Sunday, June 8, 2025
Homeচতুর্থ স্তম্ভFourth Pillar | ৫ রাজ্যেই বিজেপি হারবে, গোহারান হারবে

Fourth Pillar | ৫ রাজ্যেই বিজেপি হারবে, গোহারান হারবে

Follow Us :

মোদিজির আর নতুন কোনও প্রকল্পের ঘোষণা বাকি নেই, হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা বলা শেষ। অতএব নির্বাচন কমিশন ৫ রাজ্যে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করে দিল। কাজেই আনুষ্ঠানিক ভেরি বেজে যাওয়ার এই মুহূর্তেই এটাই আলোচনার বিষয় হওয়া উচত, এই পাঁচ রাজ্যে কী হতে চলেছে। প্রথমে চলুন মিজোরামে। ৪০টা আসন আছে। কংগ্রেসকে হারিয়ে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট ক্ষমতায়। আগে যারা স্বাধীন মিজোরামের কথা বলত, এখনও তারা প্রকাশ্যে সেই দাবি করে না বটে কিন্তু মিজোরামের আলাদা পতাকা, সংবিধান চায়, তাদের রাজ্যের আলাদা গান আছে। কংগ্রেসকে সরিয়ে মিজোরামে ক্ষমতায় আসার পরে তারা কি বিরাট কিছু করেছে? না, বরং রাজ্য জুড়েই মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আছে। মিজোদের মধ্যে শিক্ষার হার খুব ভাল ৯১.৩৩ শতাংশ, কিন্তু সমস্যা বেকারত্বের। ট্যুরিজম এমন কিছু বাড়েনি, যোগাযোগ এখনও খুব ভালো নয়, সব মিলিয়ে রাজ্যে অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি ভালো মাত্রায় আছে। আবার অন্যদিকে আদি বাসিন্দারা মণিপুরের ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে গেছেন এটাও সত্যি। এক ফ্রন্টাল অর্গানাইজেশন তৈরি করেছিল ওখানকার সেকুলার কংগ্রেস বিরোধী মানুষজন, তার নাম জোরাম পিপলস মুভমেন্ট, গত নির্বাচনে তারাও ৬টার মতো আসন পায়। এবার কংগ্রেস ৪০টা আসনে বৃহত্তম দল হচ্ছেই, এবং ওই জোরাম পিপলস মুভমেন্ট-এর সমর্থন নিয়ে তারাই ক্ষমতায় আসবে। বিজেপি এবারে একটা আসনও পাবে কি না সন্দেহ আছে। মণিপুরে বিজেপির ভূমিকা গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের আদিবাসীদের বিজেপি বিরোধী করে তুলেছে আর মিজোরাম তো মূলত আদিবাসীদের রাজ্য, ৯৫ শতাংশ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায়ের।

