১৯৯৮-এর পয়লা জানুয়ারি এই বাংলায় জন্ম নিয়েছিল তৃণমূল দল, এখন তার নাম অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। ১৯৯৭-এর ২৬ ডিসেম্বর ওড়িশায় জন্ম নিয়েছিল বিজু জনতা দল। দুটো আলাদা প্রেক্ষিতে, দুটো আলাদা রাজনৈতিক অবস্থান থেকে। আর ক’দিন পরে ২৭-এ পা দেবে দুটো দলই। সেই সময়ের প্রত্যেক আঞ্চলিক দল, তাদের জনপ্রিয়তা, তাদের কংগ্রেস বিরোধিতা, কমিউনিস্ট বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়েই বিজেপির উত্থান, বিজেপির উঠে আসাকে সুনিশ্চিত করার এক নীল নকশা কাজ করছিল। এক গোপন ষড়যন্ত্র, দীর্ঘ সময় ধরে সে পরিকল্পনায় বহু মানুষ শামিল ছিলেন, ছিল আরএসএস, ছিল বিজেপির প্রমোদ মহাজনের মতো নেতারা, যাঁরা সাংগঠনিক, আর্থিক সাহায্য নিয়ে হাজির ছিলেন। কিন্তু সে নীল নকশা মাঝপথেই কীভাবে ভেঙে পড়ল, কেন ভেঙে পড়ল, তা নিয়েও আলোচনা করব। প্রথমে দেখা যাক, সেই সময়ে দেশের কোন আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে কেমন সম্পর্ক ছিল জনতা দলের। তাদের পাশে পূর্ণ সমর্থন নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, ৯৮-এর সাত মাসের, ৯৯-এ পাঁচ বছরের অটল বিহারী সরকারকে বাইরে থেকে, কিন্তু প্রায় নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিল তেলুগু দেশম, শর্ত একটাই রাজ্যের জন্য টাকা চাই, প্রকল্প চাই। কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর বাইরে থেকে সমর্থন তাঁর মনে ধরেছিল, এবং মন্ত্রিত্ব চাই না, কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতাবান মন্ত্রী হয়ে তাঁর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করবে, এটাও চন্দ্রবাবু নাইডু চাননি। ওধারে এআইডিএমকে, পরে ডিএমকে, তাদের নিজেদের রাজনৈতিক বিরোধিতা তো রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ মেনেই চলে, কাজেই ৯৮-এ জয়ললিতা সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে ৯৯-তে বিজেপি সমর্থন পেল করুণানিধির। সমর্থন ছিল দেশের সবথেকে পুরনো ধর্মীয় ভিত্তিতে কংগ্রেস বিরোধিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দল, শিরোমণি অকালি দলের। স্বাভাবিক সমর্থন ছিল শিবসেনার। সমর্থন ছিল জেডিইউ, সমতা পার্টির। এবং এসব আঞ্চলিক দলগুলোর সমর্থনের ভিত্তি গড়ে উঠেছিল ৯৮-এর ঢের আগে থেকে।
সেই সময় থেকেই আরএসএস–বিজেপির চোখ ওড়িশার দিকে, সেখানে আদিবাসী অঞ্চলে আরএসএস-এর ভালো প্রভাবও ছিল, কিন্তু কংগ্রেসের বিরোধিতায় বিজু পট্টনায়কের উৎকল কংগ্রেস, এবং রাজ্যে তেমন নেতা না থাকায়, বিজেপি বিজু পট্টনায়কের পিছনেই থাকত, পরে জনতা দল তৈরি হবার পরে বাজপেয়ী, বিজু সখ্য বজায় ছিল। বিজু পট্টনায়ক মারা গেলেন ৯৭-এর জুলাই, আমাদের এখানে যেমন জ্যোতিবাবু, ওড়িশায় তেমনই জ্যোতিবাবু, কাকা নয়, দাদা নয়, জেঠু নয়, স্রেফ বাবু। এক লিজেন্ড, এক রূপকথা। বিজু পট্টনায়ক যখন মারা গেলেন তখন তাঁর উৎকল কংগ্রেসে, পরে জনতা দলের বড় বড় সব নেতা, শ্রীকান্ত জেনা, দিলীপ রায়, বিজয় মহাপাত্রের মতো নেতারা। নবীন পট্টনায়ক বিদেশে মানুষ, ওড়িয়া ভাষাতে এখনও, হ্যাঁ এখনও স্বচ্ছন্দ নন। দিল্লিতে সাইকোডেলহি নামে এক ফ্যাশন বুটিক চালাতেন, তাঁর বন্ধু রোলিং স্টোনসের মিক জ্যাগার, জ্যাকলিন কেনেডি, অভিনেতা রবার্ট ডি নিরো, তিনি বছরে তিন চার বার বিদেশে যেতেন, ঘুরতে ভালোবাসতেন, বই পড়তে ভালবাসেন, বই লিখেছেন। গুজরালের মন্ত্রিসভা পড়ে গেল, এরাপল্লি প্রসন্নের মতো রজনীতির বল ঘুরছে। নবীন পট্টনায়কের দিদি, দাদা কেউই রাজনীতিতে আসতে চাইছিলেন না। ওদিকে দলে বিজু বাবু নেই, কিছু লোক বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, শ্রীকান্ত জেনা, বিজয় মহাপাত্র, দিলীপ রায়ের মতো নেতারা চাইছেন বিজেপির সঙ্গে যোগ না দিয়ে আঞ্চলিক দল হোক, বিজুবাবুর ছোট ছেলেকে সামনে রাখা হোক, পরে ক্ষমতা হাতে নেওয়া যাবে। ইতিমধ্যে বিজুবাবুর আসন আস্কা থেকেই লোকসভার আসন জিতেছেন নবীনবাবু। বিজেপিতে যোগ না দিয়ে বিজেডি তৈরি হল, নেতা নবীন পট্টনায়ক, নতুন দল তৈরির পয়সা জোগালেন প্রমোদ মহাজন। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক দলের থিওরি। দলের প্রথম দিনের বৈঠকে হাজির থাকলেন বিজেপি নেতা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা। রাজনীতিতে এসেই আস্কা থেকে বিপুল মার্জিনে জেতা, অটল বিহারী মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হওয়া, এবং ২০০০ সালেই ১৪৭-এর মধ্যে ৬২টা বিধানসভার আসন জিতলেন, বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হলেন, এক সোশালাইট নবীন পট্টনায়ক মানুষকে বললেন, “আপনাকারা জবরদস্ত সাপোর্ট লাগি মুই আপনাকারা আভারি।” তিনি এইটুকু ওড়িয়া বলতেও দু’বার কাগজ দেখেছিলেন।
এখনও ভুবনেশ্বরে বিজু পট্টনায়কের তৈরি বিশাল প্যালেসে থাকেন, ডানহিল সিগারেট খান, ২২০০০ টাকা দামের ফেমাস গ্রাউজ হুইস্কি খান কিন্তু মজার কথা সেই ওড়িশার আম আদমির হৃদয় সম্রাট হেরে ভূত। আরএসএস, বজরং দল, বনবাসী আদাবাসী সমিতি ইত্যদিদের দিয়ে এক বিরাট হিন্দু কনসোলিডেশনের ফলেই বিজেপি আজ ক্ষমতায়। বিজেপি ঠিক করেছিল আঞ্চলিক দলগুলোকে দিয়ে কংগ্রেস হাটাও, কমিউনিস্ট হাটাও, তারপর সেই বিরোধিতার জায়গা দখল করো, তারপর ক্ষমতা। সেই নীল নকশার গোপন ষড়যন্ত্র আজ সফল। তার প্রথম কারণ হল, দেশজুড়ে বিজেপি বাড়ার আগেই আঞ্চলিক দল গড়ে উঠছিল, এক ধরনের আইডেন্টিটি পলিটিক্স, যা আগে তামিলনাড়ুতে ছিলই, তা ওই ৮০-র শেষ, ৯০ থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। মূলত কংগ্রেস নেতৃত্বের হাইকম্যান্ডের ব্যর্থতায়, কমিউনিস্ট নেতৃত্বের সহি বিপ্লবীয়ানা বজায় রেখে শুদ্ধতা বজায় রেখে, অথচ সংসদীয় রাজনীতির মধ্যেই বিচরণ করার মধ্যে যে কন্ট্রাডিকশন, যে দ্বন্দ্ব ছিল, তার ফলেই রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক দল আর নেতা মাথাচাড়া দিয়ে রাজ্য রাজনীতির দখল নিতে এল। জাতিসত্তার আন্দোলন, ভাষা, সংস্কৃতির আন্দোলন, কমিউনিস্টদেরই তো করার কথা, কিন্তু তার দায় নিলেন কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা নেতা, জনতা দল ভেঙে এরিয়া আসা নেতারা। অন্ধ্র, কাশ্মীর, বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, এমনকী উত্তরপ্রদেশেও। জনতা দল ভাঙল, জেডিইউ, সমতা দল তৈরি হল, পরে লালুর আরজেডি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী দলের মুলায়ম সিং যাদব, বহুজন সমাজ পার্টির কাঁসিরামের পর হাল ধরলেন মায়াবতী। অন্ধ্রে তেলুগু দেশমের ভার নিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, শ্বশুর এনটি রামা রাওকে সরিয়ে। কাশ্মীরে ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা তো ছিলেনই, কংগ্রেস থেকে জনতা, তারপর পিডিপি তৈরি করলেন মুফতি মহম্মদ সইদ। ওড়িশাতে বিজেডি আর বাংলায় তৃণমূল।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | বিজেপি আর মোদিজির হাতে সংবিধান আজ বিপন্ন
দুটো জিনিস খেয়াল করার মতো, বেশিরভাগটাই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যাওয়া নেতারা এই আঞ্চলিক দলের হাল ধরলেন, তার মূল কারণ কংগ্রেস হাইকমান্ডের দিল্লি কেন্দ্রিক রাজনীতি, আর দু’ নম্বর বিষয়টাও মাথায় রাখুন একমাত্র লালুপ্রসাদ যাদব, কিছুটা হলেও মুলায়ম সিং যাদব ছাড়া প্রত্যেকের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের গভীর সম্পর্ক। সেই সময়ে প্রমোদ মহাজন, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দারুণ সখ্য ছিল, অটল বিহারী বাজপেয়ী ওনার বাড়িতে এসে ওনার মায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন, রাজনাথ সিংয়ের মতো নেতা মমতার ধর্না মঞ্চে এসেছেন। বিজেপি নেতৃত্ব খুব ভালো করেই জানতেন, বাম সরকার, সিপিএম সরকারকে এক চুল সরানোর ক্ষমতা তপন শিকদার, রাহুল সিনহাদের নেই, অথচ মমতাকে তাঁরা বিজেডির নবীনবাবুর মতো ভরসাও করতে পারতেন না, তার প্রধান কারণ আমাদের বাংলার জনবিন্যাসে। ওড়িশায় মুসলিম সংখ্যালঘুদের সংখ্যা ২.১৭ শতাংশ, খ্রিস্টান জনসংখ্যা ২.৭৭ শতাংশ, কাজেই বিজেপির ধারণা হয়েছিল ওড়িশার হিন্দু জনসংখ্যার বেশিরভাগটাই একসময়ে তাঁরা পেয়ে যাবেন। কিন্তু আমাদের বাংলাতে মুসলমান এবং সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ৩০ শতাংশ, এই জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ বাম, এবং এক ভালো অংশ তৃণমূলের দিকে ছিল। নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুরের আন্দোলনের সময়েই বাংলার এই গরিব মুসলমানের সমর্থন তৃণমূলের দিকেই চলে এল, এই সংখ্যালঘু ভোটের বিরাট ঘাটতির ফলেই বামফ্রন্ট হেরে যায়, বা এখনও তারা জমি ফিরে পাচ্ছে না। বিজেপি এটা টের পেয়েছিল, নির্বাচনী পাটিগণিতের কথা মাথায় রেখে সংখ্যালঘু ভোট কাছছাড়া করবেন না মমতা, আবার সিপিএম বিদেয় হওয়ার আগেই বিজেপির সঙ্গে ন্যূনতম সখ্য, কোনও রকম বোঝাপড়া রাজনৈতিক আত্মহত্যা হবে, এটা বুঝেছিলেন, বোঝেন মমতা। কাজেই স্টান্স বদলাতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে প্রকল্প, অনুদান ইত্যাদির জন্য কিছু বোঝাপড়ায় হয়তো গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল, কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপের পরেই গলা চড়িয়ে বিজেপি, তাদের আদর্শ ইত্যাদির বিরোধিতায় নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দিয়েছে তৃণমূল দল, যে দায় নবীন পট্টনায়কের ছিল না।
নবীন পট্টনায়কের লড়াই ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে, মমতা লড়েছেন এক সংগঠিত ক্যাডার বেসড পার্টির সঙ্গে, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়ে গেছেন, আজ বস্তি তো কাল রেল রোকো তো পরশু রাস্তায়, তারপরের দিন ধর্মতলা। রুপোর চামচ মুখে দেওয়া নবীনবাবুকে এটা করতে হয়নি, করতে হলে তিনি রাজনীতি হয়তো করতেনই না। কোনও মাথাফাটার ব্যাপার নেই, ২১ জুলাইয়ের গুলি খাওয়া নেই, মিছিল, অনশন ধর্না নেই, বাবা মারা গেলেন, পাকা মাথাদের সমর্থনে আস্কা থেকে জিতেই কেন্দ্রে মন্ত্রী, ক’মাস পরে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বিজেপির সখ্যে বেশিদিন থাকতে পারেননি, তার প্রধান কারণ বাংলার সংখ্যালঘু জনবিন্যাস। এই জনবিন্যাস মমতার দিক থেকে সরে বিজেপির দিকে তো যাবে না, তাহলে এর দাবিদার সিপিএম, কিন্তু সেও তো কোনওভাবেই পুরোটা পাবে না, আর না পেলে সরকারেও আসবে না, কাজেই আপাতত বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলার সংখ্যালঘু ভোট মমতার ভরসা, নবীন পট্টনায়কের নয়। যে নকশা তৈরি হয়েছিল মধ্য আশিতে আর আশির শেষ থেকে কাজ শুরু হয়েছিল, এবং ফুলে ফেঁপে উঠেছিল ৯০-এ, সেই আঞ্চলিক দলগুলো দিয়ে কংগ্রেস হারাও, কমিউনিস্ট হারাও, তারপর আঞ্চলিক দলগুলোর ক্ষমতা দখল করে একচ্ছত্র রাজত্ব করবে আরএসএস–বিজেপি, সেটা ওড়িশাতে হল, হালে মহারাষ্ট্রতেও হল। কিন্তু পশ্চিমবাংলা, ৩০ শতাংশ বেশি সংখ্যালঘু মানুষের ভোটকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে জেতা অসম্ভব, তেলঙ্গানার আইডেন্টিটি পলিটিক্স-এর সঙ্গে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানকে মেলাতে পারছে না বিজেপি। একইভাবে অন্ধ্রে তেলুগু বিড্ডা হয় জগন রেড্ডি নয় চন্দ্রবাবু নাইডু, বিহারে নীতীশ কুমার বা তেজস্বী যাদব যে বিহারিয়ানার কথা বলছেন তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন না বিজেপির কোনও নেতা, সেই কারণে বিহারে বিজেপির বড় মুখ নেই, এমনি এমনিই নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী নন।
সব মিলিয়ে এই আঞ্চলিক দলের যে নীল নকশা নামিয়েছিল আরএসএস–বিজেপি তা একটা সময় পর্যন্ত কংগ্রেসকে হারিয়েছে, কমিউনিস্টদেরও হারিয়েছে, কিন্তু তারপর তারা নিজেদের আইডেন্টিটি পলিটিক্সে নেমে গেছে। বাংলায় মমতা এক বাঙালি পাশের বাড়ির মহিলা, যিনি লড়ছেন বিজেপির বিরুদ্ধে, এক অবিসংবাদিত নেতার বিরুদ্ধে যিনি চোলাই চোলাই বাজবে জয়ের ভেড়ি বলে, দিদিকে হারানোর ডাক দেন এবং হারেন, আবার হারবেন। দুটো দল, একই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের আঁচে বেড়ে ওঠার পরেও তৃণমূল বিজেপির স্বপ্ন অনুযায়ী উবে যাওয়া তো দূরস্থান, উল্টে সরব হচ্ছে বিজেপি বিরোধিতায়। স্ট্রাইক রেটের দিকে চোখ রাখুন, কংগ্রেসের মুখোমুখি বিজেপি দারুণ খেলছে, কিন্তু তৃণমূলের কাছে হেরে ভূত। বিজেপির তত্ত্বে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, আঞ্চলিকতার বৈচিত্র্যে হাওয়া দেওয়া, আমাদের দেশের ফেডেরাল স্ট্রাকচারটা আরও বেশি করে উঠে এসেছে, ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্য, পোশাকের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে আরএসএস–বিজেপির এক জাতি, এক নেতা, এক ভাষার থিওরির ঠিক উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে আছে তৃণমূলের আজকের অবস্থান। তার প্রথম শত্রুকে গোহারান হারিয়েই বসে থাকেনি তৃণমূল, তার পরের শত্রুকেও সে একইভাবে চিহ্নিত করেছে, এবং এক্কেবারে মুখোমুখি সংঘাতে নেমেছে। উল্টোদিকে নবীনবাবু তাঁর প্রথম শত্রু কংগ্রেসকে হারালেন কিন্তু বিজেপির সঙ্গে বিরোধিতাও বাড়ালেন না, সেই সুযোগটা নিয়েই বিজেপি আজ দখল করেছে ক্ষমতা। হ্যাঁ, এই কারণেই নবীনবাবু হেরে গেলেন, বিজেডি উবে যাওয়ার মুখে, অন্যদিকে তৃণমূল আরও বেশি ক্ষমতা নিয়ে রাজ্যের গদিতে।