skip to content
Sunday, February 9, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভআরজি কর তদন্ত, ধোঁয়াশা কোথায়? ধোঁয়াশা কেন?
Fourth Pillar

আরজি কর তদন্ত, ধোঁয়াশা কোথায়? ধোঁয়াশা কেন?

Follow Us :

কলকাতা: রাজ্যের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ, না তাঁরা সংখ্যা গরিষ্ঠ নন, সংখ্যা গরিষ্ঠতার ধারে কাছেও নেই, কিন্তু এক বড় সংখ্যার মানুষ আর জি কর ধর্ষণ আর হত্যা নিয়ে দুটো পক্ষে ভাগ হয়ে গেছে। এক্কেবারে আড়াআড়ি ভাগ, এবং দু পক্ষই ধরেই নিয়েছেন তাঁরা ঠিক এবং বাকিরা হলেন সেই ধর্ষক হত্যাকারি বা হত্যাকারীদের সমর্থক। আর অন্যদল ভাবছেন যাঁরাই এই প্রতিবাদে আছে তাঁরাই আসলে এই সরকারের বিরুদ্ধে এক ষড়যন্ত্রের অঙ্গ। হ্যাঁ, ধর্ষণ আর খুনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন না কেন?

এক মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আমি কি আমার সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি? হ্যাঁ আপাতত বঙ্গ সমাজ এই দুইভাগে বিভক্ত, এর মধ্যে যে ক্ষীন কন্ঠস্বর আছে, আসুন তা নিয়েই দুটো কথা বলা যাক। আমি আগেই বলেছি যে দুটো ভাগে ভাগ হওয়া প্রথম দল এই হত্যা আর ধর্ষণের পেছনের প্রত্যেকটা ধোষী অপরাধীকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেই ফেলেছেন। যাকেই গ্রেওতার করা হচ্ছে তাকে জুতো ছুঁড়ে মারা হচ্ছে, কেন? সি বি আই যাদের যাদের ধরেছে সব্বাই দোষী বলে প্রমাণিত? দিইলি আবগারি মামলায় যতজন কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কেজরিওয়াল, মনীষ শিশোদিয়া, কে কবিতা, ভিজয় নায়ার, সঞ্জয় সিং, ৫ জন মূল অভিযুক্তের ৫ জনই জামিন পেয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে এখনও তেমন কিছুই বার করতে পারেনি সি বি আই, আটমাস, ছ মাস চার মাস জেল খাটার পরে তারা বের হয়ে আসছে, যাঁরা আজ এখানে জুতো মারার ঘটনাতে উল্লসিত চলুন না একটু কেজরিওয়াল বা শিশোদিয়া বা সঞ্জয় সিং কেও দু চার খানা জুতো ছুঁড়ে আসি। একজনকে গ্রেপ্তার করে তার অপরাধ প্রমাণিত হবার আগেই তাকে ধর্ষক আর হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে কোন গ্যালারি গরমের কাজ হচ্ছে? একটা ধারনা প্রবল হয়েছে এমনও নয়, সব্বাই জানেন, এক পক্ষের সব্বাই জানেন যে এটা একটা গণধর্ষণ, সব্বাই জানেন যে ঐ সেমিনার হলে ধর্ষণ বা খুন কিছুই হয় নি, জানেন যে বাইরে থেকে লাশ এনে ওখানে রেখে দেওয়া হয়, জানেন যে ঐ মেয়েটি দূর্নীতির তথ্য জেনে ফেলেছিল বলেই এটা করা হল, সব জানেন কেবল নয় সেই জানার ভিত্তিতেই অন্য প্রশ্নগুলো তুলছেন। আচ্ছা এই যে গণধর্ষণ হয়েছে আপনি কিমনে করেন না যে এতে যারা যুক্ত তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত? প্রশ্ন করা হচ্ছে পাবলিককে। মানে হল,গণধর্ষণ হয়েছে এটা প্রমাণিত এবার বলুন ফাঁসি হবে না হাত পা কেটে তালিবানি কায়দাতে তাদের মারা হবে। এই পক্ষের সব্বাই জানেন যে পুলিশ এর এক বড় কর্তা গিয়ে মৃতা ধর্ষিতার বাবা মাকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিভাবে জানলেন? সেই মা বাবাই বলেছেন। দুটো রেকর্ড আছে, একটাতে বলেছেন টাকা অফার করেছেন ঐ পুলিশ কর্তা, একটা ভিডিও আছে যেখানে শোনা যাচ্ছে টাকার কোনও কথাই হয় নি। সেটা নাকি চাপ দিয়ে করানো। কে বলেছেন? ঐ মা বাবা বলেছেন। মানে মা বাবার কথা বিশ্বাস করছেন সেই মানুষেরা। কিন্তু আরেকজন মা, কোন্নগরের বিক্রমের মা বলছেন আমার ছেলে চিকিৎসা পেলনা, তাকে ডাক্তার দেখলো না, সে বিনা চিকিৎসাতে মারা গেল। এই মায়ের কথা এই বিরাট অংশের মানুষের হয় কানেই ঢুকছে না, আর ঢুকলে এ তো কুনাল ঘোষের খেলা বলে পাস কাটানো হচ্ছে। মানে খুব সহজ একটা ইকুয়েশন চলছে, কিছু মিথ্যে, অর্ধসত্য তথ্য কে ঘিরে এক মতামত গড়ে তোলও, আর তা নিয়ে এক মিথ্যে বা অর্ধসত্য জনমত গড়ে তোলও।

অন্যদিকেও কমতি নেই। এই আন্দোলনকারীরা প্রত্যেকেই আসলে মমতা বিরোধী, এই আন্দোলনকারীরা আসলে প্রত্যেকেই এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী অতএব তারা হয় বাম নয় বিজেপি, এরকম এক অতিসরলীকরণের ফলেও বিভ্রান্তির চুড়ান্ত। যে ছেলেটি তৃণমূল স্তরে তৃণমূল করে তাকে বোঝানো হল, বা সেই লাগাতার প্রচারের ফলে বুঝেই ফেললো যা এই যারা উই ডিমান্ড জাস্টিস বলে পথে নেমেছে এরা সবাই বাম নাহলে বিজেপি, মাকু নাহলে চাড্ডি। ব্যস। কিন্তু সমস্যা হল যখন চোখের সামনে দেব থেকে শুরু করে আরও বহু চিহ্নিত তৃণমূল নেতা সমর্থকরা রাস্তায় উই ওয়ান্ট জাস্টিস বলে নামছেন তখন সেই ছেলেটি ঘেঁটে ঘ। দুটো বিষয়কে যদি আলাদা করা যেতো, ভাবুন তো কেমন হতো? ধর্ষণ আর হত্যার একটা তদন্ত চলতো, সেই ঘটনার ভিত্তিতে আমরা বিচার চাই বলতাম আর অন্য বিষয় হল এক প্রাতিষ্ঠানিক দূর্নীতি, সেটা নিয়েও আলাদা ফোরাম তৈরি করে লড়াই হতো। কিন্তু এই দুটোকে মিলিয়ে দিয়ে মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে এক চটজলদি ক্ষ্মতা হাতানোর ছকবাজি শেষ্পর্যন্ত আন্দোলনে হতাশা আনবে। আন্দোলন দীশা হারাবে। ভাবুন না যে জুনিয়র ডাক্তারেরা বললেন আমরা লাইভ স্ট্রিমিং ছাড়া আলোচনাতে বসতেই রাজী নই, তিন তিনবার আলোচনা শুরুর আগেই ভেস্তে গেল, বা ভেস্তে দেওয়া হল, সেই দাবি ছাড়াই ডাক্তারেরা আলোচনায় বসতে রাজি হয়ে গেলেন। আচ্ছা একটা এত বড় ব্যাপার, এত মানুষের প্রতিবাদ, এত মানুষের আবেগ, পাড়ার ক্লাবের সংগঠন নয়, একটা ডাক্তারদের সংগঠন, এরকম ছেলেমানুষি চালিয়ে যাবেন? তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? এরপর তাদের মানুষ বিশ্বাস করবেন? একটা তো কোনও জবাব থাকবে যে আমরা এই জন্য চেয়েছিলাম আর এই জন্য সেটা না মানলেও বৈঠকে বসছি। মনে হচ্ছে পাড়ার ক্লাবের মিটিং। সেই শুরুর দিন থেকে দুই যুযুধমান পক্ষের মধ্যে কে? সাধারণ গরীব মানুষ। প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবেন না কারণ তার ইমেজের সমস্যা আছে, তাকে আবার ভোটে দাঁড়াতে হবে, তাঁকে সংবেদনশীল হতে হবে, ওদিকে সুযোগ বুঝে একধরণের ব্ল্যাক মেইলিং চলছে। পুজোর আগের রবিবার খাঁ খাঁ করছে ফুটপাথ, পশরা নিয়ে বসে থাকা হকাররা জিজ্ঞেষ করছেন, কাল মিটবে? মানে মিটলে যদি লোকজন বের হন ঘর থেকে যদি কিছু খদ্দের জোটে পুজোর শেষ বাজারে। হাতিবাগানের হকাররা পশরা নিয়ে পাশাপাশি আবাসনে গিয়ে হাজির হচ্ছেন, ছিলেন ফুটপাথের হকার, এখন জামা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে ফেরিওয়ালা।

একটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল এক মাস আগে ঘটে যাওয়া এক ঘটনা কে কেন্দ্র করে, সেই জঘন্য নৃশংস ধর্ষণ আর হত্যাকান্ডের সঙ্গে অয়ানায়াসে জুড়ে গিয়েছে কেবল আর জি কর নয়, আরও বহু প্রতিষ্ঠানের দূর্নীতি, আর সে সব কিছুর বিরুদ্ধে এক জায়জ ক্রোধ, এক পবিত্র রাগ থেকে তৈরি হওয়া এক আবেগের ছবি আমরা দেখেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মূঢ়তা, ক্লীব আর সুবিধেবাদী দৃষ্টিভঙ্গি কে একপাশে সরিয়ে রেখে উদ্দাম কলরব, এক নয়া ইতিহাস দেখলাম আমরা, এর আগে বহু প্রচার আর সাধ্য সাধনায় যা রাজনৈতিক দলগুলো পারেনি, দেখলাম কিছু মানুষের আলতো ডাক পায়েড পাইপারের মত টেনে নিয়ে আসলো লক্ষ লক্ষ মানুষকে। কিন্তু তা ছিল আক্ষরিক অর্থেই সেই পায়েড পাইপার, গর্ত ফাঁক ফোকর থেকে মানুষজনকে বার করে নিয়ে আসলে তাদের প্রতিবাদকে মুছে দেওয়াটাই ছিল আসল উদ্দেশ্য। কোথায় গ্যালো সেই ধর্ষণ খুনের অপরাধী, কোথায় গ্যালো নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদ, কোথায় গ্যালো জেন্ডার ইকুয়ালিটির প্রশ্ন? সব পেছনে সরে গিয়ে আপাতত বিষয় হলো জুনিয়র ডাক্তারেরা কাজে যোগ দেবেন কি দেবেন না, সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাবেন কি পাবেন না। বিষয় এখন আলোচনার লাইভ স্ট্রিমিং হবে কি হবে না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে বহু মানুষের দুর্ভোগ আর তার সমসয়ার আরালেই বাকি মূল সমস্যা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে, ক্রমশ আর সব গৌণ হয়ে গিয়ে আপাতত বিষয় হল তৃণমূল সরকার থাকবে না পদত্যাগ করবে? ক্রমশ প্রতিদিনের রাজনীতির ক্লেদ আর পাঁকের মধ্যে চলে যাচ্ছে ক অনন্ত সম্ভাবনা, যা হয়ে উঠতে পারতো এই ব্যবস্থার কাছে এক বিরাট ধাক্কা, যা হয়ে উঠতেই পারতো দূর্নীতির বিরুদ্ধে এক তীব্র আর ধারাবাহিক লড়াই, যার সুযোগ আমাদের হাতের মুঠোয় তুলে দিয়েছিল আমাদের তিলোত্তমা, সে সুযোগ আমরা হারিয়ে আপাতত ঘাসফুল আর পদ্মফুল, হাত আর কাস্তে হাতুড়ির বস্তাপচা নির্বাচনী লরাই এর মধ্যে ঢুকে গেছে। এবং সেই তাঁরা যাঁরা অত্যন্ত সৎ আবেগ, এক পবিত্র আবেগ নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা হতাশ, চূরান্ত হতাশ।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Arvind Kejriwal | Delhi Election | ভোটে হারের পর প্রথম মুখ খুললেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কী বললেন শুনুন
00:00
Video thumbnail
Delhi Election Live Updates | দিল্লিতে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কে জিতবে? দেখুন প্রতি মুহূর্তের খবর
02:37:19
Video thumbnail
বাঙালিরাই ঠিক করবে বাংলায় কি হবে! কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই কড়া সুর কার্তিক মহারাজের, নীরব কেন শুভেন্দু?
03:04:56
Video thumbnail
Delhi Election 2025 | AAP | BJP | আপকে টেক্কা দিচ্ছে বিজেপি, শেষ হাসি কে হাসবে?
01:59:45
Video thumbnail
Delhi Election 2025 | Live Results | পোস্টাল ব‍্যালটে পিছিয়ে আপ এগিয়ে বিজেপি , দেখুন Live
01:05:30
Video thumbnail
Arvind Kejriwal | আদৌ কি জিততে পারবেন কেজরিওয়াল?
02:19:05
Video thumbnail
Delhi Election 2025 | Arvind Kejriwal | দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরবে আপ? দেখুন বড় আপডেট
02:24:09
Video thumbnail
Delhi Election Results 2025 | শুরু গণনা, প্রাথমিক ট্রেন্ডে কে এগিয়ে? কে পিছিয়ে?
02:41:25
Video thumbnail
Arvind Kejriwal | Delhi Election | ভোটে হারের পর প্রথম মুখ খুললেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কী বললেন শুনুন
09:21:08
Video thumbnail
Delhi Election 2025 | দিল্লি ভোটে কে এগিয়ে?
02:35:11