Monday, June 9, 2025
HomeআজকেAajke | কেজরিওয়ালের পরেই মমতা?
Aajke

Aajke | কেজরিওয়ালের পরেই মমতা?

যাঁরা সারা দেশে এতগুলো রাজ্যের সরকার চালাচ্ছেন তাঁরা দুর্নীতি করছেন না, করছেন কেবল বিরোধীরা

Follow Us :

আমাদের দেশে গণতন্ত্র উবে গেছে সেই কবে, চলছে এক সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ। অনেকেই প্রশ্ন করবেন সেটা আবার কী? নির্বাচন হচ্ছে, আমরা ভোট দিচ্ছি, ইলেকশন কমিশন আছে, প্রত্যেক দল প্রার্থী দিচ্ছে, প্রচার করছে কিন্তু গণতন্ত্র নেই? না নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ আর গণতন্ত্র এক নয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রতে একাধিক দল থাকবে, এবং তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবে দেশের মানুষ। তাঁরা সংসদে যাবেন, আইন সভায় বসে দেশের আগামী কাজের রূপরেখা তৈরি করবেন, সরকার সেটা এগজিকিউট করবেন, সেরকমভাবেই যাতে কাজ হয় তার দেখরেখ করবেন। মানে দেশ চলবে দেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা, এটাকেই অফ দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল বলা হয়। সেটাই গণতন্ত্র। কিন্তু এই গণতন্ত্রের এক কদর্য রূপ আছে, একে বিকৃত গণতন্ত্রও বলা যায়, যা পরবর্তীতে এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের জন্ম দেয়, আমাদের দেশ সেই ফ্যাসিবাদের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠবাদ হল সেই ব্যবস্থা যেখানে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল সংখ্যালঘু দলের প্রতিনিধিদেরকে দেশ চালানোর কোনও দায়িত্ব দিতে তো চায়ই না, উল্টে সেই সংখ্যালঘু দলমুক্ত, বিরোধী দল মুক্ত এক শাসন চায়, দেশ চায়। মানে আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কাজেই আমাদের মতো করে আমরা দেশ চালাব, বিরোধীরা হল দেশদ্রোহী, তারা এতদিন দেশকে ডুবিয়েছে, আমরাই দেশ গড়ব, আমরা বিরোধী-মুক্ত ভারত চাই। এই যে স্লোগান কংগ্রেস-মুক্ত ভারত, এর আগে কখনও শুনেছেন? এমনকী এমার্জেন্সির সময়েও কি বিরোধীরা কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের কথা বলেছেন। জওহরলাল নেহরু পার্লামেন্টে চলে আসতেন কমিউনিস্ট নেতা হীরেন মুখার্জির ভাষণ থাকলে, সেই সময়ে তরুণ জনসঙ্ঘ নেতা সাংসদ অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভাষণ মন দিয়ে শুনতেনই শুধু নয়, তাঁকে ডেকে বলতেন ভালো বলেছ। এ রাজ্যে বিধান রায় তাঁর তীব্র সমালোচক জ্যোতি বসুকে ডেকে এনে ঘর থেকে আনা খাবার খাইয়ে বলেছিলেন শরীরের দিকে নজর দাও, না হলে আমার বিরোধিতাই বা কী করে করবে? নরসিমা রাওয়ের সরকার, তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন। অটলজি নিজেই বলেছেন যে প্রত্যেক দেশের সদস্যরা সেদিন হাঁ করে দেখেছিল আমাদের দেশের গণতন্ত্রের প্রসারতা। রাজীব গান্ধী নিজে ব্যবস্থা করেছিলেন অটলজির চিকিৎসার, তাঁকে বিদেশে হাসপাতালে রেখে কেবল চিকিৎসাই করাননি, তা ছিল বিনামূল্যে এবং তিনি নিয়মিত তাঁর চিকিৎসার খবর নিতেন। আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাকে পাপ্পু বলেন, কংগ্রেস-মুক্ত ভারতের স্লোগান দেন, বিরোধীদের টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের সদস্য বলেন, এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদ। আর সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের নতুন চেহারা আমরা দেখছি। দু’ দুজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, দেশের সাধারণ নির্বাচনের আগে জেলে, বিরোধী নেতারা জেলে, সাংসদরা জেলে, বিরোধী দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে, আর বিভিন্ন কোম্পানি থেকে রীতিমতো তোলাবাজি চালিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়ে গেছে দলের তহবিলে, হেটস্পিচ চলছে সর্বত্র। প্রায় গোটা দেশকেই ম্যানেজ করা হয়ে গেছে, এবার কি তাহলে মমতা? বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাফ জানিয়েই দিয়েছেন, কেজরিওয়ালের পরে মমতা, আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে।

একটা দলের সাংসদ সংসদে দাঁড়িয়েই এক সংখ্যালঘু সংসদকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, সে দলের এক বিধায়ক বিধানসভার মধ্যেই বলে দেয়, বাড়িতে ইডি পাঠিয়ে দেব। তারা বিরোধী দলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়, বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পুরে রেখে এক নিশ্ছিদ্র শাসনের ব্যবস্থা করে, এটাই ফ্যাসিবাদ। এবং খেয়াল করে দেখুন এই বিরোধী দলের একজনকেও কিন্তু বিরোধিতা করছেন বলে জেলে পাঠানো হয়নি।

আরও পড়ুন: বাংলায় তৃণমূল, বিজেপি, কং-বাম-আইএসএফ কতটা এগিয়ে, কতটা পিছিয়ে?

জরুরি অবস্থার সময়ে সাফ বলা হয়েছিল এই সব মানুষজন দেশের সুরক্ষা, সার্বভৌমত্বের জন্য বিপজ্জনক, তাই তাদের জরুরি অবস্থার এই ধারা অনুযায়ী জেলে পাঠানো হয়েছে। মাথা উঁচু করে, স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দিতেই মোরারজি দেশাই থেকে ফার্নান্ডেজ, বহুগুণা থেকে চরণ সিং, জ্যোতির্ময় বসু থেকে পি সুন্দরৈয়া জেলে গেছেন। তাঁদের একজনকেও চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে, কাটমানি খেয়েছে এই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকী ইন্দিরা গান্ধীও সেই জরুরি অবস্থার সময়ে এক বিরোধী-মুক্ত ভারত গঠনের ডাক দেননি, বরং বলেছেন এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা, পরিস্থিতি ঠিক হলে তুলে নেওয়া হবে। ভুল করেছিলেন, অন্যায় করেছিলেন, কিন্তু সে অন্যায় শুধরেও নিয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে কালাপাহাড়ের মতো সমস্ত বিরোধিতাকে থামাতে, সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, ইনডিভিজুয়াল অ্যাক্টিভিস্ট, সমাজকর্মী, অধ্যাপক, সাংবাদিক, সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের ধরে জেলে পুরে দেওয়ার ইতিহাস ভারত দেখেনি। এবং খেয়াল করে দেখুন, যত দুর্নীতি সব অভিযোগ বিরোধীদের দিকে, দেশে ক্ষমতায় যারা, যাঁরা সারা দেশে এতগুলো রাজ্যের সরকার চালাচ্ছেন তাঁরা দুর্নীতি করছেন না, করছেন কেবল বিরোধীরা। এবং সেই বিরোধীদের মধ্যেও অভিযুক্ত কিছু নেতা দল বদলে ফেললে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উবে যাচ্ছে। এনডিটিভির প্রণয় রায়, তাঁর স্ত্রী রাধিকা রায়ের বিরুদ্ধে বিরাট অভিযোগ ছিল, তাঁরা নাকি বহু পয়সার অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত, আজ ইডি ডাকছে তো কাল ইনকাম ট্যাক্স, এয়ারপোর্ট থেকে বিদেশযাত্রা বাতিল করে ফিরে আসতে হয়েছে তাঁদের। তারপর এনডিটিভি আদানি কিনে নিলেন, প্রণয় রায় ঘরে বসে আছেন, আর তাঁকে ডাকছে না ইডি-ইনকাম ট্যাক্স। মামলা উঠে গেছে? না। তিনি আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেই ফাইল খুলে যাবে। একই কথা হিমন্ত বিশ্বশর্মা, প্রফুল্ল প্যাটেল, অজিত পাওয়ার এবং এরকম আরও অনেক নেতাদের নিয়েও বলা যায়, মাথা নুইয়ে ইডি-সিবিআইয়ের হাত থেকে বেঁচেছেন তাঁরা। না হলে জেলে থাকুন। আপ-এর মণীশ সিসোদিয়া জেলে, সঞ্জয় সিং জেলে, এবার অরবিন্দ কেজরিওয়ালও জেলে। ঝাড়খণ্ডে হেমন্ত সোরেন জেলে, যে কোনও মুহূর্তে তেজস্বী যাদবকে জেলে পোরা হতে পারে। আমাদের চ্যানেল সম্পাদক আজ ২৫০ দিন হয়ে গেল এক জেলখাটা আসামির ভুয়ো অভিযোগের ভিত্তিতে জেলেই আছেন। এবং সেই তালিকাতে এরপরের নাম নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্তত বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তো সেটাই জানিয়েছেন। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম, বিজেপি রাজ্য সভাপতি আগাম জানিয়ে দিয়েছে যে অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হলেন, এরপরেই জেলে যাবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মানে ইডি কি এখন বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে আগাম সব খবর জানিয়ে দিয়েই কাজ করছে? শুনুন কী বলছেন মানুষজন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির নেতা নন, ১০ কোটি পশ্চিমবঙ্গবাসীর নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে গ্রেফতার করলে কী হতে পারে তার ধারণা বিজেপি নেতৃত্বের কমবেশি জানা, তাই হুমকি দিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা চলছে, চলুক। কিন্তু তার চেয়েও যেটা গুরুত্বপূর্ণ, একজন সিটিং চিফ মিনিস্টারকে গ্রেফতার করার পরেও, দুজন মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরেও, সারা দেশে ফ্যাসিবাদের এই প্রবল বাড়বাড়ন্তের পরেও যদি বিরোধীরা এক জায়গায় না এসে নিজেদের দলীয় স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, তাহলে ইতিহাস তাঁদের ক্ষমা করবে না। একদিন তো সূর্য উঠবেই, একদিন তো স্বৈরাচারের অবসান হবেই, সেদিন মুক্ত ভারতের নাগরিকেরা এই ক্লীব স্বার্থপর বিরোধীদেরও মনে রাখবে যারা এক ফ্যাসিবাদকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিয়েছে।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Video thumbnail
Amit Shah | BJP | তামিলনাড়ুর দলীয় সভা থেকে বিজেপির বাংলা দখলের হুঙ্কার অমিত শাহের
00:00
Video thumbnail
SSC | High Court | হাই কোর্টে রাজ্যের জয়! SSC মামলার শুনানিতে কী কী হল? দেখুন বড় আপডেট
00:00
Video thumbnail
SSC | Calcutta High Court | SSC-এর নয়া বিজ্ঞপ্তি মামলায় শুনানির অনুমোদন, কী জানাল হাইকোর্ট?
00:00
Video thumbnail
Calcutta High Court | ২ চিকিৎসকের বদলির মামলায় শুনানি কবে? দেখুন বড় আপডেট
01:12:00
Video thumbnail
Fake Voter | TMC | নিউটন বিতর্কে নাম উঠছে তৃণমুলের বড় নেতার, দেখুন চাঞ্চল্যকর তথ্য
55:29
Video thumbnail
Rekha Patra | সন্দেশখালির 'শক্তিস্বরূপা' রেখা, শুভেন্দুর সভায় মিলল না দেখা কেন? কী হতে চলেছে?
05:07:56
Video thumbnail
NIA | Calcutta High Court | এবার কলকাতা হাইকোর্টে ভ/র্ৎ/সনার মুখে NIA, দেখুন বড় আপডেট
01:21:08
Video thumbnail
SSC | High Court | হাই কোর্টে রাজ্যের জয়! SSC মামলার শুনানিতে কী কী হল? দেখুন বড় আপডেট
00:52
Video thumbnail
Fake Voter | TMC | নিউটন বিতর্কে নাম উঠছে তৃণমুলের বড় নেতার, দেখুন চাঞ্চল্যকর তথ্য
05:52
Video thumbnail
Calcutta High Court | ২ চিকিৎসকের বদলির মামলায় শুনানি কবে? দেখুন বড় আপডেট
04:50