এটিকে মোহনবাগান–২ এফ সি গোয়া–০
(মনবীর সিং–২)
এটিকে মোহনবাগানে একটা মিথ তৈরি হয়েছে যে মনবীর সিং যে ম্যাচে গোল করেন সেই ম্যাচ হারে না তাঁর দল। তো ম্যাচের দু মিনিট ছত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে যখন মনবীর গোল করে ফেললেন তখনই যেন লেখা হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য। পঞ্জাব পুত্র বিরতির অব্যবহিত পরেই আরও একটা গোল করলেন। দিনটা ছিল তাঁরই। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর, নিশ্চিত হ্যাটট্রিক মাঠে ফেলে এলেন। একবার বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন পেনাল্টি বক্সে। শট নেওয়ার সময় পিছন থেকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলেন গোয়ার ডিফেন্ডার। রেফারি একটু পিছনে ছিলেন। তাই নিশ্চিত পেনাল্টি পেল না মোহনবাগান। তবে হ্যাটট্রিক করার সুযোগ মনবীর আরও পেয়েছিলেন। নিজের দোষে নষ্ট করেন। তবে জোড়া গোল করার পর ম্যাচের সেরার পুরস্কার তাঁকে ছাড়া আর কাকেই বা দেওয়া যেত? সব মিলিয়ে টানা এগারোটা ম্যাচ অপরাজিত রইল জুয়ান ফেরান্দোর দল। এর মধ্যে জয় ছয়টিতে। পনেরো ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান ছুঁয়ে ফেলল এক নম্বরে থাকা হায়দরাবাদ এফ সি-কে। শুধু গোল পার্থক্যে হায়দরাবাদ একে, মোহনবাগন দুইয়ে। এবারের আই এস এল-এ যে গতিতে মোহনবাগানের অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটছে তাতে তার গলায় লাগাম পরাবে কে সেটাই এখন দেখার। এই মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
কোচ বদলের পর মোহনবাগানের খেলারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। জুয়ান ফেরান্দোর কোচিং স্টাইলটা একেবারেই তাঁর নিজস্ব। এদিন যেমন মাত্র দুই বিদেশি দিয়ে তিনি বাজিমাৎ করলেন। ডিফেন্সে তিরি। মাঝ মাঠে জনি কাউকো। বাকি নজন ভারতীয়। ফেরান্দোর জয় তাই ভারতীয় ফুটবলেরও জয়। তাঁর দল সাজানোও অন্যরকম। পাঁচজন ডিফেন্ডার। প্রবীর দাস, প্রীতম কোটাল, সন্দেশ ঝিঙ্গন, তিরি এবং শুভাশিস বসু। সামনে শুধু দুই ফরোয়ার্ড মনবীর আর লিস্টন কোলাসো। সাহসী দল গঠন। আসলে দীর্ঘ দিন এফ সি গোয়ার কোচ ছিলেন তিনি। জানেন টিমটার ফুটবল স্টাইল। প্রচুর পাস খেলে গোয়ানরা। মাঝ মাঠে যে তাদের সঙ্গে পারা যাবে না এটা যেন জুয়ান জানতেন। তাই তিনি জোর দিলেন ডিফেন্সের উপর। গোয়া যখন আ্যাটাকে আসে তখন পাঁচ থেকে ছয় জন উঠে আসে। তাদের সামলাতে চার ডিফেন্ডারে হবে না। তাই এক বাড়তি ডিফেন্ডার রাখলেন তিনি। আর সেন্টার ব্যাকে রাখলেন তিনজনকে। প্রীতম, সন্দেশ এবং তিরি। এই তিনজনই কিছুতে গোলের মুখ খুলতে দিলেন না। সারাক্ষণ তাই দাপিয়ে খেলেও, বল পসেসনে মোহনবাগানের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকলেও গোয়া সুযোগ পেল কটা। দূর থেকে নেওয়া আনোয়ার আলির শট অমরিন্দর ফিস্ট করলেও বল বারে লেগে বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া ছুটকোছাটকা কয়েকটি শট ছাড়া মাঝমাঠে তাদের দাপটটা তারা সুযোগ সৃষ্টিতে পরিণত করতে পারেনি। এর জন্য সব কৃতিত্ব মোহন ডিফেন্সের।
সত্যি কথা বলতে কী শুরুতেই গোল খেয়ে যাওয়া গোয়াই কিন্তু প্রথমার্দ্ধ দাপিয়েছে। মোহনবাগান দাপট দেখাল বিরতির পর। ফ্লাড লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ম্যাচ একটু সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মোহনবাগানের ফ্লাডলাইট যেন বিরতির পর দ্বিগুণ আলোয় জ্বলে উঠল। তখন একটার পর একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং সেগুলো নষ্ট করেছেন মনবীর, লিস্টন কোলাসো এবং জনি কাউকোরা। বিরতির পরের মিনিটেই ০-২ পিছিয়ে পড়া গোয়া তখন গোল শোধের জন্য মরিয়া। ডিফেন্স অনেকটাই উঠে খেলছিল। সেই সুযোগে লম্বা থ্রূ পাস কিংবা লং বলে বাগান খুব তাড়াতাড়ি পৌছে যাচ্ছিল গোলের কাছে। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে গোয়াকে গোলের মালা পরাতে পারত মোহনবাগান। মিনিট দুয়েকের মাথায় কর্নার পায় মোহনবাগান। বাঁ দিক থেকে লিস্টন কোলাসোর কর্নার ব্যাক হেডে গোল করলেন মনবীর। এমনিতে গোয়ার গোলকিপার ধীরাজ সিং অনেক গোল বাঁচিয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁর কিছু করার ছিল না। আর মনবীরের দ্বিতীয় গোলটা ৪৬ মিনিটে। বিরতির পর তখন সবে খেলা শুরু হয়েছে। একটা মিস পাস ধরে লেনি রডরিগস লম্বা থ্রূ পাস বাড়ালেন মনবীরকে। গতি বাড়িয়ে সেই বল ধরে গোল করে এলেন মনবীর।
চ্যাম্পিয়নস লাক সঙ্গে না থাকলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। মোহনবাগান গত বার অল্পের জন্য রানার্স হয়েছে। এবার যদি ভাগ্য একটু সহায় হয় আই এস এল-এর ট্রফিটা আবার কলকাতায় আসতে পারে। মোহনবাগান কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতোই খেলছে।