skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollFourth Pillar | আরএসএস-বিজেপি গান্ধীর হ*ত্যাকারী, জাতির পিতাকে সেদিন তারাই হ*ত্যা করেছে
Fourth Pillar

Fourth Pillar | আরএসএস-বিজেপি গান্ধীর হ*ত্যাকারী, জাতির পিতাকে সেদিন তারাই হ*ত্যা করেছে

গোলওয়ালকরের চিঠির জবাবে প্যাটেল যা লিখেছিলেন, তা এখনই ঘাড় ধরে শোনানো উচিত আজকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে

Follow Us :

না, ৩০ জানুয়ারি ভুলিনি, গতকালই এই কথাগুলো বলার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু কুম্ভমেলার ঘটনা নিয়ে বলাটা জরুরি মনে হয়েছিল, তাই আজ সেই প্রসঙ্গ, যা ভোলা যায় না, ভোলা অপরাধ। ৩০ তারিখ এলেই মনে পড়ে যায় এক বিশ্বাসঘাতকতার গল্প, ৩০ তারিখ এলেই মাথায় আসে সেদিনের সেই হত্যাকারীরা আজ মসনদে বসে আছে। ৩০ তারিখ এলেই মনে পড়ে যায় এক ৭৮ বছর বয়সি গুজরাতি আইনজীবীর কথা যিনি তাঁর শেষ কিছুদিনের রুটিনে সাতসকালে উঠেই নিয়মিত বাংলাপাঠ শিক্ষায় বসতেন, গৃহশিক্ষকের কাছে বাংলা শিখতেন কারণ তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল তিনি রবি ঠাকুর অরিজিনাল ভাষায় পড়বেন, অনুবাদ নয়, বাংলাতেই পড়বেন। সেই মানুষটাকে মারা হয়েছিল এই ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮, হ্যাঁ, স্বাধীনতার এক বছর পার করার আগেই খুন করা হয়েছিল আমাদের জাতির পিতাকে। দেশভাগ নিশ্চিত, দাঙ্গা শুরু হয়েছে, দ্বিখণ্ডিত দেশে স্বাধীনতা এল, কিন্তু চারিদিকে দাঙ্গা। যেদিন দেশ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে, সেদিন গান্ধীজি কোনও অনুষ্ঠানে এলেন না, চুপচাপ বসে চরকা কাটছেন, পরদিন থেকে আরও দাঙ্গার খবর, এরপর গান্ধীজি সেই জায়গায় যেতে লাগলেন, সঙ্গে কিছু অনুগামী। দাঙ্গার শহরে যাচ্ছেন, পদযাত্রা করছেন, দাঙ্গা থামলে আবার অন্য জায়গায়, কলকাতাতেও এলেন, দাঙ্গা থামল।

ওদিকে আরএসএস কী করছে? তাদের সরসংঘচালক কী করছেন, তিনিও ঘুরছেন, জায়গায় জায়গায় গিয়ে বিষ ছড়াচ্ছেন, যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে দাঙ্গার আগুন জ্বলে উঠছে। সেদিন আরএসএস বুঝেছিল, গান্ধীজিকে থামাতে হবে, মানুষ গান্ধীকে নয়, তাঁর বিচারধারাকে, তাঁর বিচারধারার পেছনে, আদর্শের সামনে ক্রমশ মানুষ জড়ো হচ্ছে, বিষ ধুয়ে যাচ্ছে। ৭ ডিসেম্বর ১৯৪৭, দিল্লির রামলীলা ময়দানে গোলওয়ালকর বলছেন, শিবাজি আর রানা প্রতাপের কথা, হিন্দুত্বকে জাগিয়ে তোলার কথা, পাকিস্তানকে শেষ করে দেওয়ার কথা। সেদিন সন্ধেতেই, রোহতক রোডে সংঘের এক সভায় তিনি বলছেন, ‘We should be prepared for guerilla warfare on the lines of the tactics of Shivaji. The Sangh will not rest content until it had finished Pakistan. If anyone stood in our way we will have to fight him to, whether it was Nehru Government or any other Government. The Sangh could not be won over.’

তারপর তিনি কী করতে হবে, সেটা জানাচ্ছেন, Mahatma Gandhi wanted to keep the Muslims in India so that the Congress may profit by their votes at the time of election. But, by that time, not a single Muslim will be left in India. … Mahatma Gandhi could not mislead them any longer. We have the means whereby such men can be immediately silenced, but it is our tradition not to be inimical to Hindus. If we are compelled, we will have to resort to that course too. পুলিশের সিআইডি ইনস্পেক্টর করতার সিং এই রিপোর্ট সেদিন জমা করছেন। সেদিনই তিনি গান্ধীজিকে স্তব্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন, স্তব্ধ করার পরিকল্পনা তার বহু আগেই শুরু হয়েছিল। সাভারকরের মন্ত্রশিষ্য নাথুরাম গডসে, একা জোগাড় করেননি বেরেত্তো পিস্তল, বহু লোক ছিল এই ষড়যন্ত্রের পেছনে। তারপর প্রার্থনা সভায়, অসুস্থ, অশক্ত সেই প্রবীণ মানুষের বুকে ছুড়ে দিয়েছিলেন গরম শিসে, মরার আগে গান্ধীজি বলেছিলেন, হে রাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা দেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে, নাগপুরে আরএসএস কার্যালয়ে মিষ্টি বিতরণ হয়, কাজ শেষ, গান্ধী শেষ। ২ তারিখে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় রাজঘাটে, সেদিন মরদেহের একপাশে বসেছিলেন নেহরু, অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লভভাই প্যাটেল।

