নমস্কার আমি অদিতি, শুরু করছি কলকাতা টিভির আর নতুন নয়, ইতিমধ্যেই ৬৫টা এপিসোড হয়ে গেছে,হাজির আমাদের অনুষ্ঠান নিয়ে, সাদা কালো। একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আজকের বিষয়, গলা টিপে মারবেন দিলীপ ঘোষ।
শুক্রবার খড়গপুর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর সাংসদ থাকাকালীন তহবিলের টাকায় তৈরি রাস্তা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। তখনই স্থানীয় এক মহিলা দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করেন। বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, “যখন রাস্তার সমস্যা ছিল তখন কোথায় ছিলেন?” এই প্রশ্নেই মেজাজ হারান দিলীপ। পাল্টা বলেন, “কারও বাপের টাকায় করিনি রে। টাকা দিয়েছি।” এরপরেই বিক্ষোভকারী ওই মহিলা বলেন, “আপনি বাপ তুলে কেন কথা বলছেন? আপনি এমপি হয়ে বাপ তুলে কথা বলতে পারেন?” পালটা জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, “বেশ করেছি। চোদ্দোপুরুষ তুলব। গলা টিপে দেব।” পরে সাংবাদিকদের দিলীপ বলেন, “এরা হচ্ছে ঘেউ ঘেউ করবে। কোনও বিক্ষোভ নেই। আমি বলেছি, আমি টাকা দিয়েছি। আমি উদ্বোধন করতে আসব। এতদিন কেন এই রাস্তা হয়নি? সেই প্রশ্ন করার হিম্মত নেই। এরা হচ্ছে ওই সুবিধাভোগী। ৫০০ টাকা নিয়ে ঘেউ ঘেউ করে। আমি বলেছি, আমার বাপের টাকা। বলুক কার বাপের টাকা? দিলীপ ঘোষ বাপ তুলেই বলবে। যারা ঘেউ ঘেউ করবে তাদের বাপ তুলেই বলবে। কাজ করতে পারে না। কাজ করে উদ্বোধন করছি, আবার ঘেউ ঘেউ করছে? হিম্মত হয় কী করে! এই ৫০০ টাকার চাকররা এরা কিছু করতে দেয় না। ঘেউ ঘেউ করে।” কী ভাবছেন? কোনও কারণে তাঁর মাথা গরম ছিল, মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে? অমন ভাববেনও না, মানুষটির নাম দিলীপ ঘোষ। শুক্রবারের ঘটনার পরই শনিবার সাতসকালে খড়্গপুরের শহরের বোগদাতে চা-চক্র থেকে মেদিনীপুরের প্রাক্তন সংসদ তথা বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ আবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “বেশি বেয়াদবি করলে, ছ্যাবলামি করলে…বাড়িতে ঢুকে মারব…চৌরাস্তায় টেনে এনে মারব!” এটাই সেই বিজেপি টাইপ যারা বিজেপিতে এখন প্রথম সারিতে। আচ্ছা এই কথা স্বপ্ন দাশগুপ্ত বলতে পারবেন? বলতে পারবেন শমীক ভট্টাচার্য এমনকী সুকান্ত মজুমদার? না, জমানা এখন বুলডোজার রাজনীতির, বিজেপি ক্ষমতার কাছাকাছি এসেই তার যাবতীয় মুখোশ খুলে সেই বুলডোজার পলিটিক্স শুরু করেছে, আর সেই পলিটিক্সের পোস্টার বয় উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ, বাংলার দিলীপ ঘোষ, তেলঙ্গানার বন্দি সঞ্জয়, ওড়িশার সম্বিত পাত্র, দিল্লির রমেশ বিধুরি, কর্নাটকের তেজস্বী সূর্য তামিলনাড়ুর কে আন্নামালাই। হ্যাঁ, এরাই এখন দলের চেহারা, বাংলায় সেই দায়িত্ব নিয়ে কাড়াকাড়ি চলছে, শুভেন্দু বলছেন আমি, দিলীপ বলছেন, দুউউস আমিই আছি। এবারে আসুন অন্যদিক থেকে বিষয়টাকে দেখা যাক।
আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো ।| বিজেপি ভোট পেরোলেই বোমভোলা
দিলীপ ঘোষ সাংবাদিকদের অন রেকর্ড বলেছেন, “এরা হচ্ছে ঘেউ ঘেউ করবে। কোনও বিক্ষোভ নেই। আমি বলেছি, আমি টাকা দিয়েছি। আমি উদ্বোধন করতে আসব। এতদিন কেন এই রাস্তা হয়নি? সেই প্রশ্ন করার হিম্মত নেই। এরা হচ্ছে ওই সুবিধাভোগী। ৫০০ টাকা নিয়ে ঘেউ ঘেউ করে। আমি বলেছি, আমার বাপের টাকা। বলুক কার বাপের টাকা? দিলীপ ঘোষ বাপ তুলেই বলবে। যারা ঘেউ ঘেউ করবে তাদের বাপ তুলেই বলবে। কাজ করতে পারে না। কাজ করে উদ্বোধন করছি, আবার ঘেউ ঘেউ করছে? হিম্মত হয় কী করে! এই ৫০০ টাকার চাকররা এরা কিছু করতে দেয় না। ঘেউ ঘেউ করে।” উনি খড়্গপুরের সাংসদ ছিলেন, সেখানকার মানুষের ভোটে জিতেছিলেন, সে আসন বিজেপি ধরে রাখতে পারেনি, নতুন প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল হেরেছেন, কিন্তু প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে, রাজ্যের একজন অন্যতম রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি সেখানে যেতেই পারেন, কিন্তু যে ভাষা এই রাজ্যের বিরোধী শিবিরে থেকেও রাখছেন তা বলে দেয় জামানা পাল্টালে কারা আসবে এই রাজ্যে? বিরোধী দলনেতা সাফ বলে দিয়েছেন যে ওনারা ক্ষমতায় এলে সংখ্যালঘু বিধায়কদের চ্যাংদোলা করে বিধানসভার বাইরে ফেলে দেবেন, প্রাক্তন সাংসদ বলছেন গলা টিপে মেরে দেব, ঘরে ঢুকে মেরে আসব। এবং খেয়াল করুন এগুলো ওই তাপস পালের মতো ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেবর মতো কথা নয়, যে কথা বলে তাঁকে দলকে শরীর খারাপ, নার্ভের ওষুধ খায়, মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলোর মতো অন্তত কিছু অজুহাত খাড়া করে বোঝানোর চেষ্টা হয় যে এসব বলা উচিত নয়। বিজেপির ব্যাপারটাই আলাদা, ওনারা বলছেন দেশ কে গদ্দারো কো, গোলি মারো, প্রকাশ্যেই বলছেন, মিছিল করে স্লোগান দিচ্ছেন, না ভুল হয়েছে বলছেন না, বলছেন টুকরে টুকরে গ্যাং, সংখ্যালঘু মুসলমানদের বলছেন আওরঙ্গজেব কা আওলাদ, বলছেন দেশে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে থাকতে পারে না, বলছেন গডসে দেশপ্রেমিক, না কোথাও ক্ষমা চাইবার প্রশ্নই নেই। তাকিয়ে দেখুন উত্তরপ্রদেশের দিকে, সেখানে একজন হিন্দু বাড়িওলার বিরুদ্ধে মিছিল হচ্ছে রাস্তায়, কারণ সে একজন সংখ্যালঘুকে তার বাড়ি ভাড়া দেবে বলেছে, সেখানে ধর্মীয় উৎসব পালনের সময়ে নয়, সারা বছর দোকানের উপরে মালিকের পুরো নাম লিখতে বলা হয়েছে, যাতে সেই দোকান কোন ধর্মের শুধু নয়, কোন জাতের তাও বোঝা যায়। ওই উত্তরপ্রদেশেই রং খেলবে না বলে গুলি করে মারা হচ্ছে, বিহার, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানেও একই ঘটনা ঘটছে। আমাদের বাংলাকেও তারা ওই নরক বানাতে চায়। দিলীপ ঘোষ বা শুভেন্দু অধিকারীর এই কথাগুলো তারই ইঙ্গিত বহন করে। সাধু সাবধান, এখন থেকে সাবধান না হলে হয় গলা টিপে মারবে না হলে গলায় দড়ি দিয়ে মরতে হবে।