Tuesday, June 17, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভচতুর্থ স্তম্ভ : বেজেছে তোমার আলোর বেণু, এসেছে গোখরো সাপ

চতুর্থ স্তম্ভ : বেজেছে তোমার আলোর বেণু, এসেছে গোখরো সাপ

Follow Us :

বাজলো তোমার আলোর বেণু, পুজো এসেই গ্যালো। গত দু’বছরের পুজো ছিল ম্লান, প্যান্ডালে ছিল না মানুষ, ছিল না প্যান্ডালের পাশেই ফুচকা-ঘুগনিওয়ালা। মা সবার মঙ্গল চান বটে, কিন্তু গত দু’বছরে দেশে আদানি-আম্বানি এবং হাতে-গোনা কিছু মানুষ ছাড়া কেউ তো ভাল ছিল না। কেউ না। গড়িয়াহাটের ফুটে ইমিটেশন গয়না নিয়ে হাপিত্যেশ করে বসে থাকা যুবকটি দিনের শেষে একটাও খদ্দের না পেয়েই ঘরে ফিরেছে, হাতিবাগানে কিছু পশরা ঝুলিয়ে বসেছিল যে দোকানি, তার দুটো বাল্বের জন্য যে ইলেক্ট্রিক বিল আসে, তার খরচও তুলতে পারেনি। ফি বছর হাসতে হাসতে অন্তত শ’দুয়েক মানুষকে সিকিম, গোয়া, কন্যাকুমারি বা চার ধাম তীর্থে পাঠায় যে ট্যুর অপারেটর তার অফিসের ঝাঁপ ছিল বন্ধ, সেই ছবি কেমন ছিল? যখন আচমকা লকডাউনের পর মানুষ হাঁটছিল? মাইলের পর মাইল হেঁটেছিল ভারতবর্ষ।

জোম্যাটো আমাদের খাবার এনে দেয়,

ঠিক যেমনটা চাই, গরম, প্যাকেটে মোড়া,

সঙ্গে পেপার ন্যাপকিন

টিপস দিই আমরা, ৫, ১০, ১৫। লেখাই থাকে।

রেস্তোরাঁ বন্ধ, রেস্তোরাঁর যে ছেলেটা খাবার দিত,

তন্দুরে এক লপ্তে পুরে দিত রুটি যে ছেলেটা

এক টানে গোল ক্রিস্পি দোসা যে বানাতো

তারা সবাই রাস্তায়, তারা হাঁটছে।

ঝুঠা হি সহি, যে গয়না বানাত,

এক প্যাকেটে ১০টা কানের দুল

একদিনে ৫০ প্যাকেটের মাল, মজুরি ৮ টাকা।

যে সেই মালগুলোকে প্যাকেটে মুড়ে বাক্সবন্দি করত

দিনে ১০০ টা বাক্স, মজুরি ৪ টাকা বাক্স প্রতি

সকাল আটটায় ছাতু পেঁয়াজ-লঙ্কা মাখা।

মাসের শেষে বাবাকে ফোন

“পয়সা মিলি তো দওয়া খরিদ লেনা”

রাতে ওই ফ্যাক্টরির বাক্স-প্যাঁটরা সরিয়ে ঘুম।

তারা সবাই রাস্তায়, তারা হাঁটছে।

বাবা জায়গাটা দখল করেছিল, মছলি বাজারের পাশে

এক চিলতে জায়গায় ভাত-রোটি-সবজি-চিকেন-অন্ডা

বাপ দম্মা কে বিমারি নিয়ে গ্রামে

দু’ভাই চালায় ‘হোটেল শর্মা জী কা’, তার বাপ ছিল ডোম

জানতো শর্মাজীর দোকানে শর্মাজীও খাবে, ডোমও খাবে।

পুলিশ সাত সকালেই নিয়ে যায় ৫০ টাকা,

দু’জনের খাবার ফ্রি

এই কড়ারে শর্মাজী কা হোটেল চলছিল।

হনুমান ডোম, তার ভাই রঘুবীর ডোম রাস্তায়, তারা হাঁটছে

দানিশের মত তরতর করে বেয়ে উঠতে পারে না কেউ

হার্নেশ লাগে না, দড়ির ফাঁস গলিয়ে দেয় ১০টা ইঁটে

হাসান সিমেন্ট-বালু-পাথরের ভাগ চোখে মাপতে পারে,

ঠিকাদারের কথা মতো ৫০ সিএফটি ঢালাইয়ে

দু’বস্তা সিমেন্ট বাঁচায়

ভারা তো বাঁধে সিরাজুদ্দিন,

বেলদা থানা, সাকিন জোরপুর

ঠিকাদার বলেছিল, এরা বের হবে না

এলাকার লোক বলেছিল, আনহাইজেনিক,

শাট ডাউন, লক ডাউন

দানিশ, হাসান, সিরাজ সবাই রাস্তায়, ওরা হাঁটছে।

কতজনের চাকরিই চলে গেছে, কতজনের মাইনে কমেছে, আর যারা মরেই গ্যালো, তারা কেবল মরলো না, অবহেলায় সারিবদ্ধ পুড়ে গ্যালো ধাপার মাঠে, নাকি অন্য কোনও জায়গায়, শেষযাত্রায় এলো না বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন। মজার কথা হল সে বছরও বেজেছিল আলোর বেণু, শেষে বেজেছিল, শান্তি দিলে ভরি।

