ‘আজহার এসে যখন শেষ ওভার করতে বলেন, আমি খুশি মনে রাজি হয়ে যাই।’ প্রথম বল অফ সাইডে কাট করেন ব্রায়ান ম্যাকমিলন। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স। এরপর পরপর তিনটি বলে রান নিতে ব্যর্থ হন অ্যালন ডোনাল্ড। পঞ্চম বল লং অনে পাঠান ডোনাল্ড। শেষ বলে স্ট্রাইকিং এন্ডে ছিলেন ব্রায়ান ম্যাকমিলন। যিনি ৪৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
মাঠেই উইকেটকিপার বিজয় যাদবের সঙ্গে একটি মিটিং করেন শচীন তেন্ডুলকর। ছোট স্ট্র্যাটেজিও নেওয়া হয়। বিজয় যাদবকে উইকেটের থেকে কিছুটা পিছনে দাঁড়াতে নির্দেশ দেন শচীন। লক্ষ্য ছিল একটাই- যাতে কোনওভাবেই বল বাউন্ডারি লাইন পার না করে। যেটা চেয়েছিলেন শচীন সেটাই হয়েছিল। ম্যাকমিলনের ব্যাটের ইনসাইড এজে বল লাগলেও সেটা উইকেটকিপার ধরে নেন। ২ রানে রোমহর্ষক ম্যাচ জিতে হিরো কাপের ফাইনালে পৌঁছে যায় ভারত। ম্যাচ শেষে মশালে মোড়া ইডেন গার্ডেন্সের বিরল দৃশ্য আজও ভুলতে পারেননি ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন রমেশ তেন্ডুলকর!
অন্য খবর দেখতে ক্লিক করুন: