কলকাতা: জন্মালেই মরতে হবে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। সেই কারণে অমরত্ব নিয়ে মানুষের মধ্যে বরাবর একটা কৌতূহল রয়েই গেছে। মৃত্যুকে জয় করার অনেক প্রচেষ্টাও হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু কিছুতেই এই অমোঘ নিয়মকে বদলানো সম্ভব হয়নি। তবে এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক সামুদ্রিক প্রাণীর সন্ধান পেলেন, যে প্রাণীটি জন্ম ও মৃত্যুর এই নিয়মকে মেনে চলেনা। টুরিটোপসিস ডোহরনি নামের একটি জেলিফিশ প্রকৃতির সব নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ করতে সক্ষম। সেই কারণে এটিকে ‘অমর জেলিফিশ’ও বলা হয়। কারণ, সময়ের সঙ্গে এই জলজ প্রাণীর মধ্যে কোনওরূপ বার্ধক্য আসেনা। বরং, বয়স বাড়লেই এই বিশেষ প্রজাতির জেলিফিশ যৌবনের দিকে এগিয়ে যায়। সেই কারণে বিজ্ঞানীদের দাবি, এই সামুদ্রিক জীব আদতে অমর। কিন্তু কেন এমনটা হয়? চলুন একটু বিস্তারে জেনে নেওয়া যাক।
স্বাভাবিক অবস্থায়, টুরিটোপসিস ডোহরনি-র জীবনচক্র অন্যান্য জেলিফিশের মতোই। এদের জীবন শুরু হয় একটি লার্ভা হিসেবে, যা পরে একটি পলিপে রূপান্তরিত হয়, যা দেখতে অনেকটা সামুদ্রিক ফুলের মতো। এরপর এটি প্রাপ্তবয়স্ক মেডুসাতে রূপান্তরিত হয়। তবে পরিবেশগত চাপ বা শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হলে এই জেলিফিশ জীবনচক্রের একটি প্রাথমিক পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে। অর্থাৎ, এটির প্রাপ্তবয়স্ক কোষগুলি পুনরায় পলিপ বা যৌবন পর্যায়ে ফিরে যায়। এই রূপান্তর প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ‘ট্রান্সডিফারেনশিয়েশন’। যখন জেলিফিশটি পুনরায় পলিপে পরিণত হয়, এটি আবারও এটির জীবনচক্র প্রথম থেকে শুরু হয়। এই রূপান্তর প্রক্রিয়া বারবার ঘটতে পারে। এই কারণে, বিজ্ঞানীদের ধারণা এই জেলিফিশ বয়সজনিত মৃত্যুকে এড়াতে সক্ষম; অর্থাৎ, এটি ‘অমর’।
আরও পড়ুন: সমুদ্রের নীচে রহস্যময় পিরামিড! মানুষের তৈরি না’ও হতে পারে, মত বিজ্ঞানীদের
১৮৮৩ সালে প্রথম ভূমধ্যসাগরে ‘অমর’ জেলিফিশ আবিষ্কৃত হয়। তবে এর অমরত্বের বৈশিষ্ট্য প্রথম আবিষ্কৃত হয় প্রায় এক শতাব্দী পরে। এই জেলিফিশ আকারে একটি আঙুলের নখের সমান। তবে তথ্যের বিচারে অমর হলেও, এই জেলিফিশ অবিনশ্বর নয়। কারণ, প্রাকৃতিক অবস্থায় এটি অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর মতোই শিকারি প্রাণী, রোগ, এবং অন্যান্য পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। তবুও, এই অমরত্বের রহস্য বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করেছে এবং এর প্রক্রিয়া বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালাচ্ছেন। বিজ্ঞানীরা এই জেলিফিশের শারীরিক গঠন বুঝে বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগের চিকিৎসা হিসেবে এটিকে ব্যবহার করতে চাইছেন।
দেখুন অন্য খবর: