এটিকে মোহনবাগান–১ চেন্নাইয়ান এফ সি–০
(রয় কৃষ্ণ)
এটিকে মোহনবাগানের এই গোল্ডেন রান কি শেষ পর্যন্ত ট্রফি জয়ে শেষ হবে? টানা পনেরো ম্যাচে অপরাজিত যে টিম সেই টিম যদি শেষ পর্যন্ত আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। বৃহস্পতিবারের ম্যাচের শেষে মোহনবাগান উনিশ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে উঠে এল দুই নম্বরে। পয়েন্টের বিচারে ধরে ফেলল এক নম্বরে থাকা জামশেদপুর এফ সি-কে। তবে জামশেদপুর ৩৭ পয়েন্ট তুলেছে একটা ম্যাচ কম খেলে। শুক্রবার তারা খেলবে ওড়িশা এফ সি-র সঙ্গে। আর দু দলের শেষ ম্যাচ সোমবার। সেদিনই ঠিক হয়ে যাবে এবারের লিগ শিল্ড কে পাবে। এদিনের ম্যাচের শেষে মোহনবাগান সেমিফাইনালে চলে গেল। তবে জুয়ান ফেরান্দোর পাখির চোখ এখন লিগ শিল্ড পাওয়ায়। জামশেদপুর খুবই ভাল খেলছে। কিন্তু মোহনবাগান যা খেলছে তাতে তারা লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হতেই পারে।
একটা টিমের কোচ যতটা ভাল, তত ভাল তাদের কোচ। মোহনবাগান টিমটা কাগজে কলমে খুবই ভাল। জায়গায় জায়গায় ভাল প্লেয়ার। পরিবর্ত ফুটবলাররা যখন মাঠে নামে তখন বোঝা যায় না সে প্রথম একাদশের নয়। এত বড় একটা ম্যারাথন লিগে চোট-আঘাত, কার্ড সমস্যা থাকবেই। তাই কোচের কাজ হচ্ছে এই সব কিছুকে মাথায় রেখে সেরা একাদশ বেছে নেওয়া। এবং সেই কাজে কোচ জুয়ান দশ নয় পয়েন্ট পেতে পারেন। চোটের জন্য হুগো বুমোকে পাওয়া যাবে না জানাই ছিল। এবং জুয়ান মনে মনে তৈরি ছিলেন রয় কৃষ্ণকে শুরু থেকেই খেলাবেন বলে। বহু দিন পর কৃষ্ণ শুরু থেকেই খেললেন। পুরো সময়টা ম্যাচে থাকলেন এবং গোল করে টিমকে জেতালেন। কৃষ্ণ তো জেনুইন স্ট্রাইকার এবং ম্যাচ উইনার। চোট আঘাতে এ বছর টিমকে তেমন সার্ভিস দিতে পারেননি। কিন্তু ম্যাচের পর ম্যাচ খেলতে হয়নি তাঁকে। এখনও মোহনবাগানকে ফাইনাল ধরে চারটে ম্যাচ খেলতে হবে। জুয়ানের শান্তি তিনি ফিট কৃষ্ণকে পেয়ে যাবেন। এর সঙ্গে যদি হুগো বুমো ফিট হয়ে যান তবে তো সোনায় সোহাগা। মোহনবাগানকে তখন পায় কে?
চেন্নাইয়ান লিগের শুরুতে খুব খারাপ খেলছিল না। কিন্তু মাঝ পথে তারা খেই হারিয়ে ফেলে। এদিন তারা তাদের শেষ ম্যাচ খেলে ফেলল। কুড়ি ম্যাচে কুড়ি পয়েন্টে শেষ করল তারা। তাদের স্থান হল অষ্টম। এমন একটা টিমের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের জয় পাওয়া সমস্যা হওয়ার কথা নয়। হয়ওনি। ৪৭ মিনিটে জনি কাউকোর ফরোয়ার্ড পাস ধরে কৃষ্ণ একটু দৌড়ে ডান পায়ের গড়ানে শটে গোল করলেন। এর বাইরেও মোহনবাগান গোল করার অনেক সুযোগ পেয়েছিল। একেবারে শুরুতেই কৃষ্ণের শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। মোহনবাগানের দাপটের মাঝে চেন্নাই কিন্তু পাল্টা দাপট দেখাবার চেষ্টা করেছে। তাদের টিমে ছিলেন নেরুসিস ভালস্কিস। লিথুয়ানিয়ার এই স্ট্রাইকার দু বছর আগে আই এল এল-এর টপ স্কোরার হয়ে সোনার বুট পেয়েছিলেন। সেবার তাঁর গোল ছিল ১৫টা। এবার তিনি সেই ফর্মে নেই। কিন্তু পুরনো চাল তো ভাতে বাড়ে। তাই ভালস্কিসকে উপেক্ষা করার কোনও দুঃসাহস মোহনবাগানের ছিল না। তাঁর দায়িত্বে ছিলেন সেন্টার ব্যাক তিরি। এই ডিফেন্ডার মোহনবাগান টিমের স্তম্ভ। তাঁর পাশে সন্দেশ ঝিঙ্গন থাকায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করা হেখন খুবই মুশকিল। চেন্নাই এটা এদিন হাড়ে হাড়ে টের পেল। তাই বক্সের মধ্যে না ঢুকে দূর থেকে তারা শট নেওয়া শুরু করল। কিন্তু একটা শটও তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেনি। রহিম আলি কিংবা জোবি জাস্টিনদের প্রয়াস এভাবেই বার বার ব্যর্থ হয়েছে।
মোহনবাগানের মাঝ মাঠে জনি কাউকো প্রতিদিনই উন্নতি করছেন। ফর্মে বিচারে এখন তিনি বুমোর চেয়ে ভাল। তাঁর পাশে দীপক ট্যাংরি কিংবা লেনি রডরিগস যেই খেলুন না কেন বেশ নির্ভরযোগ্য। এদিন যেমন দীপক ট্যাংরি খেললেন। আর তাঁদের সঙ্গে আরেক বিদেশি কার্ল ম্যাকহিউ বেশ ভরসা করার মতো প্লেয়ার। নীরব যোদ্ধা এই কার্ল। ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকেন তিনি। এ রকম ডিফেন্সিভ মিডিও টিমের সম্পদ। শুধু এদিন একটু বেমানান ছিলেন লিস্টন কোলাসো। তাঁকে একটু নামিয়ে দিয়েছিলেন জুয়ান। লেফট হাফে খেললেন লিস্টন। এটা তাঁর জায়গা নয়। লেফট উইঙ্গারে খেলেন তিনি। বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে উইং ধরে তাঁর দৌড় বিপক্ষের চিন্তার কারণ হয়ে যায়। তবে নিজের জায়গা ছেড়ে লিস্টন চেষ্টা করেছিলেন একটু উঠে খেলার। সফল হননি।
অতএব মোহনবাগান সেমিফাইনালে চলে গেল হাসতে হাসতে। এখন তাদের সামনে দুটো লক্ষ্য। লিগ শিল্ড জেতা এবং আই এস এল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এখন যা ফুটবল খেলছে বাগান তাতে তারা যদি দুটো লক্ষ্যেই পৌছে যায় অবাক হওয়ার কিছু নেই।