ভারতীয় চলচ্চিত্রে ‘শোলে’ ছবিটি একটি মাইলফলক। ৪৫ বছর পরেও ভারতীয় দর্শকরা একইভাবে এই ছবিটিকে স্মরণ করে। বিভিন্ন কারণে ছবিটি আজও মানুষের চোখের মণির মতন উজ্জ্বল হয়ে আছে। ছবিতে অন্যতম বিশেষ চরিত্র গব্বর সিং যা ভারতীয় ছবির ভিলেনদের কাছে সর্বোচ্চ মানদন্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইকনিক এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আমজাদ খান। গতকাল মঙ্গলবার ছিল তার ২৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ‘শোলে’ ছবিতে তার অন্যতম সহ অভিনেতা ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। তিনি সবসময়ই প্রয়াত আমজাদ খানকে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেন। আমজাদ খানের পথ দুর্ঘটনায় কিভাবে অমিতাভ বচ্চন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তা তিনি এক সাক্ষাৎকারে স্মরণ করেছিলেন। ২০১৬ সালে ‘ফিল্মফেয়ার’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘শোলে’র সেটে প্রথম দিনই আমজাদ তাকে ‘শর্টি’ বলে সম্বোধন করেছিলেন।’ ‘শর্টি’ অর্থাৎ ‘ছোট’ বলে অমিতাভ বচ্চন এর মত একজন দীর্ঘদেহী লোককে সম্বোধন করা মানেই বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। অমিতাভ বচ্চনের বুঝতে একটুও সময় লাগেনি। সেদিন থেকেই তাদের বন্ধুত্বের বন্ধন শুরু হয়েছিল। অমিতাভ সব সময় আমজাদকে ভালো বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করতেন। বন্ধু আমজাদের পথদুর্ঘটনায় কিভাবে অমিতাভ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং হাসপাতালে সমস্ত দায়দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সে কথাও তিনি ফিল্মফেয়ারের ওই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল১৯৭৯ সালে গোয়ায় ‘দি গ্রেট গ্যাম্বলার’ ছবি শুটিংয়ের সময়। আমজাদ যখন তার পরিবারের সঙ্গে মুম্বই থেকে গাড়ি চালিয়ে গোয়ার দিকে আসছিলেন তখন পথে এক বড় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। জনবিরল ওই রাস্তায় কেউ তাদেরকে উদ্ধার করতে না আসায় আহত অবস্থায় আমজাদ নিজে তার স্ত্রী ও দুই বাচ্চাকে নিকটবর্তী হাসপাতাল অবধি গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান। দুর্ঘটনায় আমজাদের পাঁজরের হাড় ভেঙে যায় এবং ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার ফলে তাঁর নিঃশ্বাস নিতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি গাড়ি চালিয়ে পরিবারের লোকেদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এ খবর শোনা মাত্র গোয়ার শুটিং স্পট থেকে অমিতাভ বচ্চন হাসপাতালে দৌড়ে যান। হাসপাতলে সে সময় অমিতাভ দেখেন যে আমজাদ অচৈতন্য অবস্থায় রয়েছেন। চিকিৎসকরা আমজাদ খানের যথাশীঘ্র অপারেশনের পরামর্শ দেন। তার স্ত্রী এবং সন্তানদের মুম্বই নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা আমজাদ খান এর শারীরিক অবস্থা বিচার করে তাকে ছাড়তে চান নি। অপারেশনের সময় আমজাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ফলে কেউ মেডিকেল বন্ড পেপার সই করতে রাজি হয় না। তখনো এগিয়ে আসেন সেই অমিতাভ বচ্চন। আমিতাব বচ্চন আমজাদের সমস্ত দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে সই করে দেন। যেহেতু কেউ আমজাদের এই অপারেশনের দায় নিতে প্রস্তুত ছিলেন না তাই আমিতাভ নিজে থেকেই এগিয়ে এসে কাগজে সই করেছিলেন। একথা পরে জানতে পেরে আমজাদ তার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ছিলেন বিগ বি-কে। অমিতাভ ঐ সাক্ষাৎকারে আরো বলেছিলেন যে তিনি গোয়া থেকে মুম্বাইতে খানের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তারা সম্মতি দিয়েছিলেন সই করার জন্য। অস্ত্রোপচার হয়ে যাবার পর আমজাদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। এবং পরবর্তীকালে অমিতাভ বচ্চন একটি চার্টার্ড লাইটের ব্যবস্থা করেছিলেন তাকে গোয়া থেকে মুম্বই নিয়ে যাবার জন্য। পরে সুস্থ হয়ে আমজাদ আবার দি গ্রেট গামলার ছবির শুটিংয়ে ফিরে এসেছিলেন। এভাবেই পুরনো দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বলিউড সুপারস্টার। আমজাদ খানকে ‘ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে প্রিয়’ বলে সম্বোধন করে বচ্চন কিভাবে তাকে আবেগময় ও স্নেহ ভরা চিঠি লিখেছিলেন সে কথাও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন। আমজাদ এর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর অমিতাভদা বিশ্বাস করতে পারেননি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে চলে গিয়েছিলেন তার বাড়িতে। বলেছিলেন যে, আমজাদ আর আমাদের মধ্যে নেই একথা বিশ্বাস করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সবশেষে তিনি বলেছিলেন, সেদিন আমি একটি অমূল্য সম্পদ হারিয়েছি একটি দুর্দান্ত বন্ধু।
রূপোলী পর্দায় তাদের লড়াই যতই উপভোগ্য হোক না কেন; বাস্তবের আঙিনায় তাদের বন্ধুত্ব ছিল অত্যন্ত গভীর।
ইয়ে দোস্তি
Follow Us :