কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে পুরনিগমের ভোটে (Civic Polls) কেন্দ্রীয় বাহিনীর (Central Force) প্রয়োজন নেই। বুধবার হলফনামা দিয়ে তা জানিয়ে দিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State Election Commission)। পুরভোটে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা (Central Force) নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা কী, তা বুধবারের মধ্যে হলফনামা আকারে জানাতে বলা হয়েছিল। সেই সূত্রেই এদিন উচ্চ আদালতে (Calcutta High Court) হলফনামা জমা দেয় কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় বলা হয়েছে, কোথাও বড় ধরনের আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নেই। ৮৬৬ ভোট কেন্দ্রের ৫৪৮৬টি বুথের নিরাপত্তায় থাকবে ৮,৪৬১ পুলিস। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র পুলিস মোতায়েন থাকবে। পেট্রোলিং, নাকা চেকিংয়ের জন্য অতিরিক্ত ২,৯৭৫ পুলিস থাকবে। কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা নেই।
পুরভোটের (Civic Polls) আগে বিধাননগরে লাগাতার অশান্তির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি (BJP)। ভোটের দিন অশান্তির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় আবেদনে। হলফনামায় বিধাননগরে (Bidhannagar) উল্লেখও রয়েছে। বলা হয়েছে, বিধাননগরে অভিযোগ পেয়ে ৩ প্রার্থী ও ২ নেতার নিরাপত্তার বন্দোবস্ত পুলিস করেছে। কমিশন জানিয়েছে, ভোটের সময় প্রতি পুরনিগমে একজন করে স্পেশাল অবজার্ভার ও তিন জন জেনারেল অবজার্ভার থাকবে। প্রতিটি বুথ ও স্ট্রং রুমে সিসিটিভি থাকবে।
বিধাননগরের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি-র পোস্টার-ফেস্টুন ছেঁড়া হচ্ছে। বিজেপি-র কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। এই অভিযোগ জানিয়ে হাইকোর্টে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষে সওয়াল করেন বিজেপির আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দ। ২, ৪, ৮ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির উপর আক্রমণ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। আবেদনে বলেন, এর আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হয়েছে। তাই এই নির্বাচনও শান্তিপূর্ণ ভাবে করতে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন।
আরও পড়ুন- IPac-TMC : বাংলা, ত্রিপুরা আর মেঘালয় এই তিন রাজ্য আই প্যাক আর দেখবে না
কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র পালটা বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কমিশন সিনিয়র পুলিস আধিকারিকদের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সওয়াল-জবাবের সময় বিজেপির আর এক আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় তিনটি আবেদন পেশ করেন। এক, উপযুক্ত নিরাপত্তা দিয়ে ভোট হোক। কোন ধরনের নিরাপত্তা রাখা হবে, সেটা আদালত ঠিক করুক। দুই, ১৯৯৪ সালের রাজ্য পুর আইনের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ওয়ার্ডের যে কোনও জায়গা থেকে পোলিং এজেন্ট করা হোক। বুথভিত্তিক এলাকা অনুযায়ী পোলিং এজেন্ট নয়। কারণ, ওই এজেন্ট ঠিক করে ওই ওয়ার্ডের প্রাথী। তিন, গণনা একইদিনে করা হোক। সমস্ত পুরসভার ভোট শেষ হলে। না হলে কোনও পুরনির্বাচনের ভোটের ফল আগে প্রকাশ হলে, পরের নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে।
শুনানির এক পর্যায়ে, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব প্রশ্ন তোলেন, ‘পুরনিগমের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আইনি পথ কী? কোন পথ ধরে হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ জারি করতে পারে?’ জবাবে, বিজেপির আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দ বলেন, ‘অশান্তি, গোলমাল, পূর্বের ভোট অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে হাইকোর্ট পারে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নির্দেশ দিতে।’ সদ্য ত্রিপুরাতেও যে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরভোট হয়েছে, তা-ও তিনি উল্লেখ করেন। কমিশনের আইনজীবীর কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে যদি ভোট হয়, তাতে আপনার কি আপত্তি কিছু আছে? কারণ আপনি তো চাইছেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র জানান, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নাকা, রুট মার্চ, এরিয়া ডমিনেশন সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়ম করে রুট মার্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কমিশন ইতিমধ্যে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি-র সঙ্গে বৈঠক করেছে। জবাব শুনে, প্রধান বিচারপতি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা কি শুধুই কাগজে-কলমে? বাস্তবে আদৌ কি করা হচ্ছে?’ কমিশনের জবাব, ‘হ্যাঁ, বাস্তবে হচ্ছে।’ প্রধান বিচারপতি পালটা প্রশ্ন তোলেন, ‘কলকাতা পুরনভোটের সময় একই কথা বলেছিলেন। তার পরেও দেখা গেল প্রার্থীকে মারধর করা-সহ বহু অভিযোগ আদালতে জমা পড়েছে। কমিশনের আইনজীবীর প্রত্যুত্তর, ‘অন্যান্য রাজ্যেও এই ধরনের অভিযোগ হয়ে থাকে। এটা রাজনৈতিক দলের কাজ।’ এদিন শুনানি শেষ রায়দান স্থগিত রাখে হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি জানান, রায় ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে।