চুরির পরিকল্পনা হচ্ছে, চুরি হওয়ার আগেই বলা যায়, বলা উচিত। রাতে চৌকিদারেরা জাগতে রহো বলে হাঁক পাড়েন, সে কি কোনও চোরকে দেখে? কিন্তু সামান্যতম আভাস পেলেই তার কর্তব্য গৃহস্থকে সাবধান করে দেওয়া। হ্যাঁ, আমাদেরও সেটাই কাজ। আজ ভারতবর্ষের সুখ সমৃদ্ধি, শান্তি সম্পদ কেড়ে নেওয়ার এক যজ্ঞ আমরা দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে। যে রাম আর রহিমে একই জমিতে প্রার্থনা আর আজান দিত আজ সেই জমিতে ফাটল ধরাতে পেরেছে এক বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক শক্তি। আর ঠিক সেই সময়ে একজন সাংবাদিক কেবল তার বস্তুগত নিরপেক্ষতা নিয়ে কাজ করে যাবে তা হয় না, তাকে পক্ষ নিতেই হবে, তাকে এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে। আমরা কলকাতা টিভির সাংবাদিকরা, সংবাদকর্মীরা সেই কাজ লাগাতার করে যাচ্ছি, আমরা খুব স্পষ্টই জানিয়েছি কোনও নিরপেক্ষতার ভনিতা নয়, আমরা সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরতন্ত্রের বিরোধী, আমরা দেশের বহুস্বর আর সংবিধান নিয়েই বাঁচতে চাই। কাজেই এই প্রায়ান্ধকার সময়ে ঘোলা জলে মাছ ধরার যে কোনও পরিকল্পনাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে, সেটা আমদের দায়িত্ব। এই দুঃসময়ে কারা মানুষের পক্ষে, কারা দেশের পক্ষে, সংবিধানের পক্ষে কারা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বজায় রাখার পক্ষে? কারা বাংলা সংস্কৃতির পক্ষে? কারা আমার এই বাংলার মানুষের পক্ষে তা সাফ জানানোর সময় এসেছে বইকী। সেই দায় থেকেই জানাচ্ছি যে এই বাংলার অন্তত চারজন ইউটিউবারের জন্য নাকি ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তাঁরা নাকি বরাতও পেয়ে গেছেন এবং কাজে নেমেও পড়েছেন। তাঁদের নেতৃত্বে রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় দুজন করে ইউটিউবার কাজ করবে। কাজ তো সোজা, ঘৃণা ছড়াও, মিথ্যে বলো, অপপ্রচার করো। সেটাই বিষয় আজকে, বিজেপি ২০২৬-এর আগে চার জন ইউটিউবারকে যাবতীয় অপপ্রচারের দায়িত্ব দিয়েছে।
অবাক হতে হয় কিছু সুশিক্ষিত মানুষের এমন অমানুষোচিত ব্যবহার দেখে। হ্যাঁ, আমি ওই চার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউটিউবারের কথাই বলছি। এঁদের একজন বড় সাংবাদিক ছিলেন, নামডাক ছিল, কলমখানাও ছিল চমৎকার, সে বাজারে করে কম্মে খাচ্ছিলেনও ভালোই, কিন্তু এক উদগ্র লোভ তেনাকে আরও দাও মোরে আরও দাওয়ের লাইনে ঠেলে দিল, পেডিগ্রিওলা চোর নয়, অতএব ছড়ালেন, জেলেও গেলেন।
আরও পড়ুন: Aajke | দিলীপ আসছে, শুভেন্দু কাঁপছে
শুনেছি মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়ে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফিরে এসেছিলেন মাঠে, লোকসভা ভোটের আগে বাংলার মানুষের মধ্যে যতটা পারা যায় অপপ্রচারের কাজ করেছিলেন, গোটা ৩০ আসন তো বিজেপি পাচ্ছেই বলার পরে বিরোধী দলনেতা নাকি তাঁকে কলকাতায় আর একটা ফ্ল্যাট কিনে উপহার দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তাঁর আপাতত কলকাতায় ৩টে আস্তানা আছে। তারপরে যা হয়েছে আমরা জানি, তিনি এবারে তাঁর সমস্ত সামর্থ্য নিয়েই মাঠে নেমেছেন এইজন্যে নয় যে তাঁকে ফ্ল্যাট দেওয়া হবে, এইজন্যেও নয় যে এই বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য ১০ কোটি বরাদ্দ হয়েছে, বরং এইজন্য যে উনি আর জেলে ঢুকতে চান না, কাছের লোকজনদের বলেছেন যে বয়স হয়েছে, সর্বাঙ্গে অসুখ, এরমধ্যে আবার জেলযাত্রা সইবে না, তারচেয়ে দালালি ভালো। বাকি তিনজন বাংলার পরিচিত তিন বিজেপি লালিত ইউটিউবার। এখন আপনারা বলতেই পারেন যে রাজনৈতিক প্রচারে অংশ নেওয়াতে অসুবিধেটা কোথায়? একফোঁটাও অসুবিধে নেই, কিন্তু সেই প্রচার করতে গিয়ে এই আহাম্মকেরা দুটো কাজ করছেন যা নিয়ে আপত্তি আছে বইকী। ১) এক তীব্র সাম্প্রদায়িক ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করে বাংলার সমাজটাকে টুকরো করার কাজ করছেন। ২) সারা দেশ, বিশ্বের কাছে বাংলা, বাঙালির এক ছবি তুলে ধরছেন যা ভয়ঙ্কর, প্রতিটা মিথ্যে দিয়ে এক ডাকিনী যোগিনীর ছবি আঁকার চেষ্টা করছেন তাঁরা, এক পিশাচ নৃত্যের মধ্যে আছে আমাদের বাংলা এমন ছবি তুলে ধরছেন যেখানে প্রকাশ্যে রোজ হাজারে হাজারে নারী ধর্ষিতা হচ্ছেন, পুলিশ প্রশাসনের হাত ধরেই সেই অন্যায় হচ্ছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট সব কিছু শেষ হয়ে গেছে, শিল্প নেই, আর আসবেও না। কোনও একটা সামান্য ভালোর কথা তাঁরা বলছেন না যেন এক শত্রু শিবিরের বর্ণনা দিচ্ছেন তাঁরা, এই বাংলা তাঁদের মাটি জল হাওয়া দেয়নি, এই বাংলাতে তাঁদের জন্মই হয়নি, হলে এরকম প্রচার তাঁরা করতে পারতেন না। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেলে সমাজ মাধ্যমে বাংলার এক বিকৃত ছবি তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিদিন বাংলাকে এক নরককুণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, আপনারা এই প্রচারে কতটা বিশ্বাস করেন? যারা এই প্রচার করছে তাঁরা কি বাঙালি? আপনাদের মতামত জানান। শুনুন আমাদের দর্শকরা কী বলেছেন।
একধারে ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দিয়ে চারিদিকে দুর্নীতি চলছে এমন এক প্রচার করা হচ্ছে। সেই দুর্নীতিবাজদের মধ্যে যাঁরা বিজেপিতে চলে যাচ্ছেন, তাঁরা এক্কেবারে ধোওয়া তুলসিপাতা হয়ে যাচ্ছেন। প্রায় সবকটা টিভি চ্যানেলকে কিনে এক টোয়েন্টি ফোর ইন্টু সেভেন প্রচারে বলা হচ্ছে বাংলা শেষ, বাঙালি শেষ। এর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে অবিরাম মিথ্যে প্রচার তো আছেই। এসবের মধ্যে নতুন করে এক ইউটিউবার গ্রুপ মাঠে নামছে ২০২৬-এর খেলা বিজেপির দিকে ঘোরাবার জন্য, আমাদের দায়িত্ব ছিল সেই খবর জানিয়ে দেওয়ার, জানিয়ে দিলাম। সতর্ক হন, সতর্ক করুন।
দেখুন খবর: