skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollFourth Pillar | বিজেপি ভারতকে, আমার স্বদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | বিজেপি ভারতকে, আমার স্বদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

ঢের হয়েছে, এবারে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে, এই মগজধোলাই যন্ত্রটাকে ভাঙতে হবে

Follow Us :

আমাদের মগজধোলাই যন্ত্র এখন পুরোদস্তুর কাজ করছে। এধারে চ্যাট জিপিটি তো ওধারে ডিপসিক। প্রযুক্তির বৃদ্ধি এক ধরনের সামাজিক সমস্যা তো তৈরি করেই, আসল কথা তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর, আরও বেশি চিন্তার। আমাদের বোধ,বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা সবই কন্ট্রোল করার, নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে, করা হচ্ছেও। আজ চতুর্থ স্তম্ভে আসুন সে নিয়েই ক’টা কথা বলা যাক।

নিয়ন্ত্রণ কি আজকের ব্যাপার? সে কি আগে ছিল না? ছিল বইকী। রাজা আর পুরোহিত মিলে দেশের বাকি মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত। ব্রাহ্মণরা প্রকাশ্যেই বলত, রাজা হল ভগবানের দূত, ঈশ্বরের প্রতিনিধি, তার কথা অমান্য মানে ঈশ্বরের বিরোধিতা করা। মানুষ রাজার বিরোধিতা করার আগে ১০০০ বার ভাবতো, কারণ সে তো রাজার বিরোধিতা করছে না, সে ভগবানের বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে রাজা ব্রাহ্মণকে সর্বোচ্চ স্থানে বসাতেন, রাজা ব্রাহ্মণকে প্রণাম করতেন, রাজা ব্রাহ্মণের কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। রাজা এবং পুরোহিতরা মিলে দেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছিলেন।

লক্ষ্মণ মৃদু প্রতিবাদ করেছিলেন, বলেছিলেন, বউদি, মানে সীতা তো একবার সতীত্বের প্রমাণ দিয়েছে, আবার কেন? রাম বলছেন, রাজসভায় কুলপুরোহিত, অন্য পুরোহিতরা তো সেই প্রথম অগ্নিপরীক্ষার সময়ে ছিলেন না, তাই আবার।

তার মানে সেই রামরাজত্বেও ওই রাজা ও পুরোহিততন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতো দেশের মানুষকে। তারপর গণতন্ত্র এল, নির্বাচন এল, বাই দ্য পিপল, অফ দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল-এ আরও সরাসরি নিয়ন্ত্রণ। এবং এই ২০২৫-তে দাঁড়িয়ে খেয়াল করে দেখুন, আপনার জীবনের কোনও কিছুর নিয়ন্ত্রণই আপনার হাতে নেই, একটা সিদ্ধান্তও আপনার নিজের সিদ্ধান্ত নয়, কোনও না কোনওভাবে তা নিয়ন্ত্রিত।

আপনি কোথায় থাকবেন? কী খাবেন? কী পরবেন? কোথায় বেড়াতে যাবেন? কত টাকা জমাবেন? কীভাবে জমাবেন? ছেলেমেয়েকে কোন স্কুলে ভর্তি করবেন, তারা কী পড়বে? সমস্ত কিছু এক বিরাট মগজধোলাই যন্ত্রে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা, দল, নেতা, সবকিছু, কোনও সাধারণ বিশ্বাসযোগ্য কারণ ছাড়াই, সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনা ছাড়াই আপনার মগজে কারফিউ লাগানো হয়েছে সেই কবেই, আপনি সেই অনুযায়ী চলছেন। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ, আপনার প্রতিটি ছোট বড় চাহিদা লিপিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, সেই অনুযায়ী আপনার মানসিক গঠন এখন রাষ্ট্রের হাতে। সেখানে রিপাবলিক টিভি, আনন্দ, ২৪ ঘন্টা বা ইন্টারনেটের অজস্র রিল আর সাইট কি আর অন্য হলিউড প্রোপাগান্ডা পাঁচ দশটা ছবি এই বিরাট মগজধোলাই যন্ত্রের খুব সামান্য অংশমাত্র।

একটা ছোট্ট ক্লাস থ্রি কি ফোরের বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় বেড়াতে যাবে? মানে কোথায় বেড়াতে যেতে চাও? সটান উত্তর, সুইৎজারল্যান্ড। তার বাড়ির ডিসট্যান্ট রিলেটিভ কখনও বিদেশের মাটিতে পা দেয়নি, অথচ ছেলেটা সুইৎজারল্যান্ড জেতে চায়, এটা এক মুহূর্ত না ভেবেই বলল, কতটা শিওর, একবার ভাবুন। পরের প্রশ্ন ছিল স্বাভাবিক, কেন? এত দেশ থাকতে সুইৎজারল্যান্ড কেন? হানি সিং ইয়ো ইয়োর ফেভারিট হলিডে ডেস্টিনেশন। কে এক হানি সিং সেই বালকের মাথায় চেপে বসে আছে। চাপাল কে? এরপর আপনার খানিকক্ষণ তাকিয়ে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

তস্য গরিব পরিবার, রান্নাঘরে এক টিন কমপ্ল্যান আছে, প্রতিদিন বড় একগ্লাস জলে এক চামচ, স্বাদহীন প্রায় বর্ণহীন সেই এক চামচ কমপ্ল্যান গোলা জলটি তাকে বিকেলে খেতেই হয়, কারণ তারপর থেকে প্রতি আধঘন্টায় অন্তত একবার করে বিজ্ঞাপন চলে, কমপ্ল্যান খেলে শক্তি বাড়ে। তার বাবার কাপড় সপ্তাহে একবার কাচা হয়, মায়ের তো জলকাচা, ছেলের জন্য সার্ফ এক্সেল, গন্দেগি ঢুন্ডতে রহে যাওগে। তারপর টু মিনিটস ম্যাগি। একটু বড়দের স্মার্টফোন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, আরও কত কী। নিউজপেপার, টিভি, স্যোশাল মিডিয়া একটা শিশুকে যুবক করে তুলছে, হ্যাঁ শিশু থেকে সটান যুবক। তার কৈশোর নেই, চুরি হয়ে গেছে কবেই। কোনও ধোঁয়াশা নেই। ছোট্টবেলায় শুনেছিল, মাম্মি আর আমি গডকে বললাম পিঙ্কিকে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও, পিঙ্কি চলে এল। এখন? পিঙ্কি যুবতী, শরীরের সব রহস্য তার জানা, যৌনতার সব পাঠ তার পড়া হয়ে গেছে। সে কখনও কিশোরী হলই না। কোথাও কোনও গ্রে এরিয়া নেই, কোনও সংশয় নেই। দিদুন তার বয়ফ্রেন্ডকে চুমু খাওয়ার পরে কেঁদেছিল, এই বয়সে একটা বাচ্চা হলে সে লজ্জা কোথায় লুকোবে? হ্যাঁ দিদুনের যৌনতার এই পাঠের কথা শুনে পিঙ্কি হাসতে হাসতে মেঝেতে শুয়ে পড়েছে। তার তো কোনও সংশয় নেই।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | টাকা নিয়ে নয়ছয়? জুনিয়র ডাক্তারদের দিকে সন্দেহের তির

মাত্র ১৫-২০ বছর আগে মধ্যমগ্রাম বারাসত থেকে একটা ছেলে কলেজে এলে এক মিনিটে ধরা পড়ে যেত, সে মধ্যমগ্রাম থেকে এসেছে। প্রতি ৫০-৭৫ কিলোমিটারে, জামাকাপড়, ডায়ালেক্ট, হাবভাব পাল্টে যেত। এখন? সব্বার চুলের কাট এক, সব্বার জামার কাট এক, সব্বাই একই বাংলার ডায়ালেক্ট বলার অন্তত চেষ্টা করছে, তারা তাদের নিজেদের ডায়ালেক্টে কথা বলতে লজ্জা পায়। সবটা এক ছাঁচের। আগে বাজারে গেলে টোম্যাটো বড় হত, রং আলাদা আলাদা হত, এখন সব এক সাইজের এক রংয়ের। মানুষ আর টোম্যাটোতে আজ আর কোনও ফারাক নেই। সব সমান। যে কোনও আর্থিক অবস্থানের হোক না কেন, বাবা-মা বুঝে ফেলেছেন, ছেলেমেয়েকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াতে হবে, জুরাসিক পার্ক দেখাতে হবে, হ্যারি পটার কিনে দিতে হবে, জন্মদিন নয় বার্থডে সেলিব্রেট করতে হবে, সেখানে ছোট মোমবাতি থাকতে হবে, আর হ্যাপি বার্থডে টু ইউ বলে গান গাইতেই হবে। মগজধোলাই যন্ত্র।

আপনি মাত্র ১৫-২০ বছর আগের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে কথা ভাবুন, বাজারে যাওয়ার আগে ফর্দ তৈরি হত, মুদির দোকানে নিয়ে গিয়ে সেই ফর্দ দেওয়া হত, মুদি একটা একটা করে জিনিস ভরে, ফর্দের পাশে দাম লিখে ব্যাগের উপর দিয়ে দিত। কিছু না থাকলে বলত ওবেলা কি কাল সকালে পেয়ে যাবেন। এখন ফর্দ তৈরি হয় না, আপনি সস্ত্রীক চলে যাচ্ছেন এয়ারকন্ডিশন্ড শপিং মলে। ঢুকেই দেখলেন একটা টুথপেস্ট রাখার সুন্দর জায়গা, কিনে ফেললেন, ফ্রোজেন আইটেম, চিকেন, ভেজ নানারকম কিনে ফেললেন, ফ্রুট জুস কিনলেন, মশলা কিনতে গিয়ে বেশ ক’টা রেডিমিক্স মশলা কিনলেন। বাড়ি ফিরে দেখলেন, জরুরি যা যা কেনার জন্য বের হওয়া, তার অর্ধেকটাই কেনা হয়নি। পরে আর একবার গেলেন, আবার দুনিয়ার থরে থরে সাজানো প্যাকেট শিশি জমা হল আপনার বাড়িতে যেগুলো মাসছয়েক পরে ফেলে দিতে হবে। মগজধোলাই যন্ত্র।

