Tuesday, June 3, 2025
HomeScrollFourth Pillar | পি সি সরকার এবং নারী স্বাধীনতা
Fourth Pillar

Fourth Pillar | পি সি সরকার এবং নারী স্বাধীনতা

রবি ঠাকুরের কথা হৃদয়ে থাকলে তো আর যাই হোক বিজেপি হওয়া যায় না

Follow Us :

সেই নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গোহারান হেরে যাওয়ার পরে জাদুকর পি সি সরকারকে খুব একটা দেখা যায়নি, আসলে শিবির ভুল করার খেসারত দিচ্ছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন বিজেপির হাওয়া পালে লাগিয়ে হুউউউস করে দিল্লি পোঁছে যাবেন, ভোট গণনা শুরু হতেই বুঝেছিলেন অ্যাব্রা কা ড্যাব্রা। তারপরে আরও অনেকের মতোই বুঝেছিলেন, পলিটিক্স অতি বিষম বস্তু, কিন্তু ততদিনে ওনার শিবির চয়ন হয়ে গেছে, তারপর বহুদিন মিডিয়াতে উনি নেই। ওদিকে জাদু বা ম্যাজিক ক্রমশ অনেক আধুনিক হয়েছে মাথায় মুকুট বা মোচড় দেওয়া গোঁফ ছাড়াই এমনকী ভারতেও বেশ কিছু ম্যাজিসিয়ান করেকম্মে খাচ্ছেন। একেবারে জলসাঘরের জমিদার বলব না কিন্তু ওনাকে এই ময়দানে খানিক সেরকমই দেখাচ্ছিল, ক্রমশ জৌলুস হারাতে হারাতে এই প্রজন্মের কাছে উনি প্রায় নন এনটিটি হয়ে উঠেছেন। তো সেই জাদুকর পি সি সরকারের তিন কন্যা, সেই তিন কন্যার বিয়ে নিয়ে আবার তিনি ভেসে উঠলেন এক অব্লিভিয়ন থেকে হঠাৎই চর্চায়। এইভাবে চর্চায় ফিরে আসাটা নতুন কিছু নয়, বরং এইভাবে ফিরে আসার একটা চেষ্টা তো ক্রমাগত সেলিব্রিটি মহলে চলতেই থাকে। তিনি এক বিজ্ঞাপন দিয়েছেন খবরের কাগজে, তাঁর তিন কন্যার জন্য এক স্বয়ম্বর সভার ডাক দিয়ে। তাতে জাতি ধর্ম বা বর্ণের কোনও শর্ত নেই, কিন্তু পাত্রকে ৩৮–৪৫ এর উপযুক্ত পাত্র হতে হবে, উপযুক্ত হওয়ার ক্রাইটেরিয়া অবশ্য দেওয়া নেই, সুদর্শন এবং দীর্ঘাঙ্গ হতে হবে, অর্থাৎ হতকুৎসিত বা বামন হলে চলবে না আর সুপ্রতিষ্ঠিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠা নিয়ে হাজারো বিতর্কে নাই বা গেলাম, ধরে নিচ্ছি গাড়ি বাড়ি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাকে সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠা হিসেবে ধরে নেন সেটাই আমাদের জাদুকর এখানে প্রতিষ্ঠা হিসেবে ধরেছেন। এমন নয় যে এই বিজ্ঞাপন জাদুকর পি সি সরকার বা তাঁর স্ত্রীর নাম না জানিয়েই করা হয়েছে, মিডিয়া গন্ধ শুঁকে সেই সত্য উদঘাটন করেছে। না, এমন নয়, বরং বিজ্ঞাপনের শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে জাদুকর পি সি সরকার এবং জয়শ্রী সরকারের তিন কন্যার পাত্রের জন্যই এই বিজ্ঞাপন। মানে চর্চায় আসার জন্যই তো এই বিজ্ঞাপন, কাজেই নাম লুকিয়ে সেই কাজ হবেই বা কী করে? তাই ঘটা করে নাম দিয়েই বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে।

এক ধরনের স্বয়ম্বর সভা হবে, আমরা অপেক্ষা করে থাকব, সেই কোট আনকোট সুপুরুষ, দীর্ঘাঙ্গ, উপযুক্ত এবং প্রতিষ্ঠিত পাত্রেরা দল বেঁধে হাজির হবেন, চাই কি বারুইপুরের বাগানবাড়িতে সেই স্বয়ম্বর সভার আয়োজনও হতেই পারে, ওনার পছন্দ বরাবরই খুব স্ট্রং, তাই কোনও এক টিভি চ্যানেল সেই স্বয়ম্বর সভার লাইভ টেলিকাস্টের বরাত পেলেও পেতেই পারে। শীতের বাজারে আমোদগেঁড়ে বাঙালির নতুন ইভেন্ট স্বয়ম্বর সভা, মন্দ কী? এ পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল কিন্তু গোলযোগটা এরপরে। পিতৃভক্ত মেয়েরা জানিয়েছেন বেশ তো, ক্ষতি কী? ধরেই নিতে হবে সেই কবেই ১৮ উত্তীর্ণ তিন কন্যার একজন পুরুষও চোখে পড়েনি, মনে ধরেনি, তিন কন্যার একজনকেও। কোনও যুবক কখনও একগোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বলেনি, চললাম, তাই তাকে থামানোর প্রশ্নই ওঠে না। দুই অভিনেত্রী এবং এক জাদুকর কন্যা যাবতীয় স্বাভাবিক আবেগ দমন করেই তাঁদের পিতাশ্রীর এই সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়েছিলেন, কষ্টকল্পনা হলেও ধরেই নিলাম এসব সত্য, এবং আরও কষ্ট হলেও ধরেই নিলাম যে আপাতত তাঁদের পিতার এই সিদ্ধান্তে তাঁরা যথেষ্ট পুলকিত। এসব নিয়েও আমাদের কারও আপত্তি থাকার কারণ নেই আর থাকলেইও বা শুনছে কে? কিন্তু আপত্তি অন্য জায়গাতে, জাদুকর জানিয়েছেন, “সময়ে সময়ে চল বা ট্রেন্ড বদলায়, কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি আলাদা। সেখানে বাবা-মা কন্যার জন্য পাত্র খোঁজেন। আমাদের যা সংস্কৃতি তা নিয়ে আমি ভীষণভাবেই গর্বিত, অন্যরা হয়তো লজ্জিত কিন্তু তাতে আমার বয়েই গেছে।”

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | তৃণমূলে একটা পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোস্ট

গন্ডগোল অনেকগুলো। প্রথমত সংস্কৃতি কথাটার ব্যপকতা, দ্বিতীয়ত সেই সংস্কৃতি কোথাকার? তৃতীয়ত কোন সংস্কৃতি নিয়ে উনি গর্বিত আর কোনটা নিয়ে অন্যরা লজ্জিত? আর শেষটা নিয়ে তো কথাই হবে না। ওনার প্রাপ্তবয়স্কা কন্যাদের উনি ওনার সম্পত্তি, ওনার অধীন বলেই মনে করেন, তাঁদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করার সম্পূর্ণ দায় ওনার আছে বলেই উনি মনে করেন এবং তা নিয়ে কেউ কিছু বললে ওনার বয়েই গেছে, সেটাও জানিয়ে দেন। আসুন সবটা নিয়েই একটু আলোচনা করা যাক। আমি শুরু করতেই পারি রবি ঠাকুরকে দিয়ে,

নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার

কেন নাহি দিবে অধিকার হে বিধাতা?

নত করি মাথা পথপ্রান্তে কেন রব জাগি

ক্লান্তধৈর্য প্রত্যাশার পূরণের লাগি দৈবাগত দিনে।

শুধু শূন্যে চেয়ে রব?   কেন নিজে নাহি লব চিনে সার্থকের পথ।

কেন না ছুটাব তেজে সন্ধানের রথ দুর্ধর্ষ অশ্বেরে বাঁধি দৃঢ় বল্‌গাপাশে।

দুর্জয় আশ্বাসে

দুর্গমের দুর্গ হতে সাধনার ধন কেন নাহি করি আহরণ প্রাণ করি পণ।

যাব না বাসরকক্ষে বধূবেশে বাজায়ে কিঙ্কিণী —

আমারে প্রেমের বীর্যে করো অশঙ্কিনী।

বীরহস্তে বরমাল্য লব একদিন

সে লগ্ন কি একান্তে বিলীন ক্ষীণদীপ্তি গোধূলিতে।

কভু তারে দিব না ভুলিতে মোর দৃপ্ত কঠিনতা।

বিনম্র দীনতা সম্মানের যোগ্য নহে তার,

ফেলে দেব আচ্ছাদন দুর্বল লজ্জার।

দেখা হবে ক্ষুব্ধ সিন্ধুতীরে;

তরঙ্গগর্জনোচ্ছ্বাস মিলনের বিজয়ধ্বনিরে দিগন্তের বক্ষে নিক্ষেপিবে।

মাথার গুণ্ঠন খুলি কব তারে, মর্তে বা ত্রিদিবে একমাত্র তুমিই আমার।

অবশ্য রবি ঠাকুর প্রাণে মনে থাকলে, সেই ঠাকুরের কথা হৃদয়ে থাকলে তো আর যাই হোক বিজেপি হওয়া যায় না, কাজেই রবি ঠাকুরের প্রসঙ্গ থাক। আমি বরং আমাদের সংস্কৃতির আরও প্রাচীন কিছু সম্ভার ঘেঁটে দেখি, বাবা মা মেয়ের বিবাহের দায়িত্ব নেবে এ কোথাকার সংস্কৃতি? ওই যে স্বয়ম্বরের কথা এসেছে, তার তিনটে খুব পরিচিত উদাহরণ হল ১) সীতার স্বয়ম্বর সভা, ২) দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা আর ৩) সংযুক্তার স্বয়ম্বর সভা। দুই কাহিনি আমাদের পুরানের, শেষেরটা ঐতিহাসিক কিন্তু তা আখ্যান, তার ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্স হওয়ার আগেই, মানে বাঁদর থেকে আধুনিক মানুষ হওয়ার আগেই গুহাচিত্র এঁকেছিল, সবথেকে পুরনো যেটা সেটা ছিল ৬৪ হাজার বছর আগেকার। কিন্তু তখন মানুষের গলায় শব্দ ছিল? না, শব্দ বা ভাষা তখনও ঠোঁটে ফোটেনি। তাহলে ছিল কী? ক্লিক। হ্যাঁ দুটো ঠোঁট এক করে চুমু খাবার সময় যে শব্দ হত, সেই শব্দ এসেছিল ৭০ হাজার বছর আগে। সেই চুমু আমাদের সংস্কৃতির প্রথম উচ্চারণ আর তা ছিল যাবতীয় ভালবাসার মানুষের মধ্যেকার শব্দ। মা, ছেলেমেয়ে, পিতা, সন্তান, নারী, পুরুষ, প্রত্যেকের। মোদি যোগী চান বা না চান চুম্বনে চুম্বনে পার্থক্য ছিল বলেই জিভের কার্যকারিতা পাল্টেছে, বদলেছে, জিভ যত সক্রিয় হয়েছে তত শব্দের ফারাক হয়েছে, ল্যারিঙ্গো ট্রাকিয়াল চেম্বারে ব্যঞ্জনবর্ণ আর স্বরবর্ণের ফারাক জন্ম নিয়েছে। মোটামুটি ভাষা, সেও মাত্র ২০ হাজার বছরের পুরনো। কিন্তু সেই ইতিহাস থাক, একটা কথা তো বলাই যায় যে কোনও পিতা বা মাতার দেখরেখে এই শব্দের জন্ম হয়নি। কবিকে বলতেই হয়নি যে নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার? কারণ তখন নারী তার দুনিয়াতে স্বাধীন, পুরুষ তার দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত, মধ্যে ওই চুম্বন।

