skip to content
Sunday, February 9, 2025
HomeScrollঅদিতির সঙ্গে সাদা কালো | আইআইটি বাবা আর কাঁচা বাদামের গান

অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | আইআইটি বাবা আর কাঁচা বাদামের গান

আইআইটি বাবা কিছুদিন পরে এক আধপাগলা সন্ন্যাসী হিসেবে টিকে থাকবেন

Follow Us :

যেমনটা রোজ করে থাকি, একটা বিষয়ের অবতারণা আর সেই বিষয়কে নিয়ে অন্তত দুটো ভিন্ন মতামতকে এনে হাজির করা, যাতে করে আপনারা আপনার মতটাকে শানিয়ে নিতেই পারেন আবার আপনার বিরুদ্ধ মতটাকেও শুনে নিতে পারেন। আইআইটি মুম্বইয়ে নাকি পড়াশুনো করেছিলেন, তারপর সেখান থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং, ফোটোগ্রাফি, তারপর তিনি নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়াতে গাঁজা টানছেন। এই ছবি ইতিমধ্যেই সব্বার দেখা হয়ে গেছে। তিনি খাপছাড়া ভাবে কখনও বিজ্ঞান, কখনও ধর্মতত্ত্ব, আধ্যাত্মবাদের কথা বলছেন, বলছেন কুম্ভমেলায় বড় বড় বিজ্ঞানীদের এসে এই সাধুসন্তদের সঙ্গে বসা উচিত, বিজ্ঞান আর আধ্যাত্মবাদের এক তালমিল ঘটানোর তালে আছেন তিনি। চারিদিকে চমৎকার চমৎকার রব, তাহলে কিছু তো আছে আধ্যাত্মবাদে, যা নাকি এক আইআইটিয়ানকেও টেনে নেয়ে আসে আধ্যাত্মবাদে, কেবল তাই নয়, সেও জটাজুটধারী সন্ন্যাসী হয়ে ওঠে, হিমালয়ে সাধনা করে ফিরেছেন এরকমটাও শোনা যাচ্ছে। তাহলে প্রমাণিত তো হয়েই গেল যে এসব বিজ্ঞান টিজ্ঞান নিয়ে যতই কপচাও বাবা, শেষ পর্যন্ত ইধর তো আনা হি পড়েগা।

যাঁরা এই আইআইটি পড়ুয়াকে সন্ন্যাসী হতে দেখে আনন্দে আত্মহারা, দু’ চোখ দিয়ে ভক্তির জলধারা গড়াচ্ছে, তাঁদের অনেকের ঘরেই ছেলেপুলে আছে, তারা স্কুল কলেজে পড়াশুনোও করছে, নিশ্চয়ই তাদের এক অংশ মেধাবীও বটে। ঘর ছেড়ে কুম্ভমেলাতে গিয়ে গাঁজা টানলে কেমন লাগবে তাঁদের জানি না, আমার তো ভাবলেই গা শিউরে উঠছে, এ কোন পাঠ পড়ানো হচ্ছে আমাদের? আর এটাই সেই ইকো সিস্টেম যা সারা দেশকে এক মধ্যযুগের অন্ধকারের দিকে নিয়ে চলেছে, কেবল আমাদের নয় সারা বিশ্বের তাবড় ধর্মচর্চার সঙ্গে জ্ঞানচর্চার কোনও বিরোধ ছিল কি? যে আর্যভট্ট শূন্য আবিষ্কার করলেন বা যে আল খোয়ার্জিমি তাঁর বই অ্যালজেবর ওয়্লাল মোকাবেলা লিখে অ্যালজেবরার জন্ম দিলেন দুজনেই কি ধর্মপ্রাণ ছিলেন না? দুজনেই কি তাঁদের জ্ঞানচর্চা ছেড়ে কেবল আধ্যাত্মবাদকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন? কোপার্নিকাস থেকে অ্যারিস্টটল এই জ্ঞানচর্চা করতে গিয়েই কি ধর্ম প্রতিষ্ঠানের কাছে ভিলেন হয়ে ওঠেননি, তাঁরা কি ভেবেছিলেন যে বাইবেলে যা বলা আছে তাই বলা উচিত? মানে ধর্ম চলেছে ধর্মের রাস্তায়, আধ্যাত্মবাদ তার নিজের পথ ধরে হেঁটেছে, আমি কে? আমি কোথা থেকে এসেছি, আমি কোথায় যাব, এ নিয়ে আধ্যাত্মবাদ আর বিজ্ঞানের দুই আলাদা মতামত তো আমরা জানি, একই সঙ্গে দুই মতামতের চর্চাও আমরা দেখেছি, আজ থেকে ১৪৪ বছর আগে যখন মহাকুম্ভ হয়েছিল, সেদিনও সমাজ, জ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞানচর্চা একইভাবে চলেছে, আধ্যাত্মবাদও তার পথেই ছিল। কেউ এক পথে হেঁটেছে, কেউ দুই পথে হেঁটেছে। আবার সেই পথও কি একরকমের নাকি? তারও তো শতভাগ, শতরূপ। আজ হঠাৎ তাকে এক জায়গাতে এনে এক জগাখিচুড়ি বানানোর চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন: অদিতির সঙ্গে সাদা কালো | কলকাতা বনাম মুম্বই, শান্তি বনাম অশান্তি

এবার একটু অন্য জায়গা থেকে দেখা যাক, যাঁরা এই আইআইটি বাবা এবং রিলেটেড গালগল্পগুলোকে সিরিয়াসলি নিচ্ছেন তাঁদের প্রতি আমার খানিক করুণাই হচ্ছে। আদতেই এই ঘটনাগুলো কোনও সিরিয়াস ব্যাপারই নয়। ধরুন সিদ্ধার্থ শঙ্কর, মরেছে, ভালো নামে তো কেউই চিনবেন না, সিধু আমাদের ক্যাকটাসের সিধু, সে তো আদতে ডাক্তার, তো আলোচনাটা কী নিয়ে হবে? তাকে সামনে পেলে গান নিয়ে আলোচনা হবে না ফার্মাকোলজি নিয়ে? ধরুন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, ঠিক ধরেছেন সিপিআইএমএল লিবারেশনে সাধারণ সম্পাদক, তো তাঁর সঙ্গে দেখা হলে কী জানতে চাইব? এবারের হায়ার সেকেন্ডারিতে সাজেশন পেপার? আজ্ঞে হ্যাঁ, উনি সেই পরীক্ষাতে ১৯৭৯-তে প্রথম হয়েছিলেন, তো? আজ দেখা হলে আমরা জানতে চাইব রাজনীতির কথা, তাঁর দলের কথা, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় বা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারে দু’ একবার তাঁদের ডাক্তারি পড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে, হতেই পারে, কিন্তু আদত কথাবার্তা তো সিনেমা নিয়েই হবে, তাই নয় কী? আইআইটি পাশ করে অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমারকে ইতিমধ্যে সবাই চেনেন, কী হিসেবে? একজন অভিনেতা হিসেবে। ভুবন বাদ্যকর, কাঁচা বাদাম গান গেয়ে ফেমাস হয়েছিলেন, নাম ফেটেছিল, এখন? না গায়ক, না বাদাম বিক্রেতা, রানু মণ্ডলের হাল তাই।

এই আইআইটি বাবা কিছুদিন পরে এক আধপাগলা সন্ন্যাসী হিসেবে টিকে থাকবেন, না হলে ঘরে ফিরে গিয়ে চাকরি বাকরি করবেন, এর বাইরে তো কিছু নয়। মানে বলতে চাইছি আপনি যা খুশি বাওয়াল দিতে পারেন, আপনাকে কিন্তু শেষমেশ লোকজন চিনবে আপনার কাজ দেখে, কাজ যদি চেনার মতো হয় চিনবে, না হলে আপনিও ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের একজন, ফুরিয়ে গেল। আচ্ছে শেষ করার আগে আর এক আইআইটি-র কথা না বললেই নয়, আইআইটি মাদ্রাজের ডিরেক্টর ভি কামাকোটি এক সেমিনারে বলেছেন, গোমূত্রে অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, এবং ডাইজেস্টিভ এনজাইম আছে, কাজেই গোমূত্র পান করা উচিত। নিন, এবারে আইআইটির উপরে ভরসা করে সাতসকালে বেরিয়ে পড়ুন, কাছেপিঠে গরু খুঁজে পেলে শরীর ভালো রাখতে গোমূত্র খান। কিন্তু যাওয়ার আগে জেনে যান, এই ভি কামাকোটি মহাশয় কমপিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনো করেছেন, মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছেন একই বিষয়ে, একই বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন, তারপরে উনি আইআইটি মাদ্রাজে কমপিউটার সায়েন্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একজন লেকচারার হিসেবে যোগ দেন, এখন ডিরেক্টর। না, উনি ডাক্তারি পড়েননি, অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়া, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, ডাইজেস্টিভ, ইত্যাদিগুলো ওনার মনে হয়েছে বলে বলেছেন, অতএব একজন কমপিউটার সায়েন্সের লোকের কথা শুনে গোমূত্র খাবেন কি না সেটা আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম।

RELATED ARTICLES

Most Popular