না, এখনও পর্যন্ত আমরা জানি না মহাকুম্ভের ওই দুর্ঘটনায় কতজন মারা গেছেন, তাঁদের দেহ কোথায়? বহু লোক উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আত্মীয় স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাঁদেরকে জবাব দেওয়ার লোক নেই। এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে মৃতদের নাম, সংখ্যা কোনওটার ঘোষণা হয়নি। কিন্তু এরমধ্যেই খবর মহাকুম্ভের সাফাই কর্মীদের এক অংশ কাজ করতে অস্বীকার করেছেন। কেন? জানা যাচ্ছে, তাঁদের থাকা আর খাবার দাবার নিয়ে বিরাট অশান্তি, খাবার পাচ্ছেন না, থাকার চালাগুলো হেলে পড়েছে এর মধ্যেই। যাঁরা গেছেন তাঁরা সবাই জানেন যে এই মেলা অন্তত এবারে এক ভিআইপিদের, ভিভিআইপিদের মেলা হয়ে উঠেছে। তাঁরা উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা হতে পারেন, তাঁরা সরকারি আমলা হতে পারেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যের মন্ত্রীসান্ত্রী হতে পারেন, বলিউডের নায়ক নায়িকা হতে পারেন আর মোদি মন্ত্রিসভার কেউ হলে তো কথাই নেই। তাঁদের জন্য আলাদা রাস্তা, আলাদা সিকিউরিটি আর সেসব দেখতে গিয়েই আম আদমির দম আটকে যাওয়া অবস্থা চোখেই পড়ছে না পুলিশ প্রশাসনের। তারমধ্যে আবার সাফাই কর্মীদের বিক্ষোভের ফলে মেলার কিছু অংশে জমছে আবর্জনা। তাঁদের সামলানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে আমলাদের পাঠানো হয়েছে, কিন্তু সেই আলোচনায় অন্য তথ্য উঠে এসেছে। মোদিজি যে কোনও আলোচনায় নেহরুকে টেনে আনেন, মনে করেন নেহরু হচ্ছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী, যাঁর সামনে তিনি বামন, গণেশের বাহন, সেই নেহরুর আমলে কী হয়েছিল সেই কথা বলেই তিনি নিজেদের পাপ এড়াতে চান। যে নেহরু ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে ৫ বছরের বেশি জেল খেটেছেন সেই নেহরুর বিরোধিতা করছেন বিশ্বাসঘাতক আরএসএস-এর এক মিথ্যেবাদী প্রচারক। আসুন আজ সেই মিথ্যেবাদিতার এক কাহিনি নিয়ে কিছু কথা বলা যাক, সেই মিথ্যেবাদিতাই বিষয় আজকে, মহাকুম্ভ, সাফাই কর্মী, শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর মিথ্যে কথা।
সেই কবে ২০১৯-এ অর্ধকুম্ভে আমাদের মোদিজি গিয়েছিলেন, কালো কুর্তা পরে সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে জলে ডুব দেওয়ার ছবি তুলিয়েছিলেন। তারপরে জামাকাপড় ছেড়ে গেরুয়া পোশাক পরে অগ্নি আরতি করেছিলেন, সেসবের ছবি আমরা দেখেছি। এবং সেই দিনেই সাতসকাল থেকে পেয়ারেলাল, নরেশ কুমার, ছৌবি এই তিনজনই উত্তরপ্রদেশের বান্দা থেকে এসেছিলেন, হরি লাল এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশেরই সম্ভল থেকে আর ছত্তিশগড় থেকে এসেছিলেন জ্যোতি।
আরও পড়ুন: Aajke | মহাকুম্ভ, বোবা শুভেন্দু, বোবা মিডিয়া, বোবা রাত দখলের বিপ্লবীরা
এই পাঁচজন সাফাই কর্মীকে সাফসুতরো তাঁবুতে বসানো হল তাও আবার চেয়ারে, ওনাদের জানানো হল যে ওনাদের নাকি সম্বর্ধনা দেওয়া হবে। খানিকপরেই ওনারা তো হাঁ, তাঁবুতে ঢুকলেন নরেন্দ্র মোদি, তারপর জল আনা হল, উনি এই পাঁচ জনের পা ধুইয়ে দিলেন, অজস্র ক্যামেরা, অজস্র সাংবাদিক, এক ইভেন্ট, নেহরু কি সাফাইকর্মীদের পা ধুইয়ে দিতেন ইত্যাদি ইত্যাদি প্রসঙ্গও উঠে এল। ২০১৯-এর পরে সূর্যকে চারবার প্রদক্ষিণ করেছে এই পৃথিবী। তো এখন সেই পা-ধোয়ানো মানুষজনেরা কেমন আছেন? পেয়ারেলাল জানালেন, গত চার বছরে তাঁর মাইনে বেড়েছে ৪৩০০ টাকা, মাইনে ছিল ৮ হাজার, এখন ১২৩০০ টাকা, তখন ঝুপড়িতে থাকতেন, এখনও ঝুপড়িতে, বহুবার আবেদন করার পরেও তিনি ওই পিএম আবাস যোজনার ঘর পাননি। মোদিজি পা ধুইয়ে দেওয়ার পরে ঘর বেরাদরিতে খানিক কদর বেড়েছিল, পত্রকারেরা আসতেন, কিন্তু ক’মাস পর থেকে আবার যে কে সেই। বউবাচ্চা নিয়ে ঝুপড়িতেই রাত কাটানো, সেই বর্ষায় টপ টপ করে জল পড়া পেয়ারেলালকে বুঝিয়ে দিয়েছে ওসব ছিল আদতে নৌটঙ্কি, আমাদের মোদি সাহেব যা মাঝেমধ্যেই করে থাকেন। সেই সাফাই কর্মীদের পা ধুইয়ে দিয়ে নিজের ইমেজ বিল্ডিংয়ে ব্যস্ত আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভুলেই গেছেন তাঁদের কথা। সেবার ছিল অর্ধ কুম্ভ, এবার পূর্ণ কুম্ভ, আবার আসবেন উনি পুণ্যস্নান করতে, আবার ১০০-১৫০টা ক্যামেরার সামনে জলে ডুব দেবেন, আবার নতুন কোনও নৌটঙ্কি করে চলে যাবেন, পেয়ারেলালদের জীবনে আসলে কোনও পরিবর্তন আসবে না, এটাই তাঁদের ভবিতব্য। আমরা আমাদের দর্শকদের প্রশ্ন করেছিলাম যে ২০১৯-এ অর্ধকুম্ভে এসে পুণ্যস্নান করার পরে যে সাফাই কর্মীদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, তাঁদের আবাস যোজনা ঘরও মেলেনি, তাঁরা এখনও সেই ঝুপড়িতেই রাত কাটান, সাকুল্যে মাইনে ১২৩০০ টাকা নিয়ে ৫ জনের সংসার চালান, প্রধানমন্ত্রীর এই পা ধুইয়ে দেওয়া কি তাহলে শুধু এক নাটক, নিজের প্রচার করার জন্য এক ব্যবস্থা? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
দিনে চারবার পোশাক পাল্টে নিজের ইমেজ ধরে রাখার জন্য কখনও ধ্যানে বসে, কখনও মাথায় টুপি পরে জঙ্গল সাফারিতে গিয়ে, কখনও সৈনিকের পোশাক পরে কখনও সাফাই কর্মচারীদের পা ধুইয়ে দিয়ে নানান ইভেন্ট করেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, এসব নিশ্চয়ই ওনার ইভেন্ট ম্যানেজার বাতলে দেন, এবং তার সঙ্গে রাশি রাশি মিথ্যে কথা বলে চলেন, সেই মানুষটা যখন কথায় কথায় নেহরুর সমকক্ষ বা তাঁর থেকেও বড় কিছু একটা হওয়ার দাবি করেন তখন মনে হয় এই নরেন্দ্র মোদি দেশের ইতিহাসে ওনার এই নৌটঙ্কির জন্যই বিখ্যাত হয়ে থেকে যাবেন।