কলকাতা: লক্ষ্মীবারের গোধূলি লগ্নে ইডেনের মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আশায় আছি কখন বাংলার অধিনায়ক সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসবেন। কিন্তু এ কী? বাংলা শিবির থেকে জানিয়ে দেওয়া হল সাংবাদিক সম্মেলন করবেন না অধিনায়ক। মানে খুব স্পষ্ট। প্রথম দিনের শেষে সাংবাদিকদের কোনও অপ্রিয় প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না মনোজ তিওয়ারি। তাই বলে রঞ্জি ফাইনালের প্রথমদিন একটাও ‘কোট’ দেবেন না অধিনায়ক। গোধূলি পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে ইডেনের আকাশ জুড়ে। দুই দলের সব ক্রিকেটারেরা ইডেন ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন। বেঙ্গল ক্যাপ্টেনের দেখা নেই। কোথায় তিনি? গুটিকয়েক সাংবাদিক তখনও ইডেনের লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রীমশাই ক্যাপটেনের অন্তত একটি ‘কোটের’ অপেক্ষায়। ততক্ষণে রঞ্জি ফাইনাল কভার করা বেশিরভাগ সাংবাদিকের ম্যাচ কপি ইতিমধ্যেই ফাইল করা হয়ে গিয়েছে। অবশেষে ড্রেসিংরুম থেকে বের হলেন মনোজ তিওয়ারি। চেনা সাংবাদিকদের দেখে মুখে হাসি। দূর থেকে বললেন ‘আজ ছেড়ে দাও।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা? অপরপ্রান্ত থেকে প্রশ্ন ধেয়ে আসল-‘লড়াইটা কঠিন হয়ে গেল না?’ উইকেট বরাবর এই ডেলিভারি ক্যাপটেন ছাড়বেন না জানা ছিল। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে রকসলিড ডিফেন্স মনোজের-‘শুরুটা খারাপ মানে এটা নয় যে শেষটাও খারাপ হবে। বাংলা ড্রেসিংরুমের পরিবেশ দুর্দান্ত। আমরা জানি কীভাবে প্রত্যাবর্তন করতে হয়। যেসব জায়গায় আজ ঘাটতি ছিল সেগুলি মিটিয়ে বাংলা ঘুরে দাঁড়াবেই।’
মনোজ তিওয়ারি ইডেন থেকে বেরনোর একটু আগেই বিস্ফোরক মেজাজে দেখা গেল পিচ কিউরেটর সুজন মুখার্জিকে। বললেন, ‘উইকেটের দোষ দিয়ে কী লাভ? ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। ম্যাচের প্রথম ঘন্টায় একাবারেই ভালো খেলেনি বাংলার ব্যাটাররা। সৌরাষ্ট্রের ব্যাটিং-এর সময় একটি ক্যাচও মিস করে বাংলা এবং একইসঙ্গে কমপক্ষে ৩০ রান বেশি দেয়।’ কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছে বাংলা রঞ্জি ফাইনাল ইডেনে হারলে কোনওভাবেই সেই দায় নিজের ঘাড়ে নেবেন না তিনি।
সৌরাষ্ট্রের অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাটের মুখে স্মিত হাসি। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ মনে করিয়ে দিচ্ছে গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর করা মন্তব্যটাই সঠিক- ‘গ্রিনটপ যদি সৌরাষ্ট্রের ব্যাটারদের সমস্যা তৈরি করে, তাহলে সেটা বাংলার ব্যাটারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’ কী দারুণভাবে আজ ম্যাচ শুরুর প্রথম একঘন্টায় মিলে গেল। বলা যেতে পারে এই ‘গ্রিন টপ’-ই বাংলার জন্য যেন বুমেরাং হয়ে গেল…
‘আমরা বেসিকটা ঠিক রেখেছি। অতিরিক্ত কিছু করার চেষ্টা করিনি। এতেই এসেছে সাফল্য’- ইডেন ছাড়ার আগে বলে গেলেন সৌরাষ্ট্রের কোচ।
ইডেনের একটা দৃশ্য শেয়ার না করে পারছি না। ৫০ করে উঠে আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন অভিষেক পোড়েল। দু’-হাত জড়ো করে প্রণাম করছেন আর হয়ত ভগবানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। ইডেনে তখন শঙ্খধ্বনি বেজে উঠছে। এক অনন্য আবেগঘন মুহূর্ত মাদকতা বাড়াচ্ছে ক্রিকেটের নন্দনকাননে।
স্কোরকার্ড যখন ৬৫/৬, মনে হচ্ছিল আইসিইউ-তে চলে গিয়েছে পুরো বাংলা দল। সেখান থেকে শাহবাজ-অভিষেক জুটির ১০১ রানের পার্টনারশিপ আইসিইউ থেকে জেনেরাল বেডে নিয়ে আসল বাংলা দলকে। লোয়ার অর্ডার পারফর্ম করলে ২০০-র গন্ডি পেরোতে পারত বাংলা। কিন্তু ১৭৪-এই থামতে হল বঙ্গব্রিগেডকে। প্রথমদিনের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত সৌরাষ্ট্রের স্কোর ৮১/২। বাংলার থেকে ৯৩ রানে পিছিয়ে রয়েছে সৌরাষ্ট্র। দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘন্টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বাংলার জন্য। জ্বলে উঠতেই হবে আকাশদীপ-মুকেশ-ঈশানদের! ইডেন থেকে ফেরার সময়েও দেখছিলাম শঙ্খধ্বনি বাজিয়ে চলেছেন নবদ্বীপের স্টেশনারি দোকানের মালিক অশোক চক্রবর্তী। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছিলেন, ‘২০০১ সালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যেমন কামব্যাক করেছিল সৌরভের টিম ইন্ডিয়া, তেমন এবারেও সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রত্যাবর্তন করবে বাংলা…’