ক’দিন আগেই আমরা বঙ্গবাসীরা অবাক হয়ে দেখেছি, এই প্রথম বিধানসভায় বিরোধী এবং শাসকদল একসঙ্গে একস্বরে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে কথা বললেন, অখণ্ড বাংলার উন্নয়ন আর বিকাশের কথা বললেন। তৃণমূল জমানাতে এই প্রথম, বাম জমানাতে সম্ভবত একবার, তার আগে একবারও নয়। কিন্তু যদি দেশের অন্যান্য সরকারের ইতিহাস ঘাঁটেন তাহলে এমনকী সবদলের বিধায়করা মিলেও দিল্লি গেছেন রাজ্যের হয়ে দরবার করতে এমন বহু তথ্য পাওয়া যাবে। আসলে আমাদের এখানে রাজনৈতিক মতভেদ এক চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায়, চলে গেছে। নির্বাচনের সময় মাতৃসমা কাউকে যে ভাষায় আক্রমণ করা হয় বা পুত্রসম কাউকে যে শব্দে বিদ্ধ করা হয় তা সত্যিই অন্য কোথাও নেই। এই তো সেদিন সংসদ ভবনের বাইরে বিকাশ ভট্টাচার্য আর সাক্ষী মহারাজের এক ছবি দেখলাম, হেসে গড়িয়ে পড়ছেন, দেখেছি তো মমতা-ইয়েচুরির হাসিমুখ আলাপচারিতার ছবি কিন্তু রাজ্য রাজনীতির কথা উঠলেই ভাবখানা লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান। একে অন্যের মুখোমুখিও হতে পারেন না সেই আবহের বাইরে এসে শাসক এবং বিরোধী দল অখণ্ড বাংলার কথা বললেন, বাংলার বিকাশ উন্নয়নের কথা বললেন সে কি কম কথা? রাজ্যের উন্নয়ন আর রাজ্যের রাজনীতি এক প্যারালাল ব্যবস্থা, উন্নয়ন চলুক এক লাইনে, রাজনীতি হোক না অন্য লাইনটায়, কিন্তু এটা তো এক আইডিয়াল সিচুয়েশন এক স্বপ্ন স্বপ্ন চিন্তা, বাংলায় বার দুয়েক দেখেছি। এবার তিন নম্বরটা দেখতে চাই আর সেটাই আমাদের বিষয় আজকে, বঙ্গভঙ্গ নিয়ে একমত, এবার বিনেশ ফোগট নিয়ে একমত হোন।
সোনার জন্য লড়াই হবে, সোনা আসছে ঘরে এমনটা জানার পরেই এসেছিল দুঃসংবাদ, বিনেশ ফোগট তাঁর বিভাগের নির্দিষ্ট ওজনের চেয়ে ১০০ গ্রাম বেশি, হ্যাঁ ১০০ গ্রাম, আর তাই তিনি ডিসকোয়ালিফায়েড। রিংয়ের বাইরে এমনকী হেরে গেলেও যে রুপো তিনি পেতেন তাও পাবেন না, আমরা সেসব জেনে ফেলেছি। আমাদের অলিম্পিক কমিটি, তাদের আমলা দামলারা বলার আগেই যাবতীয় দায় কাঁধ থেকে নামিয়ে রেখে দিয়েছেন। জানানো হয়েছে, বিনেশ ফোগট তো নিজের কোচ আর নিজের ডায়েটিসিয়ান নিয়েই গিয়েছিলেন, আমাদের তো কোনও দায় ছিল না।
আরও পড়ুন: Aajke | ভাতে মারতে চান সেটা সাফ বলুন
যেন বিনেশ ফোগট সোনা পেলে এক নেই দেশের হয়েই সোনার মেডেলটা পেতেন, যেন তিনি ভিক্ট্রি স্ট্যান্ডে উঠলে বাজতই না আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত। উনি ওনার দায় নিজেই নিয়েছিলেন যিনি বললেন সেই তেনারা দল বেঁধে গেছেন প্যারিসে, আরে এয়সা মওকা ফির কহা মিলেগা, সেই ইভনিং ইন প্যারিসের রাতে মুলাঁরুজ-এর উষ্ণতায় অবগাহন করতে। দেশের প্রতিযোগী তো নিজের কোচ নিয়েই এসেছেন, ওনাদের তো কিছুই করার নেই, সোনা পেলে উনিজি বধাই দেবেন, ছাতি ৫৬ ফুলে ৬৩ হবে এই তো। সেখানে সাবোটাজ হল না তো? বিনেশ ফোগট জিতলে উনিজির মুখে যে কালি লাগত তার থেকে বাঁচার চেষ্টা হল না তো? আমরা আমাদের এই উনিজি ক্ষমতায় আসার পর থেকে অনেক কিছুই তো জানতেই পারিনি, জানতেই পারিনি কার খোয়াইস মেটানোর জন্য ১৩০ কোটি মানুষকে ব্যাঙ্ক আর এটিএম-এর সামনে লাইনে দাঁড় করানো হয়েছিল? জানতেই পারিনি উনিজির বন্ধু হরেন পান্ডিয়াকে কারা খুন করল? জানতেই পারিনি গুজরাট গণহত্যার জন্য কারা দায়ী? জানতেই পারিনি পুলওয়ামার সৈন্যরা কার কার গাফিলতিতে মারা গিয়েছিলেন? এটাও জানতে পারব না। কিন্তু এই খবর আসার পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন তা কি খুব বেশি? ভারতরত্ন দেওয়া হোক বা তাঁকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য করা হোক। এমন কী বিরাট দাবি? আসুন না আমাদের বিধানসভাতে আমাদের রাজ্যের খেলা পরিকাঠামো নিয়ে এক তুমুল আলোচনা বিতর্কের পরে এই মর্মে এক প্রস্তাব সবাই মিলে পাশ করি। সে প্রস্তাব যাক সংসদে, সরকারের কাছে, সেখানেও সবাই মিলে এমন এক প্রস্তাব নেওয়া হোক, আমাদের সোনার মেয়েকে নিছক এক নিয়মের বেড়াজালে রেখে সোনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কষ্টটা আমরা সবাই মিলেই ভাগাভাগি করে নিলে কেমন হয়? আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে সেই প্রশ্নই করেছিলাম, বিনেশ ফোগট কে নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব হয় ওনাকে ভারতরত্ন দেওয়া হোক বা ওনাকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য করা হোক, আপনারা কি ওনার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
বিনেশ ফোগট এক প্রতিবাদের নাম, বহু প্রতিবাদের পরে, বহু পরিশ্রমের পরেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না পৌঁছতে পারলে সে হতাশ হয়, এটাও স্বাভাবিক। বিনেশ তাঁর অবসরের কথা জানিয়েছেন, আমরা নিয়ম আর নিয়মের বাইরে সম্ভাব্য বেনিয়মের কথায় যাচ্ছিই না, আমরা চাইব আর একবার বিনেশ ফিরুন রিংয়ের ভিতরে, আর একবার ওজন সামলে একটা সোনা, আপনার সোনা তো কেবল অলিম্পিক্সের সোনা জেতাই নয়, আপনার সোনা তো তারচেয়ে অনেক বেশি। এক নারীর আত্মসম্ভ্রমের লড়াই, মর্যাদার লড়াই, আশা করব এবার নয় তো পরের বার হি সহি, সোনা পরবে আমাদের সোনার মেয়ে, দেশের আমরা সবাই সেই আশাই করব।