লন্ডন: অন্যদের উপদেশ দিলেও, নিজেই তার উল্টো কাজ করছে ব্রিটেন। একদিকে আইন এনে ২০৫০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন শূন্য শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা, আবার তারই বিপরীতে উচ্চমাত্রায় দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানি উত্তোলনের জন্য গভীর কয়লাখনি খননের জন্য অনুমোদন। এই কয়লা ইস্পাত (Steel) উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হবে। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) এই অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ব্রিটেনের সরকারের সমালোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধী পক্ষ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এর ফলে ব্রিটেনের জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা বাধা পাবে।
উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে ওয়েস্ট কাম্ব্রিয়া মাইনিং (West Cumbria Mining) এই উডহাউস কোলিয়ারি (Woodhouse Colliery) নামে এই কয়লাখনি খনন করবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিবর্তে এই কোকিং কয়লা (Coking Coal) ইস্পাত শিল্পে ব্যবহৃত হবে। প্রত্যাশা রয়েছে এর ফলে ৫০০ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। ২০১৪ সালে উন্মোচিত এই প্রকল্পটি ব্রিটিশ সরকারের স্বতন্ত্র জলবায়ু উপদেষ্টা প্যানেল (Independent Climate Advisory Aanel)-এর পাশাপাশি সমস্ত বিরোধী দল (Opposition Parties) এবং গ্রেটা থানবার্গ (Greta Thunberg) ও গ্রিনপিস (Greenpeace) সহ জলবায়ু আন্দোলনকর্মীদের ও সংস্থার সমালোচনার মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুন: Google Most Searched: ভারতে গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চ কী হয়েছেন জানেন?
মন্ত্রী মাইকেল গোভ (Minister Michael Gove) অনুমোদন দেওয়ার পর ডিপার্টমেন্ট অব লেভেলিং আপ, হাউসিং অ্যান্ড কমিউনিটিস (Department of Levelling Up, Housing and Communities)-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, “এই কয়লা ইস্পাত উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হবে এবং আর নাহলে রফতানি করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে এই কয়লা ব্যবহার করা হবে না। প্রত্যাশা রয়েছে খনিটি পুরোপুরি ব্যবহৃত হবে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান ও বৃহত্তর অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।” রিপোর্ট বলছে, উডহাউস কোলিয়ারি থেকে বছরে যা কয়লা উত্তোলন হবে, তা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির প্রত্যাশা রয়েছে। পরিকল্পনা রয়েছে, কয়লা খনি চালু হওয়ার পাঁচ বছর পর বার্ষিক কয়লা উত্তোলনের ৮০ শতাংশ ইংল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে পাঠানো হবে।
ইস্পাত শিল্প এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রে (Stell Industry and Power Plant) ব্যবহৃত কয়লা পোড়ানোর (Coal Burning) ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে এই গ্রিনহাউস গ্যাস (Greenhouse Gas) সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। বিশ্বের যে দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত অথবা কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অঙ্গীকার নিয়েছে, তারা সম্পূর্ণ রূপে কয়লা ব্যবহার ত্যাগের পক্ষে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে কয়লাখনি খনন নিয়ে ব্রিটেনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন পরিবেশবীদরা। বলা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ব্রিটেন অগ্রনী ভূমিকা নিচ্ছে, আবার তারাই কয়লা খনি খনন করতে চলেছে। বিষয়টা পুরোপুরি হাস্যকর এবং অঙ্গীকারবিরোধী। অন্যদের কয়লা উত্তোলন করতে না বলে নিজেরাই কয়লা খনন করতে চলেছে ব্রিটেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বেশিরভাগ শিল্পই জ্বালানি হিসেবে কয়লা ছেড়ে হাইড্রোজেন ব্যবহারের পথে ঝুঁকেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে শিল্পবিপ্লবের (Industrila Revolution) দেশ ব্রিটেনে এক সময় ৩,০০০টি কোলিয়ারি ছিল। ১২ লক্ষ মানুষ কাজ করতেন কয়লা শিল্পে। ২০১৫ সালে ব্রিটেনে শেষ গভীর কয়লাখনিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত নতুন কয়লা খনিটির আয়তন হবে ২৩ হেক্টর। খনন করে কয়লা উত্তোলনযোগ্য করতে ২ বছর সময় লাগবে। ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী এর পিছনে ১৬৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড (২০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ হবে। আগামী ৫০ বছর এই কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন হবে।