নয়াদিল্লি: প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী (Indira Gandhi) তাঁর বাবা ডঃ কে সুব্রহ্মণ্যমকে প্রতিরক্ষা উৎপাদনের সচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। পরে রাজীব গান্ধী (Rajiv Gandhi) প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাবাকে পিছনে ফেলে রেখে তাঁর থেকে জুনিয়র একজনকে ক্যাবিনেট সচিব (Cabinet Secretary) পদে নিযুক্ত করেছিলেন। ফলে যেদিন আমার কাছে বিদেশমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব এল, সেদিন মনে হয়েছিল বিনা মেঘে বজ্রপাত হল জীবনে। কথাগুলো বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের (EAM S Jaishankar)।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে (Interview) বিদেশমন্ত্রী তাঁর জীবনের অনেক স্মৃতি রোমন্থন করেন। বিদেশ মন্ত্রকের চাকরি থেকে দেশের মন্ত্রী হওয়ার সুদূর পথের পেরিয়ে আসার কাহিনি শোনান। জয়শঙ্করের বাবা ডঃ কে সুব্রহ্মণ্যমও ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের দুঁদে আমলা। জয়শঙ্কর বলেন, আমারও স্বপ্ন ছিল সেরা আমলা হওয়ার। যাতে আমি একদিন বিদেশ সচিবের পদে বসতে পারি।
আরও পড়ুন: Visva Bharati University: শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা অশিক্ষিত, বিস্ফোরক মন্তব্য বিশ্বভারতীর উপাচার্যের
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বিদেশ সচিব পদে ছিলেন। তারও আগে চীন ও আমেরিকার মতো দেশের ভারতীয় দূতাবাসের শীর্ষ দূতস্তরীয় পদে নিযুক্ত ছিলেন। জয়শঙ্করের বাবার মৃত্যু হয় ২০১১ সালে। তাঁকে এদেশের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলীদের মধ্যে অন্যতম একজন বলে গণ্য করা হয়।
জয়শঙ্কর বলেন, আমি চাইতাম সেরা বিদেশ মন্ত্রকের অফিসার হব। বাড়িতেও আমাদের সকলেরই মনে ছিল যে, আমার বাবা, যাঁর সমস্ত যোগ্যতা ছিল কিন্তু তাঁকে ক্যাবিনেট সচিব পদে নিয়োগ করা হয়নি। আমার উপর কোনও চাপ না থাকলেও আমার কেবলই মনে হতো, আমাকে সেরা অফিসার হতে হবে। জয়শঙ্কর বলেন, ১৯৭৯ সালে জনতা সরকারের আমলে তিনিই ছিলেন সম্ভবত কনিষ্ঠ সচিব।
১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন ফের প্রধানমন্ত্রী হন, জয়শঙ্কর বলেন, তখন বাবা প্রতিরক্ষা উৎপাদন মন্ত্রকের সচিব ছিলেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে আমার বাবাকেই প্রথম সরিয়ে দেন ইন্দিরা। অথচ, প্রতিরক্ষা জগতের প্রত্যেকেই জানেন, ডঃ কে সুব্রহ্মণ্যম তাঁর কর্মক্ষেত্রে কতটা পারদর্শী ছিলেন, বলেন বিদেশমন্ত্রী।
জয়শঙ্কর বলেন, আমার বাবা খুবই সোজাসুজি কথা বলতে ভালোবাসেন। তার জন্যই তাঁকে সরানো হয়েছিল কিনা তা আমি জানি না। হতে পারে সেটাই সমস্যা হয়েছিল কিনা ইন্দিরা গান্ধীর! তারও পর আমার বাবাকে পিছনে ফেলে তাঁরই জুনিয়র একজনকে যখন ক্যাবিনেট সচিব করলেন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, তখনও বাবা কাউকে কিছুই বলেননি। এসব কথা খুব কমই আলোচনা হতো। কিন্তু, যেদিন আমার দাদা সচিব পদে উন্নীত হয়েছিলেন, সেদিন বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন। গর্বিত হয়েছিলেন দাদার জন্য, সাক্ষাৎকারে বলেন জয়শঙ্কর।
বিদেশমন্ত্রী বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি সচিব পদে উন্নীত হই। এতটুকু রাখঢাক না করেই তিনি বলেন, আমাদের পরিবারের কাছে একটাই লক্ষ্য ছিল, সচিব পদে নিয়োগ। ২০১৮ সালের পর আমার জীবনে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো রাজনীতির প্রস্তাব আসে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেন। কথাটা শুনে ঘোর কাটতেই কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল আমার। আমি কেন, হয়তো যে কেউ আমার জায়গায় থাকলে, তাঁরও একই অবস্থা হতো।
জয়শঙ্কর তাঁর ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করার সময়টুকু নিয়ে বলেন, আমি যখন মন্ত্রী হয়েছি তখন আমি রাজনীতির কিছুই জানি না। বহু রাজনীতিককে খুব কাছ থেকে এতদিন দেখেছি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু, রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে কথা বলব, ভাবতেও পারিনি। তিনি স্বীকার করেন, আমি তখন অন্যদের দেখতাম, তাঁদের থেকে শিখতাম। এক-এক সময় এমন কিছুতেই ঢুকে পড়েছি যার আদ্যোপান্ত কিছুই জানি না। অথচ, ঘটনাক্রমে শিখে নিয়েছি। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, এই যে আমলা ও মন্ত্রীর মধ্যে তফাত, একে কি আপনি চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন? জয়শঙ্করের চকিত জবাব ছিল, নিশ্চই, এক্কেবারে।