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | মৃত কুম্ভের সন্ধানে এক বোবা ভারতের গল্প

৪ তারিখ সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে নির্দেশ জারি করা হল, দেশজুড়ে আরএসএসকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। সারা দেশের মেজাজ দেখে তার আগেই আরএসএস নেতারা ঢুকে পড়েছিলেন গর্তে, যাদের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না, তাদের গ্রেফতার করা হল। সরাসরি গান্ধীহত্যার অভিযোগেই গ্রেফতার হন সাভারকর। অনেকে বলেন, বলার চেষ্টা করেন যে হিন্দু মহাসভা আর আরএসএস-এর মধ্যে নাকি দারুণ বিরোধ ছিল, অথচ জুলাই মাসে হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্যাটেলকে চিঠি লিখে এই ব্যান তুলে নিতে বলছেন। জবাবে ১৮ জুলাই ১৯৪৮, প্যাটেল লিখছেন, “There is no doubt in my mind that the extreme section of the Hindu Mahasabha was involved in the conspiracy [to kill Gandhi]. The activities of the RSS constituted a clear threat to the existence of Government and the State. Our reports show that those activities, despite the ban, have not died down. Indeed, as time has marched on, the RSS circles are becoming more defiant and are indulging in their subversive activities in an increasing measure.” বলছেন, কেবল আরএসএস নয়, হিন্দু মহাসভার লোকজনও এই হত্যা ষড়যন্ত্রের সমান অংশীদার ছিল, লিখছেন আরএসএস ভারতবর্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে এক বিপজ্জনক সংগঠন। ওদিকে গোলওয়ালকর আগে বড় বড় কথা বলার পরে আপাতত নরম সুরে, সাভারকর তার আগেই মুচলেকা দিয়ে চিঠি লিখেছেন, রাজনীতিতেই থাকবেন না, এমন কথাও বলেছেন, মুচলেকা দেওয়া তেনার রক্তেই ছিল। গোলওয়ালকরের চিঠির জবাবে প্যাটেল যা লিখেছিলেন, তা এখনই ঘাড় ধরে শোনানো উচিত আজকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে।

প্যাটেল লিখছেন, “Organising the Hindus and helping them is one thing but going in for revenge for its sufferings on innocent and helpless men, women and children is quite another thing…apart from this, their opposition to the Congress, that to of such virulence, disregarding all considerations of personality, decay of decorum, created a kind of unrest among the people. All their speeches were fill of communal poison. It was not necessary to spread poison in order to enthuse the Hindus and organise for their protection. As a final result of the poison, the country had to suffer the sacrifice of the invaluable life of Gandhiji. Even an iota of the sympathy of the Government, or of the people, no more remained for the RSS. In face opposition grew. Opposition turned more severe, when the RSS men expressed joy and distributed sweets after Gandhiji’s death. Under these conditions, it became inevitable for the Government to take action against the RSS…Since then over six months have elapsed. We had hoped that after this lapse of time, with full and proper consideration, the RSS persons would come to the right path. But from the reports that come to me, it is evident that attempts to put fresh life into their same old activities are afoot.” লিখছেন, “হিন্দুদের সংগঠিত করে তাদের সাহায্য করা এক বিষয়, কিন্তু তাদের দুর্দশার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নিরীহ ও অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের লক্ষ্য করা সম্পূর্ণ অন্য বিষয়… এছাড়াও, কংগ্রেসের প্রতি তাদের বিরোধিতা, বিশেষ করে এতটা তীব্র বিরোধিতা, যেখানে ব্যক্তিত্বের মর্যাদা, শালীনতা, এসব কোনও বিবেচনাই তারা রাখেনি, তা জনগণের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিল। তাদের সব বক্তৃতাই ছিল সাম্প্রদায়িক বিষে ভরপুর। হিন্দুদের উদ্বুদ্ধ করতে ও তাদের সুরক্ষার জন্য সংগঠিত করতে বিষ ছড়ানোর কোনও প্রয়োজন ছিল না। এই বিষের চূড়ান্ত ফলস্বরূপ, দেশকে গান্ধীজির অমূল্য প্রাণের বলিদান সহ্য করতে হয়েছে। সরকার বা জনগণের আরএসএসের প্রতি সিকিভাগ সহানুভূতিও অবশিষ্ট থাকেনি। বরং তাদের বিরোধিতা বেড়েছে। এই বিরোধিতা আরও তীব্র হয়েছিল যখন গান্ধীজির মৃত্যুর পর আরএসএস কর্মীরা আনন্দ প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে আরএসএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল… তখন থেকে ছয় মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম যে এই সময়ের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করে আরএসএস-এর লোকেরা সঠিক পথে ফিরে আসবে। কিন্তু আমার কাছে আসা রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট যে তারা তাদের পুরনো কার্যকলাপে নতুন করে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা চালাচ্ছে।”

হ্যাঁ এটাই প্যাটেল মনে করতেন এই আরএসএস সম্পর্কে। সেই কবেই, ৪৭ এর আগস্ট মাসেই একই প্লেনে পাশাপাশি বসে দিল্লি এসেছেন তিনজন, বিনায়ক দামোদরদাস সাভারকর, নাথুরাম বিনায়ক গডসে, নারায়ণ দত্রাত্রেয় আপ্তে। কয়েকমাস পরেই ৪৮-এর ১৮ জানুয়ারি, আবার অনশন ভাঙলেন গান্ধীজি, দিল্লির মসজিদ, মুসলমান বাড়ি ঘরদোর দখল করেছিল হিন্দু, শিখ উদ্বাস্তুরা, তিনি বলেছিলেন দাঙ্গা থামাতে হবে, জবরদখল ছাড়তে হবে, বিরক্ত প্যাটেল, বিরক্ত নেহরু, আবার গান্ধীর অনশন? সব্বাই মিলে সই করে লিখে দিলেন, আর দাঙ্গা হবে না, দাঙ্গা থামল, জবরদখলকারীরা সরে গেল, হিন্দু শিখ উদ্বাস্তুরা বিড়লা হাউসের সামনে এসে স্লোগান দিক গান্ধী তুমি বরং মরো, আমাদের আমাদের মতো থাকতে দাও। গান্ধী জানালেন ২ ফেব্রুয়ারির পরে পাকিস্তান যাব, আবার প্যাটেল আর নেহরুর মাথায় হাত, এই সময়ে গান্ধীজি করাচি যাবেন? ওদিকে গান্ধীহত্যার ষড়যন্ত্র শেষ, একটা চেষ্টা হল ২০ জানুয়ারি, ধরা পড়ল, মদনলাল পাহওয়া, অনেক কিছুই বলল, যা বললো তা দিয়ে সাভারকর, নাথুরাম গডসে, গোপাল গডসে, নারায়ণ আপ্তে, দিগম্বর বাগড়ে, বিষ্ণু রামচন্দ্র কারকারে, শঙ্কর কিস্তিয়া সবকটাকেই গ্রেফতার করাই যায়, কেন জানা নেই, তদন্তই হল না। গডসে, আপ্তে আবার  সাভারকরের বাড়িতে গেল, তার নির্দেশে সেখান থেকে গোয়ালিয়র, সেখান থেকে গোয়ালিয়রে দত্রাত্রেয় সদাশিব পরচুরের বাড়িতে, জোগাড় হল ইতালিয়ান বেরেত্তা পিস্তল, গডসে আর আপ্তে চলে এল দিল্লি। নিউ এজ, কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকায় লেখা হল গান্ধীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। পুলিশ, আইবির একজনও জানার চেষ্টাই করল না কারা ষড়যন্ত্র করছে।

গান্ধীজি তখনও একলাই শেষ চেষ্টা করছেন, দেশ বিভাজন হয়েছে হোক, তিক্ততা মিটে যাক, হিন্দু মুসলমান ঐক্য ফিরে আসুক, তারপর দেখা যাবে। একলাই বলে যাচ্ছেন, একলা চলো রে। ৩০ তারিখ নাথুরাম গডসে খুন করল, তিনটে গুলি বুকে নিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। আর সেই দিনগুলোতে যখন তাঁকে হত্যার চক্রান্ত চালাচ্ছে তারা যাদের উত্তরাধিকারীরা আজকে শাসন ক্ষমতায় বসে আছে, সেই চক্রান্তের কথা সবাই জানেন, সরকার জানে, পুলিশ জানে, সংবাদপত্র জানে এমনকী গান্ধীজি নিজেও জানেন। সেই সময় জুড়ে তিনি কী করছেন? সম্প্রীতির কথা বলছেন, দাঙ্গা বিধ্বস্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর প্রতিদিন সকালে ওই ৭৮ বছর বয়সি মানুষটা এক শিক্ষকের কাছে বাংলা শিখছেন, কেন? কারণ তিনি বাংলায় রবীন্দ্রনাথ পড়তে চান। সেই তাঁকে হত্যা করা হল, হত্যার মূল অপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হল, সেদিন প্রাণ দিয়েও উনি নিষ্পত্তি করে দিতে পারতেন আমাদের দেশের এই চক্রান্তের, এই বিভেদকামী প্রচেষ্টার। কিন্তু সব ধামাচাপা দেওয়া হল। আজ তারা ফিরে এসেছে। একদিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে / রাজার দোহাই দিয়ে / এ যুগে তারাই জন্ম নিয়েছে আজি, / মন্দিরে তারা এসেছে ভক্ত সাজি। আমরা তাদের কি চিনতে পারছি না? যদি চিনে থাকেন তাহলে তাঁদের চিহ্নিত করুন।

RELATED ARTICLES

Most Popular