৪০ জনেরও বেশি ভারতীয় সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করা হয়েছে। অভিযোগ, ওই সমস্ত সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ফরেনসিক টেস্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
প্রকাশিত তথ্যে জানা গিয়েছে, ওই তালিকায় রয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিকেরা যারা দেশের বড় বড় মিডিয়া হাউজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। ইন্ডিয়া টুডে নেটওয়ার্ক 18 দ্য হিন্দু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এবং হিন্দুস্তান টাইমসের এক্সিকিউটিভ এডিটর শিশির গুপ্তার মতন বিশিষ্ট সাংবাদিকেরা রয়েছেন এই তালিকায়।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিজিটাল ফরেন্সিক রিপোর্টে যে দশটি ফোন নাম্বারকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে তারমধ্যে পেগাসাস স্পাইওয়্যাররের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই তালিকায় সাংবাদিকেরা ছাড়াও রয়েছেন দেশের তিনজন বড় বিরোধী দলের নেতানেত্রী। একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। মোদি ক্যাবিনেটের দু’জন মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি ছাড়াও রয়েছেন একাধিক শিল্পপতি। করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তারপরেই সন্ধ্যায় ইংরেজি পোর্টাল ‘দ্য ওয়ার’ এর এই রিপোর্টে চাঞ্চল্য ছড়ায় দেশজুড়ে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ভারত ছাড়াও ওই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন দেশের কমপক্ষে ৫০ হাজার ফোন নাম্বার। তাদের সবার ওপরেই নজরদারি চালাতো ইজরায়েলের এই সংস্থাটি।
আরও পড়ুন: আস্থাভোটে জয়, নেপালের নয়া প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা
অন্যদিকে, ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, ৩৭ টি স্মার্ট ফোনকে হ্যাক করেছিল পেগাসাস স্পাইওয়্যার। যাদের ওপর নজরদারি চালাতো তাঁরা ছিলেন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, শিল্পপতি এমনকি নিহত সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি’র স্ত্রীও।
এই তালিকায় রয়েছে দ্য ওয়ার নিউজ পোর্টালের ফাউন্ডিং এডিটর রোহিনী সিংয়ের নামও। নাম রয়েছে নরেন্দ্র মোদি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নিখিল মার্চেন্টের। এছাড়াও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিশিষ্ট সাংবাদিক সুশান্ত সিংয়ের নাম তালিকায় দেখা গিয়েছে। ২০১৮ সালে মোদি সরকারের রাফাল দুর্নীতি নিয়ে তদন্তমূলক সাংবাদিকতা করছিলেন তিনি। তাঁর ওপরেও নজরদারি চলেছিল নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে।
আরও পড়ুন: পেগাসাস কেলেঙ্কারি: সাংবাদিক, মন্ত্রীদের ফোন ট্যাপিংয়ের অভিযোগ খারিজ করল মোদি সরকার
দ্য গার্ডিয়ান, ওয়াশিংটন পোস্ট ছাড়াও ফ্রান্সের সংবাদপত্র লেঁ মন্দে ও জার্মানির একটি নামী কাগজ এই বিষয়ে স্বাধীনভাবে তদন্তমূলক সাংবাদিকতা চালায়। তাদের প্রকাশিত রিপোর্টে দাবি করা হয়, বিশ্বের কমপক্ষে ১০ টি দেশের ১৫৭১ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির ওপর নজর রাখছিল পেগাসাস স্পাইওয়্যার। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফরেনসিক রিপোর্টেও মিলেছে স্পাইওয়্যারের অস্তিত্ব।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক পেগাসাস স্পাইওয়্যারের তালিকায় দিল্লির কোন কোন বিশিষ্ট সাংবাদিকদের নাম রয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের এডিটর শিশির গুপ্তা এবং দ্য ওয়ার এর ফাউন্ডার এডিটর রোহিনী সিং, সিদ্ধার্থ ভরদ্বাজ ছাড়াও রয়েছেন প্রশান্ত ঝা, ডিফেন্স করেসপন্ডেন্ট রাহুল সিং। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে ঋত্বিকা চোপড়া, যিনি এডুকেশন বিট এবং নির্বাচন কমিশন বিটে কাজ করেন। মুজাম্মিল জামিল যিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রে কাশ্মীর বিষয়ক লেখালেখি করেন। সন্দীপ উন্নিথান, যিনি সামরিক বিট রিপোর্টিং করেন। এছাড়াও রয়েছেন আরও বিভিন্ন কলামিস্ট এবং ফ্রীল্যান্স সাংবাদিকেরাও।
অন্যদিকে এই রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রকে প্রশ্ন করা হলে তা কার্যত এড়িয়ে যায় মোদি সরকার। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার এবং গোপনীয়তা রক্ষায় সরকার দায়বদ্ধ। অর্থাৎ নজরদারির অভিযোগটিকে একরকম উড়িয়ে দেয় কেন্দ্র। সেইসঙ্গে ২০১৯ সালের পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিলের প্রসঙ্গ টেনে এনে এই অভিযোগকে খর্ব করার চেষ্টা করা হয়