এবার যাওয়া যাক মধ্যপ্রদেশে। গুজরাতেরও আগে এই মধ্যপ্রদেশ ছিল জনসঙ্ঘের দুর্গ কাজেই এই রাজ্য বিজেপির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। সমস্যা হল গোটা রাজ্যে কর্নাটক সিন্ড্রোম দেখা দিয়েছে আজ বেশ কিছু মাস ধরে। আমাদের দেশের মানুষকে সর্বংসহা বললেও কম বলা হয়। গরিবস্য গরিব মানুষ, একবেলা খায়, অন্য বেলায় সবাই মিলে বসে ভজন কেত্তন করে। সেই কবে থেকেই বলে আসছে, কোই নৃপ হোয়ে, হমে কা হানি। কেউ রাজা হলে আমার ক্ষতি কী? নিজের খুদকুঁড়োতে বেঁচে থাকার এক আশ্চর্য শক্তি আছে ভারতবাসীর। কিন্তু সেই তারাই নিজের ভোটকে বড্ড সম্মান করে, দলবদলুদের ঘেন্না করে। নির্বাচনের ইতিহাস বলছে, বেশিরভাগ দলবদলুরা হেরে যায়। কর্নাটকেও তাই হয়েছিল, মধ্যপ্রদেশেও সেটাই হতে যাচ্ছে। গতবার কংগ্রেস ভাঙিয়ে যে ভাবে শিবরাজ সিংয়ের মন্ত্রিসভা তৈরি হয়েছিল, তা মানুষ মনে রেখেছে। নির্বাচনের পরে মিলিয়ে নেবেন, বিজেপির সব থেকে খারাপ ফল হবে ওই চম্বল, গোয়ালিয়রে যেখান থেকে উঠে এসেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এতটাই খারাপ অবস্থা যে প্রধানমন্ত্রী ভোপালে গিয়ে জনসভায় জিজ্ঞেস করছেন, আপনারা আমার কাজে খুশি তো? একবার নয় তিনবার, কিন্তু একবারের জন্যও শিবরাজ সিং চৌহানের কাজের কথা মানুষের সামনে তুললেন না। জানেন ওটা তুললে মানুষ মুখের উপর না বলে দেবে। কাজেই এখনও আমরা জানি না মধ্যপ্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মুখ কোনজন? দলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গী, ক্যাবিনেট মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, প্রহ্লাদ প্যাটেল ছাড়াও ৭-৮ জন সাংসদ দাঁড়াচ্ছেন। হেরে গেলে সাংসদ থেকে যাবেন, যেমন এ রাজ্যে লকেট ইত্যাদিরা থেকে গেছেন। ওদিকে কংগ্রেস উজ্জীবিত, কমলনাথের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। অনেকে বলছেন ২৩০ আসনে কংগ্রেস ১২০-র মতো আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে। আমার কাছে এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে কংগ্রেস অনায়াসে ১৩০-১৩৫টা আসন পেয়ে সরকার তৈরি করবে।

আরও পড়ুন: ২০২৪-এ বিজেপি হারবে, তার লক্ষণ পরিষ্কার

চলুন তেলঙ্গানায়, আলাদা রাজ্যের দাবি মেনেছিল কংগ্রেস। তাদেরই আমলে মনমোহন সরকার তেলঙ্গানা পৃথক রাজ্যে সিলমোহর দেন। কিন্তু আন্দোলন করেছিলেন কে সি আর, কাজেই তিনিই ক্ষমতায় আছেন দুটো টার্ম। বিরোধিতায় কংগ্রেসের থাকার কথা কিন্তু মধ্যিখানে বিজেপি উঠে আসছিল। এতটাই তাড়াতাড়ি যে বিজেপি দলের এগজিকিউটিভ কমিটির এক বৈঠক এই হায়দরাবাদেই ডেকেছিল, গত লোকসভায় ৪টে আসনও পেয়েছিল। কে চন্দ্রশেখর রাও বিজেপিকেই মূল শত্রু ধরে নিয়ে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ে তোলার জন্য ঘোরাফেরাও শুরু করেন। কিন্তু এরই মধ্যে কংগ্রেসের উত্থান, বিজেপি পিছোতে থাকে। কর্নাটকে জয়ের পর কে সি আর-এর দল ছেড়ে নেতাকর্মীরা কংগ্রেসে যোগ দিতে শুরু করে। কে সি আর তাঁর বিজেপি বিরোধী রাজনীতি বন্ধ করে আপাতত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আছেন বটে, কিন্তু এটাও ভাবার কোনও কারণ নেই যে তিনি চাইলেই বিজেপির দিকে ঝুঁকতে পারেন। কারণ দলের এক বিরাট অংশ কট্টর মোদি বিরোধী এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের। কাজেই এ রাজ্যের ১১৯টা আসনের মধ্যে বিজেপি গতবারের ৩টে আসন ধরে রাখতে পারলেই যথেষ্ট। লড়াই কে সি আর এবং কংগ্রেসের মধ্যে, সমানে সমানে লড়াই। কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলেই কংগ্রেস খানিক বেশিই চোখে পড়ছে। অন্যদিকে কে সি আর গত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যের কোষাগার খুলে দিয়েছিলেন রাজ্যের প্রায় প্রতিটা অংশের, জাতের, বর্ণের মানুষকে খুশি করতে। এই বিশাল ডাইরেক্ট বেনিফিসিয়ারির দল ওনার ভরসা। এখনও এই লড়াই সমানে সমানে থাকলেও কংগ্রেসের পালে হাওয়া বাড়ছে। সেই গতি বজায় থাকলে তেলঙ্গানাতেও কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতেই পারে। ছত্তিশগড়ে লড়াই বিজেপি আর কংগ্রেসের, বিজেপি জিতবে এরকম আশা বিজেপির নেতারাও করেন না। কিছু সার্ভেতে হারলেও বিজেপির আসন অনেকটা বাড়বে বলে দেখানো হচ্ছে, ওগুলো বানানো। ছত্তিশগড়ে যা ছিল তাই থাকবে, ওখানে বাঘেল সরকারের কাজ, বিশাল আদিবাসী সমর্থন আর ওই আদিবাসীদের বিজেপি বিরোধিতাই ওখানে কংগ্রেসের জয় আর বিজেপির হেরে যাওয়ার কারণ। ওই ৯০টা আসনে কংগ্রেস ৭১টা আসন ছিল, এবারও ৬৫ থেকে ৭৫-এর মধ্যেই থাকবে।

বাকি রইল রাজস্থান যেখানে আবার কংগ্রেস আর বিজেপি মুখোমুখি। রাজস্থানে প্রতি পাঁচ বছরে সরকার বদলায়, সেই প্যাটার্ন মেনে নিলে বিজেপির ক্ষমতায় আসার কথা। কিন্তু বিজেপির সমস্যা রাজ্যের সবথেকে বড় বিজেপি মুখ বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকে কেবল নয়, তাঁর সমর্থকদেরও টিকিট না দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা। রাজ্যবর্ধন রাঠোর ইত্যাদির মতো এক ডজনেরও বেশি সাংসদকে আসরে নামানো হবে বলে খবর, কিন্তু বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া কি এই অপমান সহ্য করবেন? তিনি প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ঘুঁটি চালতে শুরু করলেই বিজেপির অবস্থা খারাপ হবে। অন্যদিকে গেহলত সরকার তার বিভিন্ন প্রকল্প দিয়েই অ্যান্টি ইনকমব্যান্সি খানিক কাটানো চেষ্টা করেছেন। গেহলত-পাইলট ঝগড়া আপাতত বন্ধ কিন্তু টিকিট বিতরণের পরে সেই সন্ধি কতটা থাকবে সেটাও দেখার। কিন্তু এরমধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক চালটা দিলেন গেহলত, নির্বাচন ঘোষণার আগেই তিনি সরকারিভাবেই জাতিগত জনগণনার কথা ঘোষণা করলেন। ওবিসি কোটার পার্সেন্টেজ বাড়ালেন এবং নির্বাচন ঘোষণার ঘণ্টা দুইয়ের মধ্যে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, কে সি ভেনুগোপাল সাংবাদিক বৈঠকে বসে জানিয়ে দিলেন ১) জাতিগত গণনা কেবল নয়, জাতিগত গণনার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক সমীক্ষা করতে হবে, ওনারা ক্ষমতায় এলেই সেটা করবেন। ২) এর আগে জাতিগত জনগণনা নিয়ে কংগ্রেসের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, তাঁরা তা শুধরে নিতে চান। ৩) কংগ্রেস মনে করে জনগণনার ভিত্তিতে নতুন করে চাকরি, শিক্ষা ক্ষেত্রে সংরক্ষণ এবং সম্পদের রি-ডিস্ট্রিবিউশন হওয়া উচিত। এর প্রভাব রাজস্থানে পড়বে না? রাজস্থানেও ওই পিছিয়ে পড়া জাতি বা অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া জাতির মানুষদের মোট সংখ্যা ৬০ শতাংশের মতোই হবে। সেক্ষেত্রে বিজেপিকে হয় এই ওবিসির দাবি, জাতিগত জনগণনার দাবি মেনে নিতে হবে। আবার মেনে নিলে আপার কাস্টের ভোট পড়বেই না, কাজেই আরও দিন ১৫-২০ পরে বোঝা যাবে রাজস্থানের ঠিকঠাক ছবিটা। কিন্তু এই মুহূর্তের কথাই যদি বলতে হয় তাহলে অ্যাডভান্টেজ বিজেপি। ছবিটা বদলাতেই পারে দুটো কারণে, ১) জাতিগত জনগণনার ইস্যুতে, ২) বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার দল-বিরোধী অবস্থানের ফলে।

তার মানে এই মুহূর্তে বিজেপির কাছে খেলাটা ৪-১ এ দাঁড়িয়ে, এরথেকে ভালো কিছু হবে না, খারাপ হতেই পারে। কংগ্রেসের কাছে ৪-১ এর সম্ভাবনা খোলা, ভালো হলে ৫-০ হতে পারে, তার থেকে খারাপ হলে ৩-১ হতে পারে। কিন্তু তার চেয়ে খারাপ কিছু হবে না। এবং পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন, ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কিছু বলা যাক। ইন্ডিয়া জোট কিন্তু এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কোথাও থাকবে না। ঠিক সেই কারণেই লক্ষ করুন, ইন্ডিয়া জোট নিয়ে আপাতত কোনও উচ্চবাচ্যই নেই, কংগ্রেসও চায় না এই জোটের বিষয়টা এখন সামনে আসুক। রাজস্থানে, মধ্যপ্রদেশে আপ আর বিএসপি লড়ছে। বিএসপি-র ভোট আরও কমবে, সমাজবাদী পার্টি লড়ছে, কিন্তু শোনা যাচ্ছে তা নিয়ে সম্ভবত কিছু কথাবার্তা চলছে। আপ বিএসপি এই দুই রাজ্যে একটাও আসন পাবে না। এমনকী ভোট কাটুয়া হওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের নেই। তেলঙ্গানা, রাজস্থানে ১০-১৫টা আসনে প্রার্থী দেবে সিপিএম, তেলঙ্গানাতে একটা আসনও জিততে পারবে না। রাজস্থানে এবারে তারা আবার ১-২টো আসন পেতে পারে। কিন্তু রাজস্থানে খেলা জমে যাবে যদি বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া বা তাঁর সমর্থকরা একটা মঞ্চ তৈরি করে নেমে পড়েন। না, এ সম্ভাবনা এক্কেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শেষের কথা হল বিরোধীদের হাতে এসেছে এক ব্রহ্মাস্ত্র, এ নিয়ে আরও বিশদে লিখব আগামিকাল। কিন্তু এই জাতিগত জনগণনার ইস্যু কেবল এই ৫ রাজ্যের নির্বাচনেই নয় ২০২৪-এর নির্বাচনের রাজনীতিকেও উল্টোখাতে বইয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সঠিকভাবেই ভেবেছেন রাহুল, খাড়্গে, নীতীশ, দেখাদেখি নবীন পট্টনায়কও রাজ্যে জাতিগত জনগণনার ঘোষণা করেছেন। মোদিজির উপর চাপ বাড়ছে, উনি চাপ দিচ্ছেন ইডি-সিবিআইকে, সে আরেক দিনের আলোচনা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Nitish Kumar | BJP | বিজেপি-নীতীশ জোট আদৌ টিকবে? আসন রফাতেই শুরু প্রবল ঝা/মেলা, দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Suvendu Adhikari | শাহজাহানের ফাঁ/সি চাই, সন্দেশখালিতে বিরাট দাবি শুভেন্দুর
00:00
Video thumbnail
Mahua Moitra | বিয়ের পর কী করছেন মুহুয়া? দেখুন এই ভিডিও
00:00
Video thumbnail
Narendra Modi | Nitish Kumar | বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতীশই? মোদির গেম প্ল্যান কী?
00:00
Video thumbnail
Weather Update | বর্ষা কবে আসছে? বিরাট আপডেট আবহাওয়া দফতরের
00:00
Video thumbnail
Nitish Kumar | BJP | বিজেপি-নীতীশ জোট আদৌ টিকবে? আসন রফাতেই শুরু প্রবল ঝা/মেলা, দেখুন এই ভিডিও
06:12
Video thumbnail
Birbhum | TMC | বীরভূমে শুরু ২১শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি?
02:30:08
Video thumbnail
Mahua Moitra | বিয়ের পর কী করছেন মুহুয়া? দেখুন এই ভিডিও
01:42
Video thumbnail
Child Asthma | কী কী কারণে শিশুদের মধ্যে হাঁফানি দেখা যায়?
00:38
Video thumbnail
Child Asthma | কী কী নিয়ম পালনে হাঁফানি থেকে শিশুদের রক্ষা করা যাবে
01:34