skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollAajke | প্রসূতি মৃত্যু, গাফিলতি কার? ডাক্তারবাবুরা কতখানি দায়ী?
Aajke

Aajke | প্রসূতি মৃত্যু, গাফিলতি কার? ডাক্তারবাবুরা কতখানি দায়ী?

এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এই মৃত্যুর জন্যে ওই ডাক্তারদের গাফিলতি কি অস্বীকার করা যাবে?

Follow Us :

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি মৃত্যু, তার কারণ নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠে এসেছে। আবার এক মেডিক্যাল কলেজে এই মৃত্যু, আরও তিনজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই এক রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠবে, উঠেছেও। সিপিএম ফায়ারব্র্যান্ড, আগুনপাখি মীনাক্ষী রাত জাগছেন ওই প্রসূতির আত্মীয়াদের সঙ্গে, মিছিল হবে, জমায়েত হবে। রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, এই দাবিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া হবে। এগুলো খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে হাজির যা আমার মনে হয় খোলসা করে বলা উচিত। প্রথম যে কারণটাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, বা বলা ভালো যে কারণের কথা বলা হচ্ছে তা হল রিঙ্গার্স ল্যাকটেট বা আরএল স্যালাইন। এটা কী? আমাদের শরীরে খাবার বা পটাশিয়াম ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি বাইরে থেকে দিতে হলে সরাসরি ফ্লুইড দেওয়া হয়, আমরা চলতি কথায় একে স্যালাইন বলি, এই রিঙ্গার্স ল্যাকটেট-এ ল্যাকটেটটা হল খাবার আর এর সঙ্গে পটাশিয়াম থাকে, এটাকেই ওই আরএল স্যালাইন বলা হয়, যা কিডনি ফেলিওর ইত্যাদি ক্ষেত্র ছাড়া বহু ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় এবং ওই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই সেদিন ওই প্রসূতি বিভাগ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে এই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে, আমার এক সূত্র বলছে তার সংখ্যা নাকি ৩৭ বা তার উপরে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে যদি সেই বিশেষ দিনে সারা পশ্চিমবাংলার সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের হিসেব নেওয়া হয়। তাহলে প্রশ্ন হল ওই ৫ জন কেন অসুস্থ হবেন। এবং তাদের রেনাল ফেলিওর হয়েছে বলেই খবর পাচ্ছি, ডায়ালিসিস করানো হচ্ছে, দু’জনের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। কিন্তু প্রশ্ন তো থেকেই যাবে যে কেন পাঁচজন? আরএল স্যালাইনে কন্টামিনেশন ছাড়া মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় নেই, একটা গোটা ব্যাচে যদি তেমনটা হয়ে থাকে তাহলে পাঁচজনের অসুস্থতা বা মৃত্যু আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। তাই সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, প্রসূতি মৃত্যু। গাফিলতি কার? ডাক্তারবাবুরা কতখানি দায়ী?

বহু কাগজে এমনকী ওই বিপ্লবীরাও যখন রিঙ্গার্স ল্যাকটেট স্যালাইনকেই কাঠগড়াতে দাঁড় করাচ্ছেন তখন এই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে যদি ওই স্যালাইনের কারণেই অসুস্থতা বা মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে বাকি রোগীদের ক্ষেত্রে তা দেখা গেল না কেন? উত্তর জানি না, কিন্তু প্রশ্নটা তো থাকবেই। আসুন এরপরে যে প্রশ্ন উঠছে তা হল চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল কি? সারা বিশ্বের স্বীকৃত নিয়ম হল একজন সিনিয়র, সিনিয়র মানে পোস্ট গ্রাজুয়েট পাশ করা সেই বিষয়ের ডাক্তারের নির্দেশে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনিরা এই ধরনের অপারেশন করতে পারেন, কিন্তু এক্ষেত্রে কী হল?

আরও পড়ুন: Aajke | কাঁথির খোকাবাবুর পায়ের তলার মাটি কেটে নিচ্ছে তৃণমূল

১) যিনি অ্যানেস্থিশিয়ার দায়িত্ব নিলেন তিনি প্রথম বর্ষের পিজিটি, মানে পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি। ২) যাঁরা ওই সিজার করছিলেন তাঁরা প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের দুজন তৃতীয় বর্ষের, একজন প্রথম বর্ষের ট্রেনি। এই জুনিয়র ডাক্তারদের ৭ জনের টিম বুধবার রাত পৌনে ১১টা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৭টা পর্যন্ত এই আট ঘণ্টায় সাতজন প্রসূতির সিজার করেছেন, যাঁদের মধ্যে একজন মারা গেছেন, চারজন গুরুতর অসুস্থ, যদিও এঁদের ৭ জনকেই এই স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। এবং সেই সময়ে কোনও সিনিয়র ডাক্তার হাজিরই ছিলেন না। কেন ছিলেন না? জানা নেই। এরপরে দেখা যাচ্ছে প্রসূতির পরিবারদের দিয়ে একটা মুচলেকা লেখানো হয়েছে, মুচলেকা মানে বন্ড, যাতে বলা হচ্ছে রোগীর মৃত্যু হতে পারে জেনেও তাঁরা এই চিকিৎসায় সম্মতি দিচ্ছেন। তলায় এই রিঙ্গার্স ল্যাকটেটের ব্যাচ নম্বর ইত্যাদি লেখা আছে। এটা খুব সন্দেহজনক ব্যাপার, কারণ, স্যালাইন দেওয়ার জন্য মুচলেকা বা বন্ড দেওয়ার কোনও কথাই নয়, কোথাও এ ধরনের মুচলেকা নেওয়া হয় না। তাহলে এক্ষেত্রে মুচলেকাটা নেওয়া হল কেন? সবথেকে বড় কথা হল, ওই মুচলেকা কখন নেওয়া হয়েছে, ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে তড়িঘড়ি এসকেপ রুট তৈরির জন্যই এই মুচলেকা নেওয়া হয়েছিল কি? সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী। তিনি বলেন, “এটা ঠিক এরকম মুচলেকা লেখানো হয়েছিল। যা সম্পূর্ণ গর্হিত ব্যাপার, ওই আরএলে কিছু সমস্যা হতে পারে সেটা কেউ জানলই বা কী করে! যথেষ্ট সন্দেহর। এরকম মুচলেকা লেখানো আগে দেখিনি। রাজ্যের তদন্ত কমিটি নিশ্চয়ই এ ব্যাপারেও রিপোর্টও দেবে। এই গোটা ঘটনাই দুঃখজনক।” এক সূত্র জানাচ্ছে যে অসম্ভব রক্তক্ষরণ হয়েছিল প্রত্যেকেরই, চিকিৎসায় ত্রুটির জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। আরএল খুব বড় ফ্যাক্টর এখানে নয়। প্রতি পদে অনিয়ম হয়েছে। নার্সরা বিষয়টি জানেন। কাজেই ওই এক আরএল স্যালাইনকে ভিলেন বানিয়ে তার আড়ালে কারা লুকোতে চাইছেন সেটা বার করা দরকার। যাঁদের হাতে চোখ বুজে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হবে সেই ডাক্তারবাবুদের গাফিলতিতে মানুষ মারা গেলে তাঁদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। এবং মজার ব্যাপার হল, আরএল নিয়ে, আরও নানান বিষয় নিয়ে আবার চাগিয়ে ওঠা জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন কিন্তু চিকিৎসায় গাফিলতির এই সম্ভাব্য দিকগুলো নিয়ে চুপ করে বসে আছেন। আমরা আমদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তারদের ছাড়াই ৭ জনের জুনিয়র ডাক্তারের এক টিম অপারেশন করলেন, এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এই মৃত্যুর জন্যে ওই ডাক্তারদের গাফিলতি কি অস্বীকার করা যাবে? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।

চিকিৎসা শাস্ত্র অভ্রান্ত নয়, চিকিৎসা পদ্ধতিও অভ্রান্ত নয়, বিভিন্ন কারণে চিকিৎসা চলাকালীন বা চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যু হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যদি তা জাল ওষুধের জন্য হয়, যদি তা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর জন্য হয় এবং বিশেষ করে যদি তা ডাক্তারবাবুদের গাফিলতির জন্য হয় তাহলে তারচেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতেই পারে না। রোগী ডাক্তারবাবুর কাছে প্রাণ ফিরে চায়, সেই মানুষেরাই যদি মৃত্যুর কারণ হয় তাহলে তা এক আতঙ্কের জন্ম দেবে। খুব শিগগির আসল কারণ সামনে আসুক, এই আশা তো আমরা করতেই পারি।

RELATED ARTICLES

Most Popular