Thursday, November 27, 2025
HomeScroll' সোনিয়াজি ' হতে পারে গম্ভীরের সিলেবাস
Gautam Gambhir

‘ সোনিয়াজি ‘ হতে পারে গম্ভীরের সিলেবাস

সেই মনের পক্ষে ' বিরাটজি -রোহিতজি ' ডাকের নম্রতায় নামা সম্ভব !

Written By
Gautam Bhattacharya

গৌতম ভট্টাচার্য

তর্কযোগ্যভাবে দুবাইয়ের শ্রেষ্ঠ পর্যটক আকর্ষণ বর্জ খলিফার সামনে থেকে ফেরার ওই রাত্তিরে প্রয়াত অজিত ওয়াদেকরকে (Ajit Wadekar) বারবার মনে পড়ছিল। বিশেষ করে পাবলিক প্লেসে কমান্ডো বা বডিগার্ডবিহীন সোনিয়া গান্ধীকে (Sonia Gandhi ) গাড়ির জন্য অপেক্ষায় দেখে ।

১৯৯৪-র কলকাতা বিকেল। তখনকার ভারতীয় কোচ অজিত ওয়াদেকরকে ছাড়তে যাচ্ছি কলকাতা বিমানবন্দরে। ইডেনে (Eden Gardens) ডালমিয়া (Jagmohan Dalmiya) সেদিন দুপুরে জরুরি বৈঠকে ডেকেছিলেন ওয়াদেকরকে। খুব গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। ক্যাপ্টেন আজহারকে ডাকা হয়নি। কোচকে তলব হয়েছে শলা পরামর্শের জন্য। এথেকেই বোঝা যাচ্ছে টিমে তখন কার কী অবস্থান। যা হোক মিটিং সেরেই তিনি দ্রুত এয়ারপোর্টের উদ্দেশে। তখনকার দিনে এত ফ্লাইট ছিল না। ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের জমানা। সন্ধ্যের উড়ান মিস হলে সেদিনের মতো গেল।

আমি উঠে পড়েছি তাঁর গাড়িতে। মিটিংয়ে কী হল জানতে হবে তো। তখনকার পৃথিবীতে ইন্ডিগো বা জেট এয়ারওয়েজ বলে যেমন কিছুর আবিষ্কার হয়নি। তেমনি মোবাইল ফোন বলেও তো কিছু নেই। এখানে ধরতে না পারলে মুম্বইয়ের বাড়িতে ওয়াদেকর পৌঁছতে পৌঁছতে রাত সাড়ে দশটা। ততক্ষণে এবিপির ফাস্ট এডিসন চলে যাবে।

তাই মারুতি ভ্যানের পেছনের সিটে। সিএবি থেকে সঙ্গে যে যাচ্ছিল তাকে নামিয়ে দেওয়া হল কারণ আর জায়গা নেই। ডান দিক থেকে গাড়িতে উঠে পড়েছে দেবাশিস দত্ত। ওয়াদেকার সানন্দে ড্রাইভারের পাশে।

সমস্যা হল সেদিন শহরে নেমেছেন সোনিয়া গান্ধী। জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হলে কী হবে। কেন্দ্রে বিপুল ক্ষমতার সঙ্গে কংগ্রেস। আর গান্ধী পরিবারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় টান পড়েনি। পাগলের মতো ভিড় সোনিয়ার জনসভাকে কেন্দ্র করে। ওয়াদেকরের যাত্রাপথকে তুমুল বিঘ্নিত করে সেটা ঘটছে লেকটাউন অঞ্চলে। পুরো রাস্তা জ্যাম। কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে দলে দলে ট্রাক যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ আটকে দিচ্ছে বাকি গাড়িগুলোকে। বাইপাস নেই যে গাড়ি ঘুরিয়ে ওদিক থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়া যাবে।

ওয়াদেকর গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। ট্রাভেল এজেন্টের লোক বিমানবন্দরে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে যে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে বলে ফ্লাইট দেরির চেষ্টা করাবে তার উপায় কোথায় ? তাকে তো বলা যাচ্ছে না যে আমার দেরি হচ্ছে। রাস্তায় নেমে একটা এসটিডি বুথ থেকে এয়ারপোর্টের ডিউটি ম্যানেজারকে ধরার চেষ্টা করলাম এবং লাইন গেল না। মিটিংয়ের খবর নেবো কী। ভিনরাজ্যের অতিথির বিপন্নতা বাড়ছে।

আমরা জানতে চাইলাম আজ থেকে গেলে কী হয় ? ভারতীয় কোচ ততক্ষণে তাঁর বিখ্যাত হাসি ত্যাগ করে উদ্বেগের মোডে।

বললেন , ” কাল সকালে শেষ দফার টিমের প্র্যাকটিসের মাঝে নির্বাচকদের সঙ্গে জরুরি কথা বলারও আছে। তারপর বিকেলে তো আমরা নিউজিল্যান্ড চলে যাচ্ছি। ফ্লাইট মিস করলে কেলেঙ্কারি হবে। ”

দেবাশিস এবার গাড়ি থেকে নেমে পুলিশকে সনির্বন্ধ অনুরোধ করল ,এমার্জেন্সি আছে। ইন্ডিয়ান কোচকে যেতে দিন। কিন্তু কে শোনে কার কথা ? সোনিয়া নিয়ে এমন হাইপ চলছে যে কেউ কিছু শুনতেই রাজি হচ্ছে না। একমাত্র কংগ্রেসের পতাকা ওড়ানো গাড়িগুলো ছাড়া হচ্ছে। বাম আমলে অভাবনীয়। কিন্তু ঠিক তাই ঘটছে।

