Thursday, October 30, 2025
HomeScrollFourth Pillar | ভোটে জমজমাট বিহার, ইন্ডিয়া জোটের ইশতেহার
Fourth Pillar

Fourth Pillar | ভোটে জমজমাট বিহার, ইন্ডিয়া জোটের ইশতেহার

মহিলাদের জন্য কী আছে ইন্ডিয়া জোটের ইশতেহারে?

‘এক বিহারী সব পে ভারী’- এই কথাটা বোঝা গিয়েছিল যখন লালকৃষ্ণ আদবানির রামরথের চাকা আটকে গিয়েছিল বিহা রের মাটিতে। আটকেছিলেন বিহারী লালুপ্রসাদ যাদব। দিন পাল্টেছে। গঙ্গা আর শোন দিয়ে কত না জল বয়ে গিয়েছে সমুদ্রের দিকে তারপর। বিহারে ক্ষমতা দখল করেছে এনডিএ, যার প্রধান নীতীশ কুমার। শিবির বদলে বদলে আড়াই দশক ধরে মুখ্যমন্ত্রী রয়ে গিয়েছেন বিহারের এই পাল্টুরাম। কিন্তু রাজনীতির চাকা তো ঘুরতেই থাকে। আর তাই, এই মুহূর্তে বিহার নির্বাচনে নীতীশকে সবচেয়ে যারা বেশি বেগ দিচ্ছেন তাঁদের একজন যে লালুপুত্র তেজস্বী যাদব, এতে কোনও ভুল নেই।

তেজস্বী যে রাজনীতিটা বোঝেন তাতেও কিন্তু সন্দেহ নেই। দরকার পড়লে চুপ করে থাকেন, দরকার পড়লে রণহুঙ্কারে মাতিয়ে দেন ময়দান। এই দেখুন না, গান্ধী পরিবারের তকমা আঁটা গ্ল্যামারাস রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি বিহারের ভোটার অধিকার যাত্রায় তেজস্বী কিন্তু আমজনতা থেকে মিডিয়া, নজর কেড়েছেন সবারই। বিশেষ করে নজর রেখেছিল রাজনৈতিক মহল। প্রশ্নও উঠেছিল রাহুলের উপস্থিতিতে ভিড় বাড়ছে বলে কি টলমল করছে ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ? জোট নয়, ইগোই কি বড় কথা হয়ে উঠছে তেজস্বীর কাছে? কিন্তু ওই যে বললাম, তেজস্বী যাদব রাজনীতি বোঝেন। জল্পনা একটু বাড়তে না বাড়তেই জল ঢেলে দিয়েছেন তাতে। রাহুলের হাতে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন মহাগঠবন্ধন ছিল, আছে, থাকবে।

এদিকে দরজায় কড়া নাড়ছে বিহার ভোট। সেদিকে তাকিয়েই বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের জন্য মহাগঠবন্ধনের ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। এর আগে গত শনিবার দলের ইশতেহার প্রকাশ করেছিলেন তেজস্বী। তার নাম ‘পরিবর্তনপত্র’। সেখানে তেজস্বী বলেন, তাঁর দল, আরজেডি বিহারের উন্নয়নের জন্য ২৪টি অঙ্গীকার করেছে। তিনি আরও বলেন, বিহারের উন্নয়নই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা যেটুকু পারব তা প্রতিশ্রুতি হিসেবে জনগণের সামনে রেখেছি। জনগণই আসল মালিক। আমরা সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী যে বিহারে ইন্ডিয়া জোটের সরকার গঠিত হতে চলেছে।

