কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পেশের দ্বিতীয় দিনেই শাসকদলের নেতার কোমরে গোঁজা বন্দুক উদ্ধার করল পুলিশ। দিনভর মনোনয়ন ঘিরে চলল অশান্তি একাধিক জেলায়। মনোনয়ন পেশে বিরোধী প্রার্থীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদলের বিরুদ্ধে। কোথাও আবার বিরোধীরা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলল। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় শাসকদল। সব মিলিয়ে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেরই যেন রিপ্লে দেখা গেল শনিবার।
মনোনয়ন পেশের দ্বিতীয় দিনে শাসকদলের নেতার কোমরে বন্দুক মিলল। আর শুক্রবার প্রথম দিনে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে খুন হলেন এক কংগ্রেস কর্মী। জখম আরও কয়েকজন। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসকদলের দিকে। ২০১৮ সালেও পঞ্চায়েত ভোটের আগেই জেলায় জেলায় একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। এবারের ভোটেও পাঁচ বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে কি না, প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বিরোধীরা অনেক দিন আগে থেকেই বলে আসছে, গত ভোটের কথা মাথায় রেখেই এবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হবে। নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা অবশ্য সেই দাবি শুক্রবারই খারিজ করে দিয়েছেন। তবু বিরোধীরা সেই দাবিতে অনড়। এদিনই রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করে রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানিয়ে আসেন। যদিও সে ব্যাপারে রাজ্যপালের খুব একটা কিছু করার নেই। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শুক্রবার দিল্লিতে দেখা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। সূত্রের খবর, শুভেন্দুও শাহের কাছে একই দাবি করে এসেছেন। তবে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন না চাইলে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরও কিছু করার থাকবে না।
শনিবার মনোনয়ন পেশের দ্বিতীয় দিনে জেলায় জেলায় যে হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তাতে উদ্বিগ্ন খোদ রাজ্যপাল। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ পেয়েই বোস তড়িঘড়ি তলব করেন নির্বাচন কমিশনারকে। রাজভবন সূত্রের খবর, রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনারকে ভোটের আগের এই হিংসাকে কড়া হাতে দমন করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানতে চান, কেন মনোনয়ন ঘিরে এ ধরনের হিংসা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার অবশ্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের কাছে গত দুদিনের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন। বিরোধীরা কমিশনের এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নয়। তারা সরাসরিই এই কমিশন ব্যর্থ বলে অভিযোগ এনেছে। এদিন প্রদেশ কংগ্রেসের তরফ থেকে গতকাল খড়গ্রামে দলীয় কর্মীর খুন এবং মনোনয়নে বাধার প্রতিবাদে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দফতরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, এই কমিশনার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দায়িত্ব নেওয়ার দ্বিতীয় দিনেই তাঁর কার্যকলাপে বোঝা গিয়েছে, তিনি কতটা অযোগ্য। একই অভিযোগ তুলেছে সিপিএম, বিজেপিও। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাতসকালেই টুইটে লেখেন, মনোনয়ন পেশের শুরুই হল খড়গ্রামের খুন দিয়ে। মর্নিং শোজ দ্য ডে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বহরমপুরে বসে হুমকি দিয়েছেন, একটা নির্বাচনই শেষ কথা বলবে না। তৃণমূল ভয় পেয়েছে মানুষ জাগছে বলে। তাই ভোট অবাধ করতে চাইছে না তারা। আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, শান্তিতে ভোট করুন। মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আপনার দলকে সাফ করে দেব। জেলার সব দখল করে নেব আমরা। দয়া করে ভোটটা করুন। শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই হিংসা আর সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে বাজার গরম করতে চাইছে।