মনে রাখবেন টিভি-ফেসবুক -এক্সে -ইন্সটায় তখনও হাই প্রোফাইল রাজনীতিবিদ বা তারারা নেমে আসেননি সাধারণ মানুষের কাছে । সন্ধ্যের নিউজ চ্যানেলের পলিটিকাল শো শুরুর যুগ আসেনি। পরিপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে তারারা বিচরণ করেন একমাত্র মাঝ আকাশে। দূরত্বের কারণে তাঁদের ঔজ্জ্বল্য আজকের চেয়ে অনেক বেশি। কখনও হাতের কাছে না পাওয়া সোনিয়াকে নিয়ে নাচানাচিতে এতকালের গ্ল্যামারাস ভারতীয় ক্রিকেট পর্যন্ত পেছনের সারিতে চলে গিয়েছে। হতে পারেন তিনি তখন ইন্ডিয়ান টিমের চাণক্য। স্টেট ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। কিন্তু তাঁর মুখ তো আর শচীন-আজহারের মতো পরিচিত নয় যে ট্র্যাফিক পুলিশ দেখেই স্যালুট মারবে।

আমাদের গাড়ি সেই ভিআইপি রোডে দাঁড়িয়ে। ঘুরিয়ে অন্য দিকে চলে যাব সেই উপায় নেই। এক একটা সিগন্যাল এমন ডট বল খেলাচ্ছে যে কোচের সঙ্গে আরোহী আমরা দুজন টেনশনে পড়ে যাচ্ছি –এ তো আজ নির্ঘাত মিস করবে। জানলাম একাত্তরের জয়ের সুবাদে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে আলাপ থাকলেও সোনিয়াকে একেবারেই চেনেন না।

ড্রাইভারকে ঠিক এই সময় ওয়াদেকার বললেন , “ভাই ,গাড়িতে ন্যাকড়া আছে ? ” সে পেছনের সিট থেকে ওটা বার করা মাত্র পেঁচিয়ে তিনি গাড়ির জানলা খুলে দিলেন। আর ওটাকে দোলাতে দোলাতে চিৎকার শুরু করলেন , “যেতে দাও যেতে দাও। সোনিয়াজি সোনিয়াজি। ”

আমরা পেছনের সিট থেকে কোরাস তুললাম ,সোনিয়াজি সোনিয়াজি । ভাৰতীয় কোচের এই কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক সাজা খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিল। পতাকার মতো ওই ন্যাকড়া দোলানো আর সোনিয়াজি চিৎকার শুনে রাস্তা ছেড়ে দিল পুলিশ। চূড়ান্ত বিপদসীমার মিনিটপাঁচেক আগে বিমানবন্দর পৌঁছে গেলেন ওয়াদেকর।

ফেরার সময় আমার আর দেবাশিসের গাড়িতে হাসি বন্ধ হচ্ছে না। হাসছে এতক্ষণ প্রচন্ড চাপে থাকা চালকও ।

আজ এতবছর পর মনে হয় বিপর্যয়ের মধ্যে আশ্চর্য আত্মরক্ষার এই কাহিনীতে জীবনশিক্ষাও রয়েছে। এক ,খোদার ওপর খোদকারি করতে যেয়ো না। তুমি যে-ই হও অতর্কিত সমস্যা তোমায় যখনতখন আক্রমণ করতে পারে। দুই ,সমস্যা থেকে গোয়ার্তুমি করে বা ইগো দেখিয়ে বেরোনো যায় না। সংকটে মনকে শান্ত রেখে ,বহির্বিশ্বকে দোষারোপ না করে উদ্ভাবনী কিছু নিজেকেই বার করতে হয়।

আমি নীতিশ রেড্ডিকে পেস বোলিং অলরাউন্ডার বানাবো। হর্ষিত রানাকে কপিল দেবকে ভাববো। অশ্বিনকে ডিলিট করে ওয়াশিংটন সুন্দরকে ভাববো ওয়াশিংটনের হাইওয়ে তুমি। সেনাবাহিনীর পরিবার আমার পছন্দ বলে ধ্রুব জুয়েলকে ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার ধরে নেবো –এগুলো খোদার ওপর খোদকারি। গ্রেগ চ্যাপেল পারেননি তো গম্ভীর কোন ছার। কিন্তু বিপন্নতায় নম্রতার সঙ্গে উদ্ভাবন সেটা কি পারবেন ?

সন্দেহ হয়। দুজনেই বাঁহাতি। দুজনেরই আনুগত্য প্রশ্নাতীত। দুজনেই অসম্ভব সাহসী।

কিন্তু একজন দাদারের মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া পড়াশোনা এবং বিশেষ করে অঙ্কে খুব বুৎপত্তিসম্পন্ন মগজ।

অন্যজন বিত্তবান ব্যবসায়ী পরিবেশে ছোটবেলা থেকে ‘না ‘শোনার অভ্যেস না নিয়ে বড় হওয়া পাঞ্জাবি হৃদয়।

সেই মনের পক্ষে ‘ বিরাটজি -রোহিতজি ‘ ডাকের নম্রতায় নামা সম্ভব ! !

অন্য খবর দেখুন

Read More

Latest News