লকডাউনের জেরে বন্ধ সিনেমা হল। সিনেমা হলের সামনের লম্বা লাইন বহুদিন চোখে পড়ছেনা। সিনেমা হলের সঙ্গে যুক্ত পপকর্ন বা চা এর দোকানিদের অবস্থাও খুব খারাপ। পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গেল স্ক্রিন ধীরে ধীরে এমনিতেই কমে যাচ্ছে। আটশো থেকে কমে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুশোতে। এর পর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো এই লকডাউন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর আগে কিছুদিনের জন্য সিনেমা হল খুললেও পরমুহূর্তে আবার লকডাউন সিনেমা হল গুলোকে একেবারে খাদের ধারে এনে দেয়।
এই প্রসঙ্গে বেশ কয়েক জন হল মালিকের সঙ্গে কথা বলে এই প্রেক্ষাগৃহ গুলির করুণ অবস্থার আভাস পাওয়া গেল।
‘অজন্তা’ সিনেমা হলের মালিক শতদীপ সাহার কথায়, “দ্বিতীয় ঢেউ এর পর লকডাউন শিথিল হওয়ায় সবকিছুই প্রায় খুলে গেছে শুধুমাত্র সিনেমা হল গুলোর ক্ষেত্রেই এখনো কোন কথা নেই। তবে শোনা যাচ্ছে আগামী ১৫ জুলাই সিনেমা হল খুললেও খুলতে পারে। সেই আশাতেই হল স্যানিটাইজ করে চলেছি। ” তিনি আরও বলেন, হাজার সমস্যা থাকলেও আমরা কোন কর্মচারীর চাকরি ছাড়াইনি। প্রথম ছয় মাস তো সকলকে পুরো বেতন দিয়েছি , তবে এখন ব্যবসার অবস্থা এতো খারাপ যে আমরা বাধ্য হচ্ছি অর্ধেক বেতন দিতে। এতোদিন ধরে এই কর্মচারীরা আমাদের সঙ্গে আছে এদের ছাড়ানো সম্ভব নয়। এমনিতেই মাল্টিপ্লেক্স এর সঙ্গে পাল্লা দিতে আমি ‘অজন্তা’ কে নতুন রূপ দিলাম। তবে লকডাউন আমাদের কোমর ভেঙে দিয়েছে। আমার খুবই খারাপ লাগছে কিন্তু উপায় চোখে পড়ছে না। আসলে এই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মহারথীরা যাঁরা সিনেমা থেকেই পরিচিতি পেয়েছে তারা কেউই সোচ্চার হন না সিনেমা হল খোলা নিয়ে। অথচ এই সিনেমার থেকেই তাঁদের এতো নাম। তাই সরকারের কাছে আমাদের হয়ে বলার লোকও নেই । আগামীর দিকে তাকিয়ে আছি যদি সরকার একটু নজর দেন। আমাদের রক্ষণাবেক্ষনের জন্য খরচ তো করতেই হয়। সিনেমা হল খোলা থাক বা বন্ধ। তাড়াতাড়ি হল গুলি খোলার অনুরোধ জানাচ্ছি”।
অন্য দিকে ‘প্রিয়া’ সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্ত বলেন, “সিঙ্গেল স্ক্রিন আগেও কষ্টের মধ্যেই চলতো এখন অবস্থা আরও খারাপ। এই লকডাউনের কারনে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে, সিনেমা হল খোলার সময় হলেও, আবার তৃতীয় ঢেউ এর চোখরাঙানি ভয় দেখাচ্ছে। ”
সিনেমা হলগুলোর সঙ্গে যুক্ত বহু কর্মচারীর চাকরি চলেগেছে । মাল্টিপ্লেক্স গুলির কর্মচারীদের অনেকেই বিকল্প কাজের সন্ধান করছে।
‘বিজলি’ হলের কর্ণধার সুরঞ্জন পাল অবশ্য জানিয়েছেন তিনি কর্মচারীদের পুরো বেতন দিচ্ছেন এখনও। কারণ তিনি বলেন,”ভালো সময়ে আমার পাশে ছিল তারা, এবার আমার পাশে থাকার পালা। তবে অবস্থা স্বাভাবিক না হলে কতোদিন টানতে পারবো জানিনা। কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ না এলে রাজ্য সরকার সিনেমা হল খোলার কথা বলতে পারেনা। সিনেমা হল বন্ধ রেখে সরকারের লাভও নেই । তাই এখন অপেক্ষা করছি ভালো সময়ের আশায়।তবে সরকার আমাদের একটা সাহায্য করতে পারে, হল বন্ধ থাকলেও সব রকম ট্যাক্স দিতেই হচ্ছে, সেটা যদি না নেওয়া হয়, তাহলেও কিছু সুবিধা হয় আমাদের। অথবা এই হল গুলিতে সিনেমার পাশাপাশি অন্য ব্যবসার অনুমতি দিলে সিনেমার হল গুলি বেঁচে যাবে।
সিনে পাড়ায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে আগামী ১৫ জুলাই সিনেমা হল খুললেও খুলতে পারে। তবে আগামী পুজোর আগে কোন সিনেমা মুক্তি না পেলে সিনেমা হল খুললেও কোন ছবি থাকবে না হল মালিকদের হাতে। সব মিলিয়ে সিনেমা হলগুলোর অবস্থা খুব খারাপ ।