কী বলছে ইন্ডিয়া জোটের ইশতেহার? বলছে, প্রতিটি পরিবারে একটি করে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করা হবে মদের নিষেধাজ্ঞা। এই নিয়ে কিন্তু একটু গণ্ডগোল লেগেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাত্রই একথা জানেন যে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের ক্ষমতা দখলের পিছনে একটা বড় ফ্যাক্টর কিন্তু বিহারের মহিলা ভোট। কিন্তু কেন মহিলা ভোট নীতীশের সপক্ষে গেল? তার একটা বড় কারণ মদে নিষেধাজ্ঞা। বিহারের মহিলাদের বহুদিনের দাবি, কিন্তু সফল হয়েছিল এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। এখন এসআইআর-এ বিহারের মহিলা ভোটারদের একটা বড় সংখ্যাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, বিহারে আবার সেই পুরুষতন্ত্র দেখা দিচ্ছে, যারা ভোটের মার্জিনের হিসেব নিকেষ করে, ভোট নিয়ন্ত্রণ করে। এরকম পরিস্থিতিতে তেজস্বী বলছেন, মদে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করবেন। কেন?

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | SIR কি গণতন্ত্র ও নারীসুরক্ষা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র? কী বলছে তথ্য?

তেজস্বীর বক্তব্য, মদে নিষেধাজ্ঞা আনার দরুণ পুরো বিষয়টাই চলে গিয়েছে কালো বাজারের আওতায়। মদ বিক্রি হচ্ছে ঠিকই, তার রাজস্ব সরকারের ঘরে ঢুকছে না। যে কারণেই এই পুনর্বিবেচনা। কিন্তু এ কি উপরের কথা? ভিতরে ভিতরে কি তেজস্বী টের পেয়ে গিয়েছেন, গত তিনবারের মতো এবারে মহিলা ভোট আর বিহার নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করবে না? যাক গে এসব কথা। আসল ঘটনা হল, তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করার পর মঙ্গলবার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে ইন্ডিয়া জোট তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল। এই অনুষ্ঠানে তেজস্বী যাদব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী, বিকাশশীল ইনসাল পার্টির প্রধান মুকেশ সাহানি, কংগ্রেস নেতা পবন খেরা এবং সিপিআইএমএল নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। ইশতেহারের মূল কথা, ‘বিহার কা তেজস্বী প্রাণ’। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্লোগান অনেকটাই বিজেপির ‘মোদি কি গ্যারান্টি’র মতোই। আরও আছে। মহাগঠবন্ধন ডাক দিয়েছে বিকশিত বিহারের। যেখানে মোদি সরকার বিকশিত ভারতের ডাক দিয়েছে আগেই।

কিন্তু এসবই আব্বুলিশ। মহাগঠবন্ধন এবং তেজস্বীর আসল তাস কিন্তু ওই সরকারি চাকরি। আর প্যাকেজ খুব ইন্টারেস্টিং। সরকার গঠনের কুড়ি দিনের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করার আইন পাশ করা হবে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার ভিতরে রয়েছে, ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায় ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে বীমা পাবেন সকলেই। সরকারি কর্মীদের জন্য ফিরিয়ে আনা হবে পুরানো পেনশন স্কিম। এছাড়া পিছড়ে বর্গ ও তফশিলি জাতির সংরক্ষণও বাড়ানো হবে।

কিন্তু মদ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়ে যারা সবথেকে বেশি উদ্বিগ্ন হবেন সেই মহিলাদের জন্য কী আছে ইন্ডিয়া জোটের ইশতেহারে? আছে ‘মাই বহিন মান যোজনা’। রাজ্যের মহিলারা প্রত্যেক মাসে পাবেন আড়াই হাজার টাকা। মানে বছরে তিরিশ হাজার টাকা। এখন এই প্রতিশ্রুতি কি নাকের বদলে নরুণ হল? মহিলারা কি মানবেন? ভোট বাক্সই তার জবাব দেবে।

আসল কথা হল প্রতিশ্রুতির ঝড়। যে তালিকা পেশ করে মহাগঠবন্ধন আশা করছে বড় পরিবর্তনের হাওয়া তুলে বিহারের জনমতকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেবে। কিন্তু ভোট তো শুধু প্রতিশ্রুতির উপর ভর করে চলে না, আরও অনেক অঙ্ক আছে। সেসব অঙ্ক ইন্ডিয়া জোট কীভাবে কষবে, সেটাই এখন দেখার।

Read More

Latest News