কলকাতা: কাশ-শিউলি জানান দিচ্ছে মা আসছেন। বাঙালি আর দূর্গাপুজো অতপ্রত ভাবে জড়িয়ে। আর আর ঘরে ঘরে দেখা মেলেনা রেডিও-র। জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে বেতার। সেই স্মাট ফোনের যুগে জায়গা দখল করেছে হেডফোন। একান্নবর্তী পরিবারের স্রেফ নস্ট্যালজিয়া হয়ে গিয়েছে। এই সবের মাঝেই শিকড়কে গোটা জাতি। তবু বাঙালির কাছে অতিবড় মহানায়ক হল বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র (Birendra Krishna Bhadra)। এই ‘ভদ্র’লোকের মোহিনীকণ্ঠও প্রতিবারই গোটা একটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে মহালয়ের ভোরে। তাঁর কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী (Mahisasuramardini) শুনে উৎসবের সূচনা করে বাঙালি।
মহালয়ার পিতৃপক্ষের অবসান, পক্ষকাল ধরে চলা পিতৃপক্ষর শেষ দিন। পিতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণের দিন। এর পরের দিন থেকে দুর্গাপুজো তথা দেবীপক্ষ শুরু হচ্ছে। অথচ মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এমনই যে, বাঙালির কাছে যেন এই ভোর থেকেই পুজো শুরু। এই দিনটিতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে অনুষ্ঠানটি না শুনলে দুর্গাপুজো শুরু হয় না। এই অনুষ্ঠানই যেন নিজের সঙ্গে করে দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2024) আমেজ বয়ে আনে।
কীভাবে যে একটা অনুষ্ঠান একটা গোটা জাতির ইমোশন, নস্টালজিয়া হয়ে উঠল সেটা কেউই বলতে পারবে না। আর ঠিক এই কারণেই খোদ উত্তম কুমারকে হার মানতে হয়েছিল বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাছে। ১৯৭৬ সাল। সেই বছরই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের বদলে চণ্ডীপাঠ করেছিলেন উত্তম কুমার। সেই বছর মহিষাসুরমর্দিনী বদলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘দেবিং দুর্গতিহারিণীম’। কিন্তু যে নায়কের অভিনয় গোটা জাতি মুগ্ধ, সেই নায়কের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শুনে রেগে আগুন বাঙালি। বহু অভিযোগ এসে জমা হতে থাকে বেতার অফিসে। আকাশবাণীর সামনে জড়ো হয়েছিল বহু মানুষ। কেন জানেন? এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল বাঙালি। তাঁদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী এবং বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ ছাড়া পুজোটাই অসম্পূর্ণ! এই ঘটনা আকাশবাণীকে দিয়েছিল এক চরম শিক্ষা। ফলে গণ্ডগোল দেখে এই অনুষ্ঠানটিকে সেই বছর আবার চালাতে হয়েছিল। তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়ম করে মহালয়ার (Mohalaya) ভরে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার জন্য ঘুম ভেঙেছে বাঙালির।
অন্য খবর দেখুন