skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | প্রেম করবেন? বিজেপির পারমিশন চাই
Aditir Songe Sada Kalo

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | প্রেম করবেন? বিজেপির পারমিশন চাই

কেবল এই কারণেই তো এই বাংলাতে বিজেপির উবে যাওয়াটা বাঞ্ছনীয় তাই না?

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। দশরথের তিন রানির কথা তো আমরা জানি কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে বলা আছে তিনি শতসহস্র বিয়ে করেছিলেন। কেবল দশরথ কেন আমাদের পুরাণ কাব্য, মহাভারত রামায়ণে প্রেম আর ভালবাসা একদিকে অন্যদিকে সম্পত্তি আর যুদ্ধের লড়াই। সে সবই তো কাহিনি। কিন্তু সে কাহিনিতে সে সময়ের সমাজের ছবি তো থাকবেই, কল্পনায় হয়তো পুষ্পক রথ ওড়ানো গেছে, প্রকাণ্ড পাখিকে দেখে ওড়ার ইচ্ছে কার না হয়, কিন্তু বিয়ে শাদি প্রেম ভালবাসা সন্তান পরিবার? এসবের ছবি কিন্তু ছত্রে ছত্রে। পুরাণ ছেড়েই দিন সংস্কৃত সাহিত্যই পড়ুন না, যাও মেঘ বলো তারে যেমন আছে তেমনি পরস্ত্রীকে দেখেই প্রেমে পড়াও আছে, এক চোর পরপুরুষের জন্য উথলে ওঠা প্রেমও আছে। হুদো হুদো বিবাহ বহির্ভূত প্রেম আছে এমনকী লিভ ইনও আছে। মানে বিয়ে না করেই তাঁরা থেকে যাচ্ছেন প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবেই। আর সেই রামায়ণ মহাভারত বা আর বাকি পুরাণ কাহিনি বা সংস্কৃত সাহিত্যের সেই গৌরবজ্জ্বল হিন্দু অধ্যায় নিয়ে যদি গর্ব করতেই হয়, তাহলে তার এইসব অনুষঙ্গ বাদ যাবে কেন ভাই? বাদ যাবে কেন স্মরগরল খণ্ডনং, মম শিরসি মণ্ডনং, দেহি পদপল্লবমুদারং’ (গীতগোবিন্দ) মুরারি রাধিকাকে বলছে, হে প্রিয়ে! কামবিষ-বিনাশক আমার শিরোভূষণ তোমার ঐ পরম সুন্দর পদপল্লব এই মস্তকে স্থাপন কর আমার অন্তর দারুণ মদনানলে জ্বলিতেছে, তোমার চরণ স্পর্শে সে বিকার দূরীভূত হউক।। বা ধরুন চন্ডীদাস বলছেন,

রাধার কি হৈল অন্তরের ব্যথা, বসিয়া বিরলে থাকয়ে একলে না শুনে কাহারো কথা ||

সদাই ধেয়ানে  চাহে মেঘ-পানে না চলে নয়ান-তারা |

বিরতি আহারে রাঙাবাস পরে যেমত যোগিনী-পারা ||

এই পদ হল পূর্বরাগ পর্যায়ের, খানিকটা লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইটের পরের হাল। তো এসব আছে রে বাবা আমাদের কোট আনকোট হিন্দু শাস্ত্র, পুরাণ, সংস্কৃত সাহিত্যে, বৈষ্ণব পদাবলীতে এমন কাঁড়ি কাঁড়ি পদ আছে যা আজকের ছেলেমেয়েরাও মুখে আনার আগে দু’বার ভাববে। এবং আমার মনে হয় এটাও ছিল হিন্দু সমাজ।

আরও পড়ুন: বেকসুর খালাস হয়ে যেতে পারে আরজি কর মামলায় দোষী সঞ্জয় রায়?