আগে প্রত্যেক মধ্যবিত্তের বাড়িতে গেলে একটা র‍্যাকে কিছু বই নিশ্চয়ই থাকত। জন্মদিনে পাওয়া, বাবা-মার বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া, নিকোলাই অস্ত্রিওভিস্কির ইস্পাত, সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল, রবিঠাকুরের শিশু ভোলানাথ কিংবা সঞ্চয়িতা। থাকবেই। জন্মদিন বিয়েতে বই উপহার? কবেই উঠে গেছে। এখন ডিনার সেট, ম্যাচিং পর্দা, ওটিজি, স্যান্ডুইচ মেকার। কী করে সব্বাই বদলে গেল? যাঁদের বই পড়াটা আবশ্যক, তাঁরা বই পড়েন বইকী। সাধারণ মধ্যবিত্ত? না। বা যদি পড়েনও বিয়ে জন্মদিন উপহারে বই দেওয়ার প্রথা উঠে গেছে। মগজধোলাই যন্ত্র।

সেদিন ছোটকাকা নিজে নিজেই বলছিল, এমনকী আমাদের ছোটবেলাও তো সেই কবেকার প্রাচীনকাল নয়, আমাদের ছোটবেলাতেও আমরা কখনও বুঝিনি যে মুসলমান মানে ওরা, ওরা যারা দাঙ্গা করে, ওরা যারা নোংরা, ওরা যারা উগ্রপন্থী, ওরা যারা দেশদ্রোহী। না বুঝিনি। ইদে সেমাই খেয়েছি, আমাদের বিজয়াতে আমাদের মুসলমান বন্ধুরা অনায়াসে বাড়িতে আসত, প্রণাম করত। কী এক জাদুবলে তারা আজ ওরা হয়ে গেছে। আর ক’ বছর পরে ওরাই নাকি জনসংখ্যায় হিন্দুদের ছাপিয়ে যাবে, ওরা নাকি দখল করে নেবে সংসদ, বিধানসভা, ওরাই নাকি পুলিশ বাহিনীতে মেজরিটি হয়ে যাবে। এসব চেষ্টা করলেও হবে না, সংখ্যাতত্ত্ব বলছে ঠিক এই মুহূর্তে মুসলমান জনসংখ্যার গ্রোথ রেট হিন্দুদের ছেয়ে কম। কিন্তু একথা বিশ্বাস করার মানুষ কই? ক্রমশ বাড়ছে ওরা আমরা। আর তা হচ্ছে এক অদ্ভুত প্রচারের ফল। চোখের সামনে সুভদ্র বাঙালি মধ্যবিত্তের চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে নামের শেষে খান কিংবা আগে মহম্মদ শুনলে। ভাড়া চাইতে আসলে হাঁকিয়ে দিচ্ছে সোজা। এই বিরাট মানসিক পরিবর্তন বছর ২৫ কি বড়জোর ৩০। কী করে হল? সেই মগজধোলাই যন্ত্র।

এবং সরকার। এর আগে নানান সরকার এসেছে। সরকারের অ্যাজ সাচ কোনও দর্শন ছিল না, কংগ্রেসের উদারনৈতিক বুর্জোয়া গণতন্ত্রের থেকে কতটাই বা আলাদা ছিল লোহিয়াইটস বা জয়প্রকাশের চেলাদের তৈরি সরকারে? তারা বাজারের গ্রোথ চেয়েছে, শিক্ষার বিকাশ চেয়েছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করেছে। এবং আর ১০টা বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেমন হয়, এক পিরামিড স্ট্রাকচারের মাথায় থাকা মুষ্টিমেয় মানুষ আরও বড়লোক হয়েছে, চুঁইয়ে পড়া সুযোগ সুবিধে নিয়ে এক বিরাট মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা বিদেশের শিল্পপতিদের কাছে লোভনীয় বাজার হয়ে উঠেছে, গরিব আরও গরিব হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক উন্নতির ছিটেফোঁটা তাদের গায়েও গিয়ে পড়েছে। কিন্তু ১৯৫২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতবর্ষের সরকার, সরকারে থাকা দলের এক আলাদা দর্শন, এক রেজিমেন্টেড ক্যাডার বাহিনী, মেরুকরণ হয়ে যাওয়া এক বিশাল নির্বাচক মণ্ডলী এসব ছিল না। একই দলে দিগ্বিজয় সিংয়ের মতো দক্ষিণপন্থী নেতার সঙ্গে মণিশঙ্কর আইয়ারের মতো বাম মনোভাবাপন্ন নেতা বা শশী থারুরের মতো ফ্ল্যামবয়েন্ট লিবারালরা আছেন। কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে যে মনোলিথিক, একরৈখিক সংগঠন নিয়ে আরএসএস-বিজেপি ক্ষমতায় তারা এই মগজধোলাইয়ের কাজটা আরও নিপুণভাবে করছেন। একটা পারসেপশন তৈরি হচ্ছে মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।

