কলম্বো: সরকার বিরোধী প্রতিবাদে গত কয়েকমাসে বারবার উত্তাল হয়েছে চরম আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা৷ তবে অতীতের সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেল শনিবারের বিক্ষোভ৷ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবন এবং অফিসের দখল নিল বিক্ষোভকারীরা৷ পুলিসি ব্যারিকেড ভেঙে কাতারে কাতারে মানুষ ঝড়ের বেগে ঢুকে পড়ে গোতাবায়ার বাসভবনে৷ বিপদের আঁচ পেয়ে শুক্রবারই রাতে সপরিবারে বাসভবন ছেড়ে পালান গোতাবায়া৷ তিনি প্রথমে আশ্রয় নেন সেনার হেডকোয়ার্টারে৷ পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, গোতাবায়া দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন৷ বাসভবনের আশপাশের এলাকা রীতিমতো জনসমুদ্রের চেহারা নেয়৷
পুলিসি ব্যারিকেড, কাঁদানে গ্যাস কোনও কিছুতেই আটকানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের৷ ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, শ্রীলঙ্কার পতাকা হাতে মিছিল করতে করতে গোতাবায়ার বাসভবনের দিকে এগিয়ে চলেছেন বিক্ষোভকারীরা৷ এদিকে বিক্ষোভকারীদের আটকাতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে কিছুটা জায়গা ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলে পুলিস৷ যদিও জনস্রোতের চাপে সেই ব্যারিকেড ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি৷ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও বিক্ষোভকারীদের দমানো যায়নি৷ শেষ চেষ্টা হিসেবে পুলিস তখন শূন্যে গুলি চালায়৷ সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়৷ ক্ষুব্ধ জনতা বাসভবনের গেট ঠেলে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে৷ ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, পতাকা হাতে কেউ ছাদে উঠে পড়েন৷ কেউ বা প্রেসিডেন্টের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে থাকেন৷ প্রেসিডেন্টের বাসভবনে চলে অবাধ লুটতরাজও৷
এরকম যে একটা কিছু ঘটতে চলেছে তা আগেই আঁচ করেছিল শ্রীলঙ্কার পুলিস৷ তাদের কাছে খবর ছিল শনিবার হাজার হাজার নাগরিক প্রেসিডেন্টের বাসভবনে মিছিল নিয়ে চড়াও হতে পারে৷ বড় গোলমালের আঁচ পেয়ে রাতেই পালান গোতাবায়া৷ কেউ বলছে, তাঁর কনভয় বিমানবন্দরের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে৷ আবার কেউ বলছে, সামরিক বাহিনীর জাহাজে করে রাজাপক্ষে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন৷ গত কয়েকমাস ধরে নিত্যব্যবহার্য জিনিস, ওষুধ, জ্বালানির আকাশছোয়া দামের সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে নাভিশ্বাস হয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার মানুষ গোতাবায়া পরিবারের বিরুদ্ধে ফুঁসছিলেন৷ তাদের বিক্ষোভের চাপে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন মাহেন্দর রাজাপক্ষে৷ দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষ প্রেসিডেন্টেরও পদত্যাগের দাবি তোলেন৷ এমনকী ১৬ জন সাংসদও গোতাবায়াকে পদত্যাগ করতে বলেন৷ কিন্তু প্রেসিডেন্টের গদি আঁকড়ে বসে থাকা গোতাবায়া পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন৷ এদিকে কার্ফু উঠে যেতেই শনিবার কলম্বোতে মহামিছিলের ডাক দেন শ্রীলঙ্কার মানুষ৷ প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে সেনাবাহিনীর কর্তারা- অনেকেই এই মিছিলকে সমর্থন করেন৷