এবারে আসুন ব্যাপারটা বিজেপির দিক থেকে দেখা যাক। উত্তরাখণ্ডে চালু হয়েছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। আর এই বিধির লিভ ইন সম্পর্কে থাকা যুগলদের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। রাজ্য সরকারের নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও যুগল লিভ ইন সম্পর্কে থাকতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এই রাজ্যে লিভ ইন করতে গেলে পুরুষ এবং মহিলা দু জনকেই একটি ১৬ পাতার ফর্ম ভরে সরকার এবং প্রশাসনের কাছে নিজেদের খুঁটিনাটি তথ্য জমা দিতে হবে৷ শুধু তাই নয়, কোনও বাড়িওয়ালা লিভ ইন সম্পর্কে থাকা যুগলকে ঘর ভাড়া দিলেও সেক্ষেত্রে তাদের লিভ ইন রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট যাচাই করতে হবে। আর তা ব্যর্থ হলেই সংশ্লিষ্ট বাড়িওয়ালাকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। এমনই নির্দেশ জারি করেছে রাজ্যটির সরকার।

নির্দেশে বলা হয়েছে, বাড়ির মালিকদের অবশ্যই ভাড়া চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে লিভ ইন সম্পর্কে থাকা যুগলদের শংসাপত্র পরীক্ষা করতে হবে। বলা হয়েছে, ইউনিফর্ম সিভিল কোডের বিধি ২০(৮) (সি)-এর অধীনে বাড়িওয়ালার অবশ্যই নিশ্চিত করবেন যে লিভ-ইন সম্পর্কের ভাড়াটেদের এই সংক্রান্ত শংসাপত্র আছে কি না বা সেটি সঠিক কি না। নিয়মে বলা হয়েছে, বাড়ির মালিকরা ভাড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে লিভ-ইন সম্পর্কের সার্টিফিকেট/অস্থায়ী শংসাপত্রের একটি প্রতিলিপি নিজেদের কাছে রাখবেন। এই শংসাপত্রটি ভাড়া চুক্তির অংশ হবে। আর এই নিয়ম লঙ্ঘন করলেই রাজ্য সরকার জরিমানা করতে পারে। ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।  উত্তরাখণ্ডে লিভ-ইন যুগলদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। মানে প্রেম করেছেন? আপনি শ্যাম, উনি রাধা? যমুনার ধারে যাবেন? সঙ্গে রাখুন অ্যাট লিস্ট ৫০০ টাকা। আর দেরি হলে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা দিতে হবে। বলা হয়েছে যদি যুগল একসঙ্গে থাকতে শুরু করার এক মাসের মধ্যে ওই খাতাপত্তরের কাজ সেরে না রাখে তাহলে এই টাকা দিতে হবে। আর যদি সম্পর্ক থেকে যুগল বেরিয়ে আসে সেক্ষেত্রেও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার জন্য আরও ৫০০ টাকা দিতে হবে।

মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ড সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং উইল রেজিস্ট্রেশনে এবার থেকে অর্থ প্রদান করতে হবে। বিয়ের রেজিস্ট্রেশন ফি হল ২৫০ টাকা। আর যদি দ্রুত কেউ শংসাপত্র দাবি করে তাহলে ২৫০০ টাকা দিতে হবে। এতে তিন দিনের মধ্যে শংসাপত্র পাওয়া যাবে। আর বিয়ের রেজিস্ট্রেশনে ব্যর্থ হলে বা ভুল তথ্য জমা দিলে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডে সোমবার রাজ্য জুড়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, ইউনিফর্ম সিভিল কোড চালু হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, লিভ-ইন সম্পর্ক এবং উইলের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি পোর্টাল চালু করেছেন।  কেলোটা ভাবুন, প্রেম করার আগে পরে, লিভ ইন করার আগে পরে আপনাকে বিজেপির পারমিশন নিতে হবে, না হলে হেনস্থার একশেষ। আচ্ছা কেবল এই কারণেই তো এই বাংলাতে বিজেপির উবে যাওয়াটা বাঞ্ছনীয় তাই না?

RELATED ARTICLES

Most Popular