তারপরে বহু বহু বছর কেটে গেছে ভাষা উন্নত হয়েছে, আমাদের পুরান বলছে এমনকী বেদপাঠেও নারী পুরুষের কোনও ফারাক ছিল না, রীতিমতো তর্ক হয়েছে শাস্ত্র আর তার ব্যাখ্যা নিয়ে আর বিবাহ কন্যার রুচিতে। সীতা তো অপেক্ষাতেই ছিলেন রামের, জানতেন ওই হরধনু আর কারও তোলারই তো ক্ষমতা নেই। বাবা-মায়ের নির্দেশেই বিয়ে করার হলে স্বয়ম্বর সভা আয়োজনের তো কোনও ব্যবস্থার দরকার পড়ত না। সামাজিকভাবে উনি বেছে নেবেন তাঁর মনের পুরুষকে তিনি প্রতিষ্ঠিত, দীর্ঘাঙ্গ, বীর? এসব তো সেই নারী বাছবেন তাঁর নিজের মতো করে, যেমন দ্রৌপদী বেছে নিলেন এক নামহীন পরিচয়হীন কুলগোত্রহীন ব্রাহ্মণ সন্তানকে, অ্যাটলিস্ট সেই সভাতে এক কৃষ্ণ ছাড়া আর কেউ তো অর্জুনের পরিচয় জানতেনই না। পরে আরও চার স্বামী, সেও তো দ্রৌপদীরই সায় নিয়ে। না, উপনিষদ যুগের সামাজিক ইতিহাসের উপাদান নারীদের যে স্বাধীনতার ছবি তুলে ধরে যদি তা আমাদের সংস্কৃতি হয় তাহলে বরং বলা ভালো ইসলাম ছড়িয়ে পড়ার সময়ে নারী অধিকারের যে অবমাননা তার এক্কেবারে বিপরীতে এবং আমার জ্ঞান বলছে আমাদের জাদুকর পি সি সরকার ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতিরই কথা বলেছেন। আমাদের পুরান উপনিষদে নারীদের সিঙ্গল মাদার হওয়ার হাজারো উদাহরণ আছে, এবং তা বিপাকে পড়ে নয়, সেলিব্রিটি ভিভ রিচার্ডসের নাম নেওয়া যাবে না, তাই নীনা গুপ্তা সিঙ্গল মাদার এমন নয়, সূর্যের সন্তান স্বেচ্ছায় ধারণ করেই কুন্তি সিঙ্গল মাদার, পরে যে ভুল করেছেন তাও নিজেই স্বীকার করেছেন, সেটাও বুঝিয়ে দেয় সেই সমাজের উদার কাঠামোর কথা। তারপর এক অন্ধকার সময় আসে, ব্রাহ্মণ্যবাদ গিলে খায় সমাজটাকে। যাবতীয় উদার মানবিক কাঠামো চুরমার করে মনুসংহিতা চেপে বসে, মধ্যযুগীয় সেই অন্ধকারে নারীদের স্বাধীনতাই ছিল প্রথম শহীদ, মনুসংহিতায় ঠিক সেই কথাই লেখা হয় যা আজকে জাদুকর বলেছেন, স্ত্রী জন্মে পিতার, বিবাহের পর স্বামীর, বৈধব্যে সন্তানের সম্পত্তি। কিন্তু আর যাই হোক এটা আমাদের সংস্কৃতি নয় স্যর। গিলি গিলি হোকাস ফোকাস বলে আমাদের অমন উদার, অমন খোলামেলা সমাজটাকে এক পুরুষশাসিত সমাজ বানানোর চেষ্টা করবেন না, আধুনিক নারী পুরুষ তা মেনে নেবেও না। পৃথিবী জুড়েই মাওয়ের সেই অর্ধেক আকাশের দখল নেওয়া শুরু হয়ে গেছে, আপনার কন্যাদের ফেসবুক দেখুন তাঁরাও আলোড়িত হয়েছেন রাতদখল আর দিনবদলের ডাকে। অর্ধেক আকাশ আপনার পাঁঠা নয় যে আপনার ইচ্ছেমতো ল্যাজে বা মাথায় কোপ মারবেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Nitish Kumar | নীতীশকে চাপে ফেলতে বিজেপির নয়া হাতিয়ার, চিরাগ পাসওয়ান! এবার কী করবেন নীতীশ?
00:00
Video thumbnail
Politics | মুসলিম কেন জিমে যাবে? বিজেপির পুলিশই আটকাবে
03:51
Video thumbnail
Politics | বিহার-ভোটে প্রশ্ন এবার সুস্থ আছেন নীতীশকুমার?
03:35
Video thumbnail
Politics | অধিবেশনের দাবী বারবার বিজেপি শুধুই করছে প্রচার
03:41
Video thumbnail
Politics | শাহ চুপ সংগঠন নিয়ে জল্পনা দিলেন বাড়িয়ে
03:32
Video thumbnail
Kakoli Ghosh Dastidar | ওরাং ওটাংয়ের মতো হু/মকি দিয়ে কিছু হয় না, কাকে বললেন কাকলি?
02:18:40
Video thumbnail
Politics | বিরোধীদের প্রশ্ন সাফ, ক্ষমা চাইলেই অন্যায় মাফ?
03:44
Video thumbnail
Amit Shah | TMC | শাহের কুমিরের কান্না আর কী বলল তৃণমূল? দেখুন বড় আপডেট
02:21:05
Video thumbnail
Politics | মমতার নজরে এখন অনগ্রসরের উন্নয়ন
02:35
Video thumbnail
Ukraine | Russia | জেলেনস্কির অপারেশন 'স্পাইডার ওয়েব', রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে হা/ম/লা ইউক্রেনের
02:23:51