সেই প্রথমবারে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে ইউ হি ১৫ লাখ আ যায়েঙ্গের থেকে ডিমনিটাইজেশন, জিএসটি, কমিউনাল টেনশন, মব লিঞ্চিং, ক্রমাগত নারীদের উপর বাড়তে থাকা অত্যাচার, মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রল ডিজেলের অস্বাভাবিক দাম, বেরোজগারি, মাইগ্র্যান্ট লেবার, লকডাউন, জিডিপির তলানিতে আসা, বেসরকারিকরণ, পিএসইউ বেচে দেওয়া চলছে তো চলছেই। কিন্তু স্লোগান একটাই, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। কী করে হচ্ছে? মানুষ তার গ্রাউন্ড রিয়েলিটি বুঝছে না? মানুষ তার প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছে না? মানুষ দেখতে পারছে না যে চাকরি নেই? মাইনে ছাঁটাই হচ্ছে? শিল্পে মন্দা চলছে? মানুষ বুঝতে পারছে না কেন?

আসলে মানুষের হাতে কিছু নতুন পুতুল ধরানো হয়েছে। অন্তত দুটো নতুন পুতুল নিয়ে মানুষ ব্যস্ত। প্রথমটা হল মুসলমান, হিন্দু খতরে মে হ্যায়। ৪৭-এ দেশ স্বাধীন হয়েছে অথচ ২০১০ থেকে স্লোগান উঠছে, হিন্দু খতরে মে হ্যায়। এক বিরাট সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করছেন, হিন্দু খতরে মে হ্যায়। তাঁরা অন্য কিছু নিয়ে আপাতত চিন্তা করতে নারাজ। দ্বিতীয় পুতুল হল উগ্র জাতীয়তাবাদ। আমার দেশ তো আমার দেশই ছিল, কিন্তু সরকারের বিরোধিতা করলেই তা দেশদ্রোহ হয়ে যাবে এমন তত্ত্ব আগে ছিল না। কথায় কথায় দেশদ্রোহী আর ইউএপিএ ছিল না। এই উগ্র জাতীয়তাবাদের পশরা ভালোই বিক্রি হয়েছে, বহু সংখ্যক মানুষ হঠাৎ করেই প্রচুর দেশদ্রোহী খুঁজে বের করছেন, যারা না থাকলেই, যাদেরকে জেলে পুরে ফাঁসিতে ঝোলালেই ভারতবর্ষ সুজলাং সুফলাং হয়ে উঠবে। আর কিছু না পেলে ক’টা আদিবাসীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দাও, মাওবাদী তো ওরাই, ওরাই দেশদ্রোহী।

মানুষের মাথায় এসব ঢোকাল কারা? কীভাবে ঢুকল? সেই মগজধোলাই যন্ত্র। নিউজ চ্যানেল, সিনেমা, টিভির এন্টারটেনমেন্ট প্রোগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে প্রতিদিন নিরবচ্ছিন্ন এই মগজধোলাই চলছে। যে মগজধোলাই যন্ত্র মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ করছে, করতে শেখাচ্ছে, সরকারের বিরোধিতাকে দেশদ্রোহিতা বলে চিহ্নিত করছে। এই মগজধোলাই যন্ত্রই বলছে “বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না”, “ভর পেট নাও খাই, রাজ কর দেওয়া চাই”, “যায় যদি যাক প্রাণ, হীরকের রাজা ভগবান”, “যে কয় পেটে খেলে পিঠে সয়, তার কথা ঠিক নয়”, “অনাহারে নাহি ক্ষেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ”।

ঢের হয়েছে, এবারে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে, এই মগজধোলাই যন্ত্রটাকে ভাঙতে হবে, আর সেই সুউচ্চ রাজার সিংহাসন ধরে টান মেরে বলতে হবে সবাই মিলে, “দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান।” আর না হলে সভ্যতার বিলুপ্তি দেখার জন্য বসে থাকুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular