বীরভূমঃ ফের প্রকাশ্যে কাজল-কেষ্ট দ্বন্দ্ব। ১৬ নভেম্বর বীরভূম কোর-কমিটির বৈঠকের আগে ফের কোন্দলের মুখোমুখি ঘাশফুল শিবিরের দুই নেতা।
দীর্ঘ দেড় বছর পর তিহার জেল থেকে মুক্তি পান অনুব্রত মণ্ডল। তারপরই সেপ্টেম্বর মাসে বীরভূমের “বাঘ” ফিরে আসেন নিজের নিচুপট্টির বাড়িতে। অনুব্রত মণ্ডল বীরভূমে ফেরার পর থেকেই প্রশ্ন অব্যাহত কেমন হতে চলেছে কাজল সেখের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক?
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১১ অগাস্ট গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। পরে ইডির করা মামলাতেও গ্রেফতার হন তিনি। কেষ্ট ছিলেন বীরভূমের জেলা সভাপতি। তাঁর গ্রেফতারির পর মনে করা হয়েছিল বীরভূমের পরবর্তী জেলা সভাপতি হতে পারেন কাজল শেখ। কিন্তু সেই জল্পনাকে নস্যাৎ করে ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূম সফরে যান মুখ্যমন্ত্রী। আর সেখান থেকে সাফ জানিয়ে দেন, যতদিন না অনুব্রত মণ্ডল তিহার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বীরভূমে ফিরছেন ততদিন পর্যন্ত জেলার দায়িত্ব তিনি নিজেই সামলাবেন। কাজল শেখকে মাননীয়া বীরভূমের জেলা-সহ সভাধিপতির পদে বসান। এমনকি, অনুব্রত মণ্ডল দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরও তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমের জেলা সভাপতি পদে বহাল রাখেন। জেলা পরিচালনার জন্য তৈরি করে দেন একটি কোর-কমিটি। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী জেলা পর্যবেক্ষক হওয়া সত্ত্বেও অপর নেতা ফিরহাদ হাকিমকেও বীরভূম জেলায় দলীয় কাজকর্ম দেখাশোনা করার ভার দেন তিনি। ৬ সদস্যের দল নিয়ে বীরভূমে গঠন করা হয় কোর-কমিটি। সেই দলে উপস্থিত আছেন কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, রামপুরহাটের বিধায়ক ড. আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়েজুল হক (শেখ কাজল) ও সুদীপ্ত ঘোষ।
আরও পড়ুন: রেফারি হরিশ কুন্ডুকে নিয়ে তীব্র ক্ষোভ! অশান্ত যুবভারতী
কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল তিহার থেকে বীরভূমে ফেরার পর থেকেই দলীয়স্তরেই কোর কমিটির অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বীরভূমের “বাঘ” বীরভূমে ফেরার পরই দলীয় কার্যালয় থেকে কোর কমিটির সদস্যদের ছবি সরিয়ে দিয়ে সেখানে কেবলমাত্র নিজের ছবি রাখেন আর তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে তাহলে কি এবার বিলুপ্তির পথে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়ে দেওয়া কোর কমিটির অস্তিত্ব? জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাতেই কি জেলায় দল পরিচালনার একক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে? কিন্তু সেইসব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ১৬ নভেম্বর বীরভূমে বসতে চলেছে তৃণমূলের কোর-কমিটির বৈঠক বোলপুর তৃণমূল দলীয় কার্যালয়ে।
তবে ১৬ নভেম্বর কোর-কমিটির বৈঠকের আগে ফের প্রকাশ্যে কাজল কেষ্ট দ্বন্দ্ব। অভিযোগ, তৃণমূলের জেলা শিক্ষক সংগঠনের সভাপতির পরিচালনার ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সেখানে অনুব্রত মণ্ডলকে চিফ গেস্ট করা হলেও, আমন্ত্রণ জানানও হয়নি সহ-সভাপতি কাজল শেখকে। আর তা নিয়েই শুরু হয় তরজা।
কাজল শেখকে আমন্ত্রণ না করা নিয়ে তিনি বলেন, “বীরভূম জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি হওয়ার দরুন আমাকে আমন্ত্রণ করা উচিত ছিল। তবে দেখলাম, আমন্ত্রণ পত্র পাইনি। জেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এবং জেলার বিধায়ক, মন্ত্রী সভাপতিদের নেমন্ত্রণ করা হয়েছে কিন্তু আমাকে করা হয়নি, ব্যাপারটা বিবেচনা করা উচিত।”
উল্লেখ্য, জেলা তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি প্রলয় নায়েক। তাঁর নেতৃত্বেই্ বোলপুরের ডাকবাংলা মাঠে আয়োজন করা হয় ফুটবল টুর্নামেন্ট।
টুর্নামেন্টের অনুষ্ঠানের চিফ গেস্ট ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী, কোর কমিটির নেতা সুদীপ্ত ঘোষ, বীরভূমের জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার, মহকুমা পুলিশ আধিকারীক সহ অনেকে। কিন্তু আমন্ত্রণ জানানও হয়নি কাজল শেখকে। যার জেরে এবার প্রকাশ্যেই নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনি।
যদিও বিজেপির কটাক্ষ, তৃণমূলের কোন গোষ্ঠী ক্ষমতায় থাকবে, কে লুটের টাকা বেশি ভাগ পাবে, তার ক্ষমতা প্রদর্শন এই ফুটবল টুর্নামেন্ট।
দেখুন অন্য খবর: