সালটা ২০১৫। সিভিল ইঞ্জিনিয়র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাহবাজ আহমেদ ওর বাবাকে বলেছিল, কলকাতায় গিয়ে ওর স্বপ্নপূরণ
করবে। হরিয়ানার অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার সুযোগ না মেলায় ক্রিকেটে ভাল কিছু করার জেদটা তখন চেপে বসেছে
শাহবাজের। শাহবাজের বাবা আহমেদ জান সেই সময়ের কথা মনে করে বলেন, ছেলেকে ট্রেনের টিকিট কিনে
দিয়েছিলাম। তবে শর্ত দিয়েছিলাম, শুধু পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হবে। আসলে কোন বাবাই বা চায়, ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে খেলাধুলো করুক। কিন্তু ওর মধ্যে বড় কিছু করার জেদ ছিল।
কলকাতায় এসে পড়াশোনার চেয়ে অনেক বেশি বাইশ গজকে আপন করে পরিশ্রম বাড়িয়ে দেন শাহবাজ। অথচ
পড়াশোনাতেও দারুণ করতে লাগলেন। এক শিক্ষক তাঁকে বোঝালেন, খেলা ছেড়ে পড়াশোনা নিয়ে থাকতে। শাহবাজ জেদ
করেই বলেছিলেন, একদিন আমি খেলে সফল হয়ে ফিরলে আপনারাই আমায় সংবর্ধনা দেবেন।
আরও পড়ুন-Team India: বুমরার পর ভারতীয় দলে ফের চোটের ধাক্কা
বাংলার ভূমিপুত্র নয় বলে সমস্যায় পড়তে হয়। তপন মেমোরিয়ালের হয়ে একটা ম্যাচ খেলার পর তাঁকে খেলতে বাধা
দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য তপন মেমোরিয়ালে দারুন খেলে বাংলার হয়ে খেলেন। তবে শাহবাজের বাংলায়
খেলার পিছনে মনোজ তিওয়ারি আর কোচ অরুণ লালের বড় ভূমিকা আছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বারবার শাহবাজের
পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২০১৮-১৯ ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে একটা ম্যাচে শাহবাজের খেলা দেখে মনোজ দারুন উৎসাহিত হন।
মনোজ সেই সময় বাংলা দলকে এমন একজনকে চাইছিলেন, যিনি বল হাতে নির্ভরযোগ্য হবেন, আবার সাত-আটে নেমে
ম্যাচ বের করার ক্ষমতা রাখেন। শাহবাজের মধ্যে সেই ক্ষমতাটা ছিল। প্রতিভা দেখে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও পাশে
দাঁড়িয়েছিলেন শাহবাজের। ২০১৮ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিরুদ্ধে বিজয় হাজারে ট্রফিতে বাংলার হয়ে অভিষেক হয়
শাহবাজের। সেই বছরেই ডিসেম্বরে রঞ্জিতে অভিষেক হয়।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে বাংলার বড় ম্যাচ উইনার ওঠেন। ২০১৯-২০ ঘরোয়া ক্রিকেট মরসুমে দারুণ করেন শাহবাজ। ব্যাট হাতে ৫০৯ রান এবং ৩৫ উইকেট নেন। ২০২০’র ফেব্রুয়ারি, পাতিয়ালায় পঞ্জাবের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে নির্বাচকদের নজরে পড়েন। তবে আইপিএলে আরসিবি’র জার্সিতে একের পর এক অনবদ্য পারাফরম্যান্স করে জাতীয় দলের লড়াইয়ে ঢুকে পড়েন। চলতি বছর আইপিএলে শাহবাজ করেন ২১৯ রান, নেন ৪টি উইকেট। রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে জুটিতে ২৬ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলা শাহবাজকে নিয়ে ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। এ বছর রঞ্জিতে গ্রুপ পর্যায়ে শাহবাজ করেন ২২১ রান, নেন ৮টি উইকেট। তারপর নক আউটে একবারে অপ্রতিরোধ্য পারফরম্যান্স।
ক’মাস আগে জিম্বাবোয়ে সফরে ওয়াশিংটন সুন্দরের পরিবর্তে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন শাহবাজ। তবে প্রথম
একাদশে শিকে ছেড়েনি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে স্কোয়াডে জায়গা পান। লখনৌতে সুযোগ না
পেলেও রাঁচিতে দেশের ২৪৭তম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে-তে অভিষেক হল শাহবাজের।
এবার শাহবাজের লড়াই নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার। রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেলদের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে
শাহবাজকে। আগামী বছর দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপ খেলাকেই পাখির চোখ করছেন তিনি। হরিয়ানা থেকে
কলকাতাগামী ট্রেনে উঠে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখা ছেলেটার স্বপ্নপূরণ হল। এবার নতুন স্বপ্ন দেখার। শাহবাজের
স্বপ্নপূরণের গল্প হারা মানাবে রূপকথাকেও।