skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | কলকাতা বনাম মুম্বই, শান্তি বনাম অশান্তি
Aditir Songe Sada Kalo

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | কলকাতা বনাম মুম্বই, শান্তি বনাম অশান্তি

সারা দেশের মধ্যে আমাদের কলকাতাতে সবথেকে কম অপরাধের ঘটনা ঘটেছে

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। একধারে পতৌদির নবাব বংশ, অন্যধারে ঠাকুর পরিবার, এবং নিজের যথেষ্ট ভালো ফিল্ম ক্যারিয়ার, সব মিলিয়ে সইফ আলি খান তো সাধারণ ভেলু পচা নন, এমনকী মধ্যবিত্ত ঘোষবাবু, ব্যানার্জিবাবুও নন। তিনি সইফ আলি খান, তাঁর বাড়িতে রাতে ঢুকে পড়ল চোর, হ্যাঁ এখনও তো চুরিটাই মোটিভ বলে জানা যাচ্ছে, মানে অন্য কোনও মোটিভের খবর, আরও কোনও উদ্দেশ্য তো এখনও আমরা জানি না। শহরের সুরক্ষা ব্যবস্থা, পুলিশ ইত্যাদির কথা বাদই দিলাম, তাঁর বাড়িতে কি কম সুরক্ষা ছিল? মানে সেখানেও তো ২৪ ঘণ্টা কড়া প্রহরা থাকে বলেই তো জানি। এ তো অ্যাপার্টমেন্ট নয়, বিশাল প্রাসাদ, সেখানে চোর ঢুকল, এক কড়োর দে দো বলল, তারপরে সইফ আলি খান ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং তাঁকে ছ’ ছ’ বার ছুরি চালিয়ে আহত করে, সিসিটিভির দিকে তাকাতে তাকাতে সেই চোর পালিয়ে গেল। রুকো জরা, সবুর করো, এরপরে সেই পতৌদির নবাবের বডি থেকে রক্ত ঝরছে, সইফ আলি খানকে অটোতে করে ২ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল, তাঁর বাড়িতে কম সে কম ১০টা দেশি বিদেশি গাড়ি তো ছিল কিন্তু নাকি ড্রাইভার ছিল না, তাই অটোই ভরসা। তিনি এখন বিপন্মুক্ত।

কিন্তু প্রশ্ন তো উঠবেই, অমন হাই সিকিউরিটি জোনে এমন ব্রিচ অফ সিকিউরিটির। এদিকে কলকাতা শহরের মধ্যেই আর এক হাই সিকিউরিটি জোন আরজি কর হাসপাতালের মধ্যে ঢুকে এক সিভিক ভলান্টিয়ার, সে এক অর্থে পুলিশ, ধর্ষণ এবং হত্যা করেছে একজন মহিলা ডাক্তারকে, অন্তত এখনও পর্যন্ত সেই একমাত্র অভিযুক্ত। মহিলার ধর্ষণ আর খুন আমাদের হাড় কাঁপিয়ে দেয়, অন্যদিকে সইফ আহত, ঘটনায় বহু রহস্য, তাই সে ঘটনা এক হিন্দি মেনস্ট্রিম সিনেমার রোমাঞ্চ জাগায়। কিন্তু এই এক্কাদোক্কার হিসেব থেকে বেরিয়ে আমরা যদি একটা কমপ্যারিজনে যাই, যদি আমরা বোঝার চেষ্টা করি একটা সময়কাল ধরে কেমন আছে আমার শহর, কল্লোলিনী তিলোত্তমা আর কেমন হাল আরব সাগরের তীরে আমাদের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বইয়ের, তাহলে কী পাব? কলকাতার নারী সুরক্ষা নিয়ে মুম্বইতেও মোমবাতি মিছিল হয়েছে এই ক’দিন আগে, মোমবাতি নিয়ে হেঁটেছেন বিশ্বের প্রায় সব অংশে থাকা সংবেদনশীল মানুষজন, কই মুম্বই নিয়ে তো তেমন কিছু হয়নি? এরকম এক যুক্তিতে কলকাতাকে সত্যিই মনে হয় এক অসুরক্ষিত শহর, কিন্তু আসুন অন্যদিক থেকে, হাতে যা পরিসংখ্যান আছে তা থেকে সত্যিটা বোঝার চেষ্টা করি।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | রোগীমৃত্যু, ডাক্তারবাবু, ওষুধপত্র আর পরিকাঠামো নিয়ে বহু প্রশ্ন

২০২২ পর্যন্ত পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, কোথা থেকে? ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরো অফ ইন্ডিয়া, এনসিআরবি-র তথ্য থেকে। এবারে আপনি বলতেই পারেন যে ওই তথ্য আপনি মানেন না, মানেন না তো মানেন না, কারণ ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের দেওয়া এই তথ্য ছাড়া আর তো কোনও তথ্য নেই। তাতে জানানো হচ্ছে, ২০২২ সালে আমাদের দেশের বড় শহরগুলোর মধ্যে সব থেকে বেশি অপরাধ ঘটেছে দিল্লিতে। কাদের পুলিশ? না, না, কেজরিওয়াল সরকারের হাতে পুলিশ নেই, ইউনিয়ন গভর্নমেন্টের হাতে পুলিশ আছে, মাথায় কে? অমিত শাহ, সেখানে ২০২০-তে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৪৪৩টা অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, ২০২১ সালে ৩ লক্ষ ৩ হাজার ২৯৩টা ঘটনা আর ২০২২-এ ৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৫৫৫টা অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এবারে আসুন বচ্চন, সলমন, শাহরুখ, সইফ আলি খানের শহর মুম্বইতে। সেখানে ২০২০-এ ৫৮ হাজার ৬৭৬টা ঘটনা ঘটেছিল, ২০২১-এ ৭৮ হাজার ৮৮২টা আর ২০২২-এ ৮৯ হাজার ৯৮টা অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল। এবার আসুন আমার শহরের হিসেবে, কলকাতায় ২০২০-তে ১৮,২৭৭টা অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল, ২০২১-এ ১৪,৫৯১টা আর ২০২২-এ ১২,২১৩টা অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল।

এই হিসেব বলছে, সারা দেশের মধ্যে আমাদের কলকাতাতে সবথেকে কম অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। হ্যাঁ, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা, সিনিয়র সিটিজেনদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা, সাইবার ক্রাইম বা শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনার ক্ষেত্রেও ছবিটা এক। দিল্লি, যেখানে সুরক্ষার দায়িত্বে আমাদের ছোটা মোটা ভাই অমিত শাহ আছেন, সেখানেই ঘটে চলেছে সবথেকে বেশি অপরাধের ঘটনা, মুম্বইতেও কম নয়, কিন্তু কলকাতায় সবথেকে কম। তাহলে কাকা, এই ইস্যুতে একটা মোমবাতি মিছিল হয়ে যাক, হ্যাঁ এটা ঠিকই যে একটাও ঘটনা যেন না ঘটে, আমরা তো সেটাই চাইব। কিন্তু সারা দেশের মধ্যে আমাদের রাজ্যে অপরাধের হার সবথেকে কম, আমাদের শহর সবথেকে নিরাপদ, এই খবরটাও তো জানানো দরকার, জানাতে তো হবেই যে আমরা ভালো আছি।

RELATED ARTICLES

Most Popular