দুখরজনী গেল তিমির হরি।

প্রেমমধুর গীতি

বাজুক হৃদে নিতি নিতি মা।

প্রাণে সুধা ঢালো

মরি গো মরি।

কিন্তু শান্তি তো আসেনি।

আজ দু’বছর পর গড়িয়াহাট থেকে হাতিবাগান জমজমাট, এবার সে দোকানি তার পাশের দোকান থেকে দু’প্লেট চিকেন বিরিয়ানি নিয়ে ফিরেছে। বিরিয়ানির দোকানদার মেয়ের জন্য ফ্রক আর ছেলের জন্য বন্দুক আর রোল ক্যাপ কিনেছে। দু’বছর পর আবার হাওড়া-পাঁচলা থেকে জরির কাজ করা কাপড়, শোলার মুকুট এসেছে, মুর্শিদাবাদ থেকে, বীরভুম থেকে ঢাকিরা আসা শুরু করেছে। ৭/৮ দিন এই কলকেতায়, তারপর ঢাক বাজানোর টাকা, বাবুদের বকশিস, আর পুজো কমিটির দেওয়া মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে ফিরবে। সব্বার পুজো শেষ হলে গ্রাম বাংলায় আরেক উৎসব, আমার বাবা ফিরেছে। ওদিকে সামিদুরের ঘাড়ে এবার ঠাকুর পছন্দ আর বায়না করার দায়, চাঁদা উঠেছে ৩৪ হাজার, সরকারের ৬০ হাজার, এবারের প্রতিমা একটু বড়ই আনবে, সক্কলকে বলে এসেছে সামিদুর, নিলু আর সুবোধকে নিয়ে সে এখন কুমোরটুলিতে। নিতাই আর অনুজ ঘরামি, বাঁশের চাল আর খড়ের ছাদ বেঁধেই দিন কাটত, বছর দশেক আগে খোঁজ পেয়েছিল তারা, এক শিল্পীর ডাকে তারা প্রতি বছর আসে কলকাতায়, চড় চড় করে চিরে ফেলে বাঁশ, সেই বাতা বেঁধে কত রকমের কারুকার্য। কলকাতায় ষষ্ঠীটা কাটিয়েই সপ্তমীতে ফিরে যেত গ্রামে, কোঁচড় ভর্তি টাকা, মেজাজ ফুরফুরে। হ্যাঁ, পেট্রলের দাম ১০০ পেরিয়েছে কবেই, ডিজেল পার করলো বলে, হ্যাঁ জিনিসের দাম বেড়েছে, আনাজপাতি থেকে চাল, ডাল, চিনি, তেল, নুন কিনতে নাজেহাল দেশের মানুষ, বাংলার মানুষ, হ্যাঁ যাদের চাকরি গেছে অতিমারিতে, তারা সবাই চাকরি ফিরে পেয়েছে এমনও নয়, যারা চাকরি চায় তারা এখনও অসহায়। এদিকে রাশি রাশি টাকার স্তুপ পার্থর বান্ধবীর বাড়িতে, অপবাদ গরুচোর, অনুব্রত জেলে। রোজই আসিতেছে আসিতেছে ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, চোখ রাঙাচ্ছে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদি মিথ্যে স্ত্রোত দিয়েই চলেছে, ডিএ না পেয়ে হতাশ রাজ্য সরকারি কর্মচারী, আনিস এখনও পায়নি ইনসাফ, হ্যাঁ এসবই সত্যি কিন্তু তবুও ফুটেছে কাশফুল, তবুও কাজল কাজল মেঘেরা সরে গিয়ে সোনা রোদ মাঠে ঘাটে, প্যান্ডাল বাঁধা শেষ, কোথাও কোথাও তো পুজো শুরু, ঢাক বাজছে, ঢাক বাজছে। আমি আছি, তুমি আছো তাই, গান বাজছে। এভাবে কান্না হাসির দোল দোলানো দুনিয়ায় একটু হাসি হেসে নেয় আম জনতা, এখানেই ধর্ম বয়ে আনে উৎসব, উৎসবে শামিল জাগো বাংলা থেকে গণশক্তি, কালান্তর। লাল শালুর প্যান্ডালে বসে যে ছেলেটা বিক্রি করবে দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন, সেও ঢাকের বোলে পা নাচায়, আড় চোখে দেখে নেয় পাড়ার দুর্গার ডাকের সাজের রকম সকম, আর যাদের বিপ্লবী হওয়ার বালাই নেই, তারা তো এই ক’দিন চল পানসী বেলঘরিয়া। দুগ্গা পুজোই বলুন, আর শারদোৎসব, বিমান বসু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধায়, সামিরুল থেকে মদন টুডু, আম জনতার, খাস মানুষজনের কিছু না কিছু ভূমিকা তো থাকেই। আর সেই আবহে আবার চেনা পুজো ফিরে এসেছে। অচেনাটা কী? আগে আসতেন অ্যাপিয়ারেন্স ফি নিয়ে, এবারে এসেছেন পুজোর আগে রাজনীতির চুলোতে রুটি সেঁকে নিতে, গোখরো সাপ মিঠুন চক্রবর্তি। এর আগে প্রকাশ্য জনসভাতেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর এক ছোবলেই মৃত্যু অনিবার্য, এবার সেই তিনিই হাজির, গলায় বিজেপির পতাকা, তাঁকে কতকিছুই না দিয়েছে এই দল, দুর্নীতির মামলা, হাজতবাস থেকে ক্লিন চিট পেয়েছেন, ব্যবসায় অফুরন্ত ছাড় পেয়েছেন বলেই দুষ্টু লোকজনেরা বলছেন, আরও কীসব কলঙ্কের দাগ যেন ধুয়ে মুছে গেছে, তাই এ বাংলায় তিনি পদ্মফুলের চাষে নেমেছেন, সেই কবেই কবীর সুমন বলেছিলেন-,

রাই জাগো রাই জাগো

রাই জাগো রাই জাগো

ঘরে ঢুকছে কেউটে সাপ,

তোমার ঘুমের সুযোগ নিল

রাম, রুটি, ইনসাফ।

যে শারদোৎসব আমাদের সম্প্রীতির পরিচয়, যে দুগ্গা পুজোয় হিন্দু, মুসলমান মানুষ একইভাবে মেতে ওঠে পুজো নিয়ে, আমাদের সমস্ত ভেদাভেদকে দূরে সরিয়ে যে উৎসব আনে ভাইচারার ঐতিহ্য, সেই উৎসবের দিনে মিঠুন চক্রবর্তি, যিনি একদা নকশাল, পরে তৃণমূল আর তারও পরে আপাতত বিজেপি হয়ে বিষ ছড়াচ্ছেন তিনি হাজির। তাঁর পকেটে নাকি ১০০ জন এমএলএ-র লিস্ট, তাঁরা নাকি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি তে চলে যাবেন, মানে ভোট নয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়, মানুষের রায় নয়, সংবিধান নয়, তিনি দল ভেঙে সরকার তৈরি করার কথা বলছেন, এক রাজনৈতিক বাচাল মূর্খের কি আস্ফালন। কেন এত লাফাচ্ছেন? পৃথিবীর সবাই তো জানে খুঁটির জোরে মেড়া নাচে। যিনি ঝট করে জিজ্ঞেস করলে বাংলার ৩০টা কনস্টিটিউয়েন্সির নাম বলতে পারবেন না, যিনি বাংলার সংস্কৃতি মানে ফাটাকেষ্ট আর মহাগুরুর চেয়ে বেশি কছুই জানেন না, তিনি এই আনন্দের আবহে বিষ ছড়াতে এলেন। এলেনই যখন শুনে নিন, এক চোটে গোখরো, কেউটের মাথা ফুঁড়ে দেবার মত সড়কিবাজ আমাদের বাংলায় অনেক আছে, বিষ ছড়ানোর আগে মাথা সামলান, মাথাটাই আগে পচে কিনা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Iran-Israel | ঘৃণ্যতম গ/ণহ/ত্যায় ইজরায়েলের প্রতি প্রতিবাদ দেশে দেশে
00:00
Video thumbnail
Iran-Israel | ইরানে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে বেআব্রু ইজরায়েলে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম
00:00
Video thumbnail
Netanyahu | নিরাপদ নয় ইজরায়েলের IRON DOME, নিরাপদ নন নেতানিয়াহু, কী হতে চলেছে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
00:00
Video thumbnail
Air India | ফের যান্ত্রিক ত্রুটি এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনারের, ফেরানো হল মাঝ আকাশ থেকে
10:36:16
Video thumbnail
জনতা যা জানতে চায় | দু/র্ঘটনায় মৃ/ত্যু মিছিল ব্ল্যাক বক্সে ব্ল্যাক মোমেন্ট
08:22:26
Video thumbnail
Netanyahu | নিরাপদ নয় ইজরায়েলের IRON DOME, নিরাপদ নন নেতানিয়াহু, কী হতে চলেছে? দেখুন স্পেশাল রিপোর্ট
10:46:45
Video thumbnail
Iran-Israel | ১ ঘন্টা ৫ মিনিটে ইজরায়েলের কোমর ভা/ঙল ইরান, দেখুন চমকে ওঠার মতো ভিডিও
10:44:15
Video thumbnail
Air India | বিগ ব্রেকিং, ফের এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি, কোন বিমানে? কী অবস্থা দেখুন
07:39:16
Video thumbnail
Iran Situation | জল থই থই গোটা তেহরান শহর, যু/দ্ধের আবহে কী পরিস্থিতি ইরানে?
02:57:36
Video thumbnail
Birbhum | TMC | বীরভূমে কোর কমিটি বৈঠকে বিরাট সিদ্ধান্ত দলের, দেখুন ভিডিও
02:37:04