দেবাশিস দাশগুপ্ত
গত বছর দীপাবলিতে অযোধ্যায় (Ayodhya Grand Deepotsav) একসঙ্গে ২১ লক্ষ প্রদীপ জ্বালানো হয়েছিল। আজ বুধবার সন্ধ্যায় দীপাবলির আগের দিন সরযূ নদীর (Sarayu River ) তীরে জ্বলবে ২৫ লক্ষ প্রদীপ। পুড়বে প্রায় ৬১ হাজার তেল। গত বছরও এই বিপুল পরিমাণ তেল পুড়েছিল। দীপাবলির উৎসব শেষে সেই পোড়া তেল সংগ্রহের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। গরিব মানুষ তা সংগ্রহ করেছিল সংসার চালানোর কাজে। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। দিনক্ষণ, তিথি মেনে সেদিন ঘটা করে প্রাণ প্রতিষ্ঠার উৎসব হয়। বসানো হয় রামলালার মূর্তি। সারা দেশ দেখেছিল সেই মহোৎসব টিভির পর্দায়। অর্ধসমাপ্ত রামমন্দিরের উদ্বোধন হওয়ার পর এবারই প্রথম আজ অযোধ্যায় দীপোৎসব হতে চলেছে। সরযূর তীরে ২৫ লক্ষ দীপ জ্বলার পাশাপাশি ঘাটে একসঙ্গে আরতি করবেন ১১০০ পুরোহিত। গিনেস বুকে নাম তোলার জন্য উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।
এদিকে প্রদীপের নীচেই যে গাঢ় অন্ধকার, তা মালুম হল সম্প্রতি অযোধ্যায় গিয়ে। লোকসভা ভোটের আগে দেশবাসীকে চমক দেখানোর জন্য তড়িঘড়ি রামমন্দিরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অর্ধসমাপ্ত মন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন দুএকজন শঙ্করাচার্য। তাঁরা ২২ জানুয়ারি সেই উৎসব বয়কটও করেন। তবু উৎসবের ঘাটতি ছিল না। দুসপ্তাহ আগে অযোধ্যায় গিয়ে দেখা গেল, কাজ এখনও বহু বাকি। মূল মন্দিরের বাইরেও লোহা এবং বাঁশের ধাঁচা। সেখানে উঠে কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। এখানে সেখানে কংক্রিটের স্তূপ। ছোট বড় মন্দির তৈরি হচ্ছে। কোথাও পাথর ভাঙা হচ্ছে, কোথাও সিমেন্টের গাঁথনি চলছে। মেশিনে মেশিনে ছড়াছড়ি। ইঞ্জিনিয়াররা কাজ পরিদর্শনে তৎপর। কবে সব কাজ শেষ হবে, জানতে চাইলে এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ধরে রাখুন, আরও দশ বছর।
আরও পড়ুন: রাম মন্দির উদ্বোধনের পর প্রথম দীপাবলি, প্রস্তুতি তুঙ্গে!
কর্মযজ্ঞ চলছে অযোধ্যার মূল রাস্তায়। দুই ধারে লাইটপোস্টে পদ্ম খচিত। অর্ধসমাপ্ত বুলেভার্ডে মোদির ছবি। ধুলোবালিতে ভরা রাস্তায় চলা দায়। কোনও রাস্তায় জলকাদা ভরা। জেসিবি মেশিন চলছে ঘড়ঘড় শব্দ করে। হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে চলেছেন দিনরাত। এর মধ্যেই মন্দিরে রামলালার দর্শনে ভিড়ের খামতি নেই। মন্দিরে ঢুকতে গেলে জুতো তো বটেই, সঙ্গের ব্যাগ, মোবাইল, এমনকি পার্সও জমা রাখতে হবে। কারণ ছবি তোলা নিষেধ। তবে ব্যবস্থাপনা সুন্দর। মূল মন্দিরে ঢোকার জন্য একাধিক লাইন এঁকেবেঁকে এগিয়ে চলেছে। আট থেকে আশির মুখে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। রামলালার মুর্তি দর্শনের আকুতি ভক্তদের মধ্যে। নিরাপত্তাকর্মীরা এক দুই সেকেন্ডের বেশি কাউকে মূর্তির সামনে দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। রীতিমতো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবু মুখে জয় শ্রীরাম ধ্বনি।
আগামী ১৩ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের নয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। লোকসভা ভোটে রামরাজ্যে বিজেপির ফল মোটেই ভালো হয়নি। তাদের আসন ৬২ থেকে ৩৩ আসনে নেমে এসেছে। অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে, সেই ফৈজাবাদেও বিজেপি হেরেছে। জয়ী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী। লোকসভা ভোটে শোচনীয় ফলাফলের দায় উত্তরপ্রদেশ বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ চাপিয়ে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর উপরে। তাই এই উপনির্বাচন যোগীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই কারণেই কি যোগী দীপাবলিকে সামনে রেখে ফের রামমন্দিরের আবেগ উস্কে দিতে নেমেছেন, উঠছে প্রশ্ন।
অন্য খবর দেখুন