পুরাণ অনুযায়ী, দেবী সতীর দেহত্যাগে পাগল হয়ে তাঁর দেহ কাঁধে নিয়ে মহাদেব তাণ্ডব শুরু করেছিলেন। সেই তাণ্ডবে জগৎ সংসার ধ্বংস হতে বসেছিল। উপয়ান্তর না দেখে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবীর দেহের ৫১টি খণ্ড করেন। সেই খণ্ডগুলি যেখান যেখানে পড়েছে সেগুলিই সতীপীঠ হিসেবে চিহ্নিত। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ১৫টি সতীপীঠ। মতান্তরে ১৩টি।
বর্গভীমা: পীঠ নির্ণয় গ্রন্থ অনুযায়ী ৫১ পীঠের প্রথম হল বর্গভীমা। এটি পশ্চিম মেদিনীপুরের তমলুকে অবস্থিত। বলা হয়, দেবীর বাঁ পায়ের গোড়ালি পড়েছিল এখানে। এ কথার উল্লেখ রয়েছে অন্নদামঙ্গল কাব্যেও। এখানে দেবী বর্গভীমা এবং ভৈরব সর্বানন্দ রূপে পূজিত হন।
রত্নাবলি: এটি হুগলি জেলার খানাকুলে অবস্থিত। কথিত আছে, এখানে দেবী সতীর ডান কাঁধ পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন ‘কুমারী’ এবং ভৈরবকে বলা হয় ‘ঘণ্টেশ্বর’। তবে এই সতীপীঠে দেবীর থেকে প্রভাব বেশি ভৈরবের।
ত্রিস্রোতা: এটি অবস্থিত জলপাইগুড়ি জেলায় তিস্তা নদীর তীরে। পুরাণ অনুযায়ী এখানে সতীর বাঁ পা পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী ভ্রামরী এবং ভৈরব হলেন ঈশ্বর। কথিত আছে, অরুণাসুরকে পরাজিত করতে দেবী দুর্গা অসংখ্য ভ্রমরের রূপ ধারণ করেন, সেখান থেকেই ভ্রামরী নামের আগমন।
আরও পড়ুন: Kolkata Metro: জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা বাঙালির নস্টালজিয়া ‘পাতালরেল’
অট্টহাস বা ফুল্লরা: এটি অবস্থিত বীরভূম জেলার লাভপুরের কাছে। অনেকে এটিকে উপপীঠও বলেন। পুরাণ অনুযায়ী, এখানে দেবীর ওষ্ঠ পড়েছিল। দেবী এখানে ফুল্লরা এবং ভৈরব বিশ্বেশ।
উজানি: সতীপীঠ উজানি বা সতীপীঠ মঙ্গলচণ্ডী অবস্থিত বর্ধমান জেলার কোগ্রামে। বলা হয়, এখানে দেবীর ডান হাতের কনুই পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী মঙ্গলচণ্ডী এবং ভৈরব কপিলেশ্বর বা কপিলাম্বর।
কিরীটেশ্বরী: এই সতীপীঠ মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটকণা গ্রামে অবস্থিত। পুরাণ বলে, এখানে দেবী সতীর মাথার মুকুটের একটি অংশ পড়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন, এখানে পড়েছিল দেবীর করোটির অংশ। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী বিমলা এবং ভৈরব সংবর্ত।
নন্দিকেশ্বরী: এই সতীপীঠের মন্দিরটি বীরভূমের সাঁইথিয়ার কাছে। কথিত আছে, এখানে পড়েছিল সতীর গলার হাড়। অধিষ্ঠিত দেবী এখানে নন্দিনী এবং ভৈরব নন্দিকেশ্বর।
কঙ্কালীতলা: বীরভূম জেলার কোপাই নদীর ধারে অবস্থিত এই পীঠ। বলা হয়, এখানে পড়েছিল দেবীর কাঁকাল বা কোমরের অংশ। অধিষ্ঠিত দেবীর নাম এখানে দেবগর্ভা এবং ভৈরব হলেন রুরু। কারও মতে দেবী এখানে রত্নাগর্ভি নামে অধিষ্ঠিতা।
বহুলা: এই সতীপীঠ অবস্থিত বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে অজয় নদের ধারে। পৌরাণিক কাহিনী বলে, এখানে দেবীর বাঁ হাত পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবীর নাম বহুলা এবং ভৈরব পরিচিত ভীরুক নামে।
আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: সশরীরে না থেকেও যেন বোলপুরের পাড়ার পুজোয় স্বমহিমায় কেষ্ট
যোগাদ্যা: এই পীঠও বর্ধমানে অবস্থিত, বর্ধমানের ক্ষীরগ্রামে। এখানে সতীর ডান পায়ের আঙুল পড়েছিল বলে কথিত রয়েছে। দেবীর নাম এখানে যোগাদ্যা বা যুগাদ্যা এবং ভৈরব হলেন ক্ষীরকণ্ঠক।
জয়ন্তী: আলিপুরদুয়ার জেলায় ভুটান সীমান্তে অবস্থিত এই সতীপীঠ। পুরাণ অনুসারে এখানে সতীর বামজঙ্ঘা পড়েছিল। অধিষ্ঠিত দেবীর নাম এখানে জয়ন্তী এবং ভৈরব ক্রমদীশ্বর।
নলহাটেশ্বরী: বীরভূমের নলহাটিতে অবস্থিত নলহাটেশ্বরী মন্দির। কেউ কেউ একে উপপীঠ বলে থাকেন। বলা হয়, এখানে সতীর গলার নলি বা কণ্ঠনালী পড়েছিল। এখানে দেবী শেফালিকা এবং ভৈরব যোগীশ নামে পরিচত।
বক্রেশ্বর: বীরভূমের পাপহরা নদীর তীরে অবস্থিত বক্রেশ্বর মন্দির। দেবীর দুই ভ্রুর মধ্যবর্তী অংশ এখানে পড়েছিল বলে কথিত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন সতীর তৃতীয় নয়ন পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী মহিষাসুরমর্দিনী এবং ভৈরব বক্রেশ্বর বা বক্রনাথ।
তারাপীঠ: বীরভূমের রামপুরহাটের কাছে এই সতীপীঠে ভক্তদের সমাগম লেগেই থাকে। তবে অনেকেই একে সতীপীঠ হিসেবে মানেন না। তবে বলা হয় এখানে দেবীর তৃতীয় নয়ন পড়েছিল। এখানকার পীঠরক্ষক হলেন শিব যিনি চন্দ্রচূড় নামে পূজিত হন।
কালীঘাট: কলকাতা শহরের বুকে এই সতীপীঠকে আদি সতীপীঠ হিসেবে গণ্য করা হয়। বলা হয়, এখানে পড়েছিল দেবীর ডান পায়ের আঙুল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন দক্ষিণাকালী এবং ভৈরবের নাম নকুলেশ্বর।