Friday, June 13, 2025
Homeকলকাতা'ধর্ষক' বাবা চাইলেও মা চান না সন্তানের ডিএনএ টেস্ট, বিস্মিত আদালত

‘ধর্ষক’ বাবা চাইলেও মা চান না সন্তানের ডিএনএ টেস্ট, বিস্মিত আদালত

Follow Us :

আমরা যতই আইন মেনে কাজ করি না কেন সেই আইনের সুফল সমাজের সর্বত্র প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। যার ফলে সমাজের ক্রিমিনাল চিন্তাভাবনার জেরে সমাজে কিছু কিছু ব্যক্তিকে কষ্ট পেতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি মামলায় মা ও সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষায় রাজি না হওয়ায় বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদের এই মন্তব্য।

জেলে বসে বাবা নিত্যানন্দ (কাল্পনিক নাম) চেয়েছিলেন তার সন্তান ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী অনিন্দিতার (কাল্পনিক নাম) DNA টেস্ট করাতে। আদালতের নির্দেশ মতো অনিন্দিতা হাজির হয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে। আদালতে দাঁড়িয়ে অনিন্দিতা সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি DNA টেস্টে রাজি নয়। হতবাক বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ। বিচারপতির মন্তব্য:—

১) সেকি আপনি চান না ওই সন্তানের বাবা কে তা জানতে।

২) মা হিসাবে আপনি তো নিশ্চয়ই জানেন ওই সন্তানের বাবা কে বলুন।

অনিন্দিতার স্বীকারোক্তি জেলে থাকা চৈতন্য ওর বাবা।

৪) তাহলে আপনার তো উনাকেই বিবাহ করা উচিত ছিল। আপনি উনাকে বিয়ে না করে আপনি অন্য জনকে বিয়ে করলেন কেন?

৫) সমাজে এসব কি হচ্ছে একজন মেয়ে ছেলেদের দিকে তাকালেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়ে যাচ্ছে।

৬) একজন মহিলা তাঁর কর্তা বাইরে থাকা অবস্থায় অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছে। যখন কর্তার নজরে আসছে তখন সেই ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের কেস দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সমাজে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া দরকার।

৭) বর্তমান স্বামী জানেন যে ওই শিশুটির জন্ম কিভাবে হয়েছে। তিনি কি শিশুটিকে গ্রহণ করেছেন।

অনিন্দিতা–হ্যাঁ তিনি সব জানেন শিশুটিকে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছেন।

৮) অভিযুক্ত তো বলছে শিশুটি তার নয় তাহলে শিশুটি আসলে কার? আপনি সঠিক কথা বলছেন তো? আপনার বর্তমান স্বামীর সঙ্গে সেই সময় আপনার নিশ্চয়ই সম্পর্ক ছিল। সে সব জেনেশুনেই গ্রহণ করেছে।

৯) আপনাকে বলছি আপনি ডিএনএ টেস্ট করিয়ে নিন। শিশুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আপনার কথা অনুযায়ী যদি ধরে নেওয়া যায় যে অভিযুক্তের সন্তান ওই শিশুটি। তাহলে ভবিষ্যতে অভিযুক্তের সম্পত্তির ওপরে তার অধিকার থাকবে আপনি যদি এখন ডিএনএ টেস্টে রাজি হন তাহলে সেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

অনিন্দিতা — আমার বর্তমান স্বামী চায় না ডিএনএ টেস্ট হোক।

১১) তাহলে শিশুটি কী অভিযুক্তের নয়।

১২) আপনি যদি আবার বিবাহ করলেন তাহলে উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন কেন এইভাবে কেস করলেন কেন। সন্তানটি যদি অভিযুক্তের হয়ে থাকে আপনার তো উচিত ছিল উনাকে বিবাহ করার। কেন তা না করে আপনি অন্য জনকে বিবাহ করলেন।

১৩) তাহলে আপনার সঙ্গীটি বর্তমান স্বামীর আগে থেকেই পরিচয় ছিল?

১৪) একটা লোক দীর্ঘদিন ধরে জেলে বসে রয়েছে সে কষ্ট করছে আপনি অন্য একজনকে বিবাহ করে নিয়ে সুখে আছেন এটা কি ঠিক।

১৫) আপনাকে খুব ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞাসা করছি অভিযুক্তকে কি জেল থেকে ছেড়ে দেবো?

মাথা নেড়ে সম্মতি দেন অনিন্দিতা

১৬) আমরা যতই আইন মেনে কাজ করি না কেন সেই আইনের সুফল সমাজের সর্বত্র প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ। যার ফলে সমাজের ক্রিমিনাল চিন্তাভাবনাই এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং কিছু কিছু ব্যক্তিকে তার জন্য কষ্ট পেতে হয়।

যদিও এই মন্তব্যগুলোকে আদালতে নথিভূক্ত করেননি বিচারপতি শিবকান্ত প্রসাদ।

আগামী ১৮ অগস্ট তিনি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন সেদিনই নির্ধারিত হবে অভিযুক্ত চৈতন্যের ভবিষ্যৎ কি হবে তিনি কি জেল থেকে ছাড়া পাবেন।

অভিযুক্তের আইনজীবী নীলাদ্রি শেখর ঘোষ ও জীশান হোসেনের মতে অভিযুক্ত ওই বাচ্চার পিতা নয়। উল্লেখ্য শিশুটির বয়স বর্তমানে তিন বছর।

সরকারি আইনজীবী অনিকেত মিত্র বলেন—অনিন্দিতা যখন অভিযোগ দায়ের করেছিল, তখন সেই অভিযোগের ভিত্তি ছিল তিনি বিবাহের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তাঁর সঙ্গে মিলিত হন। কিন্তু পরে তাঁকে বিবাহ করা হয়নি। পরবর্তীকালে নিত্যানন্দের জেল হেফাজতের সাজা হওয়ার পর তিনি নিজের সামাজিক সম্মান রক্ষা করতে বিবাহের সিদ্ধান্ত নেন।

৭ বছর পর ‘সন্তানের পিতৃত্ব’ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সম্প্রতি আদালতের কাছে ডিএনএ পরীক্ষার আর্জি জানিয়েছিলেন জেলবন্দি ‘ধর্ষক বাবা’। তারই প্রক্ষিতে আদালতে বিচারপতির এই বয়ান বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন: সন্তান কার, আদালতে ডিএনএ রিপোর্ট চাইলেন বাবা

উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ থানার অন্তর্গত বাসিন্দা অনিন্দিতাকে (কাল্পনিক নাম) গৃহ শিক্ষক হিসাবে পড়াতেন নিত্যানন্দ বর্মন। তার সঙ্গে অনিন্দিতার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৪ সালে অনিন্দিতার পরিবার হেমতাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ, অনিন্দিতার যখন ১৭ বছর বয়স, তখন গৃহশিক্ষক নিত্যানন্দ তাঁকে ১১ থেকে ১২ বার ধর্ষণ করে এবং তাতে অনিন্দিতা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে নিত্যানন্দর বিরুদ্ধে পস্কো আইনে মামলা শুরু হয়। ২০১৫ সালে অনিন্দিতা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। রায়গঞ্জের স্পেশাল কোর্টে চলে বিচার প্রক্রিয়া। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন অনিন্দিতা স্বীকার করেন যে তাঁর সঙ্গে নিত্যানন্দের ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ২০১৭ সালের ২ অগস্ট রায়গঞ্জ স্পেশাল কোর্ট নিত্যানন্দকে ৭ বছরের জেলের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীকালে অনিন্দিতার অন্যত্র বিবাহ হয়। সন্তানটি বর্তমানে অনিন্দিতার কাছেই রয়েছে। এদিকে আদালতের রায়ে জেল হয় নিত্যান্দর।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran | ইরানে ভারতীয় নাগরিকদের প্রতি অ্যাডভাইজরি ভারতীয় দূতাবাসের, কী কী বিষয় সতর্ক থাকতে হবে?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরান-ইসরায়েল যু/দ্ধ শুরু, এবার কী হবে? শুনুন জয়ন্ত ঘোষালের বিশ্লেষণ
00:00
Video thumbnail
Amit Shah | Air India | আহমেদাবাদে বিমান দুর্ঘ/টনা নিয়ে বড় মন্তব‍্য অমিত শাহর, কী বললেন শুনে নিন
00:00
Video thumbnail
Bangladesh | বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভা/ঙা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতের, কী পদক্ষেপ দিল্লির?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | বিগ ব্রেকিং, ইরানের বিরুদ্ধে যু/দ্ধ ঘোষণা ইজরায়েলের,কী জানালেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের হা/ম/লায় নি/হ/ত ইরানের সেনাপ্রধান
00:00
Video thumbnail
Air India | আহমেদাবাদ বিমান দু/র্ঘ/টনায় একমাত্র জীবিত ব্যক্তি প্রথম মুখ খুললেন ক‍্যমেরার সামনে
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইজরায়েলের হা/ম/লার পর ইরানে কী অবস্থা? দেখুন ইরানি রিপোর্টারের কভারেজ
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | কলকাতা টিভির আভাসই সত‍্যি হল, শুরু ইরান-ইজরায়েল যু/দ্ধ, এবার কী করবে আমেরিকা?
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানকে শে/ষ করতে ইজরায়েলের অপারেশন রাইজিং লায়ন, দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00