জামশেদপুর এফ সি–১ এস সি ইস্ট বেঙ্গল–০
(ঈশান পন্ডিতা)
ছাপ্পান্ন মিনিটের মাথায় আদিল শেখ চোট পেয়ে বসে যাওয়ার সময়েই মনে হয়েছিল পারবে কি ইস্ট বেঙ্গল বাকি সময়টা তাদের গোল অক্ষত রাখতে? শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। ৮৮ মিনিটে গ্রেগ স্টূয়র্টের কর্নার থেকে হেড করে গোল করে ঈশান পন্ডিতা ম্যাচের ফয়সালা করে দিলেন। এবং ওই মুহুর্তেই শেষ হয়ে গেল লাল হলুদের দশজন ভারতীয়ের লড়াই। আদিল চোট পাওয়ার আগে রেনেডির টিমের এগারো জনই ছিলেন ভারতীয়। আদিলের পরিবর্তে নামানো হল নেদারল্যান্ডসের ড্যারেন সিডোয়েলকে। খুব একটা খারাপ খেলেননি সিডোয়েল। কিন্তু তাতে শেষরক্ষা হল কোথায়?
দলগত শক্তির বিচারে মাঠে নামার সময় দুদলের অবস্থা ছিল ৭০-৩০। চার খুবই ভাল বিদেশি নিয়ে নেমেছিল জামশেদপুর। ডিফেন্সে পিটার হার্টলে, মাঝ মাঠে এল সাবিয়া এবং ফরোয়ার্ডে গ্রেগ স্টূয়ার্ট এবং জর্ডন মারে। আই এস এল-এর ম্যাচ খেলে খেলে ওঁরা পোক্ত হয়ে উঠৈছেন। এদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন ভাল মানের ভারতীয় ফুটবলারকে নিয়ে জামশেদপুর এবার খুবই ভাল খেলছে। ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়ে এগারো ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে তারা লিগ টেবলের শীর্ষে চলে গেল। আর ইস্ট বেঙ্গল পড়ে রইল সেই ছয় পয়েন্টেই। রেনেডির কাজ আপাতত শেষ। তাঁকে আবার ফিরে যেতে হবে সহকারি কোচের দায়িত্বে। ১৯ জানুয়ারি ইস্ট বেঙ্গলের পরের ম্যাচ থেকে কোচের দায়িত্বে মারিও রিভেরা। কিন্তু রেনেডি যে তিনটি ম্যাচে হেড কোচের দায়িত্ব পালন করলেন, সেই ম্যাচগুলোকে ভোলা যাবে না। হ্যাঁ, জয়ের সন্ধান তিনি দিতে পারেননি লাল হলুদকে। কিন্তু সীমিত শক্তি নিয়ে কীভাবে তুল্যমূল্য লড়াই করতে হয় তার নমুনা রেখে গেলেন।
সেই ৪-১-৪-১ ছকে শুরু করেছিল ইস্ট বেঙ্গল। সামনে ড্যানিয়েল চিমার বদলে সেম্বোই হাওকিপ। চিমাকে ছেড়েই দিল ইস্ট বেঙ্গল। তাঁর বদলে আসছেন ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার মার্সেলো। পর্তুগাল এবং স্প্যানিশ লিগে খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই ২৪ বছর বয়সীর। কিন্তু তিনি যখন আসবেন তখন দেখা যাবে। মঙ্গলবার বাম্বোলিম আ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে ইস্ট বেঙ্গলের স্ট্রাইকার বলতে ছোট চেহারার হাওকিপ, আদতে যিনি মিডফিল্ডার। এবারের লিগে দুটো গোল করেছেন। কিন্তু সেই দুটো সেট পিস থেকে এবং হেডে। স্ট্রাইকার হিসেবে মানিয়ে নেওয়ার মতো গুণ তাঁর নেই বললেই হয়। তার উপর ডাবল স্ট্রাইকারে খেললে তবু কিছু একটা করলেও করতে পারতেন। কিন্তু সিঙ্গল স্ট্রাইকারে ডাহা ফেল।
হাওকিপের পিছনে চার মিডফিল্ডার ছিলেন নামতে, মহম্মদ রফিক, সেঙ্গু এবং মহেশ। রফিক ছাড়া বাকি তিন জনেই পাহাড়ি। কি লড়াইটাই না লড়ল ছেলেগুলো। কিন্তু ওদের মধ্যে লড়াকু মনোভাব যতটা আছে স্কিল সেভাবে নেই। সারা মাঠ জুড়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে গেল ওরা। বল তাড়া করে বেশির ভাগ সময় কেড়েও নিল বিপক্ষের পা থেকে। জামশেদপুরের আক্রমণের সময় নিজেদের বক্সের সামনে ভিড় জমিয়ে বিপক্ষ স্ট্রাইকারদের গোলের মুখ না দেখতে দেওয়ায় ওরা খুবই সফল। কিন্তু একটা ডিফেন্সচেরা পাস কিংবা ভাল ফ্রি কিক ওদের পা থেকে পাওয়া যায়নি। বিপক্ষ ডিফেন্সকে বিব্রত করা তো দূরের কথা, ওরা জামশেদপুর গোলকিপার পবনকে একটাও কঠিন পরিস্থিতির সামনে ফেলতে পারেনি। ডিফেন্স করতে করতে একেবারে শেষে এসে মাথা নীচু করতে হল। না হলে ওদের এই ফুটবলেরই জয়গান করতে হত।
তবে ৮৮ মিনিটে গোল খেয়ে ম্যাচ হারলেও প্রশংসা করতে হবে লাল হলুদ ডিফেন্সের, যার নেতৃত্বে ছিলেন আদিল শেখ। পাশে অঙ্কিত মুখার্জিকে নিয়ে যে ৫৬ মিনিট তিনি মাঠে ছিলেন তখন এক বারও মনে হয়নি ইস্ট বেঙ্গল গোল খেতে পারে। ডান দিকে অমরজিৎ এবং বাঁ দিকে হীরা মণ্ডলকে নিয়ে যে ডিফেন্স তৈরি করেছিলেন আদিল তা তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রায় সামলে দিয়েছিল। ডাচ ফুটবলার ড্যারেন সিডোয়েলের উচ্চতা তেমন নয়। আদতে তিনি ডিফেন্সিভ মিডিও। কিন্তু উপায় না পেয়ে তাঁকেই সেন্টার ব্যাকে নামালেন রেনেডি। প্রায় মেরে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল কোথায়। এই চারজনের সামনে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন সৌরভ দাস আগের দিনের মতোই ভাল। এবং বেশ ভাল গোলকিপার অরিন্দম ভট্টাচার্য। বেশ কয়েকটি বল বাঁচিয়েছেন তিনি। পেয়েছেন ভাগ্যের একটু সাহায্যও। একবার বল বারে লেগে ফিরে এল। আর একবার খুব কাছ থেকে জর্ডন মারে তাঁর হাতে বল তুলে দিলেন। তবে এ সবই খেলার অঙ্গ। কিন্তু দু মিনিট আগে গোল খাওয়ায় পুরো লড়াইটাই নিরর্থক হয়ে গেল।
নতুন কোচের হাতে পড়ে কি ইস্ট বেঙ্গলের দুঃসময় কাটবে? এখনও বাকি আছে নয়টা ম্যাচ। ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষে সংখ্যাটা কম নয়। আপাতত তারই প্রতীক্ষায় থাকা ছাড়া লাল হলুদ সমর্থকদের আর কী-ই বা করার থাকতে পারে।