নয়াদিল্লি: সামরিক বাহিনী (Military) এবং আধা সামরিক বাহিনীর (Paramilitary) লড়াইয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে সুদান। দুই বাহিনীর লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন ভারতীয় আছেন বলে জানা গিয়েছে। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮০০-এর বেশি। এছাড়াও কর্মসূত্রে সুদানে গিয়ে আটকে পড়েছেন কয়েক হাজার ভারতীয়। এবার আটকে পড়া এই ভারতীয়দের উদ্ধারে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জানা গিয়েছে, সুদানে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফেরাতে আমেরিকা, ব্রিটেন, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে কথা বলছে ভারত সরকার। ইতিমধ্যে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরশাহির বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। দুই দেশের তরফেই ভারতকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, নয়াদিল্লিতে ২৪ ঘণ্টার জন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেই কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সুদানের রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা চালানো হচ্ছে। যার মাধ্যমে আটকে থাকা ভারতীয়দের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। এদিকে দূতাবাসের তরফেও ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে।
আরও পড়ুন:Mukul Roy | বিজেপিতে যোগ-জল্পনার মাঝেই পঞ্চায়েতে পরিবর্তনের ডাক মুকুলের
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে সুদানের (Sudan) পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমাগত সেনা ও আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। বুধবারও সুদানের খার্তুম শহরে বড়সড় বিস্ফোরণ (Blast) হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনতে গেলে তাদের প্রাণসংশয়ের ঝুঁকি থাকতে পারে বলেই জানানো হয়েছে। বিগত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সুদানের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবারই জি-৭ দেশের বিদেশমন্ত্রীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দ্রুত যাতে এই সংঘর্ষ থামানো যায়, তারও আর্জি জানান জি ৭ এর বিদেশমন্ত্রীরা।
শনিবার সুদানে সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে সেদেশের আধাসামরিক বাহিনীর। একে অপরের ঘাঁটি (Base) লক্ষ্য করে উভয়েই হামলা চালায়। তার পরপরই খার্তুমেই বিস্ফোরণের (Explosions) ঘটনা ঘটে। জানা গিয়েছে, সুদানের সেনাপ্রধান আবদুল ফতেহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি তথা আধা সেনার প্রধান মহাম্মদ হামদান ডাগলোর মধ্যে ক্ষমতার দখল নিয়ে লড়াই চলছে। দেশের আধা সামরিক বাহিনী- ‘র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’কে (RSF) সেনাবাহিনীর মর্যাদা দেওয়ার দাবি নিয়েই শুরু হয়েছে এই লড়াই। ধীরে ধীরে এই সংঘর্ষ গৃহযুদ্ধের আকার নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করেছে সুদানের বায়ুসেনা। আবার, এই বায়ুসেনাই সুদানের আধা সামরিক বাহিনী- ‘ব়্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স’-এর (RSF) ঘাঁটিগুলিতে আকাশপথে লাগাতার গোলাবর্ষণ করে চলেছে। আকাশপথে দিনভর ঘুরছে যুদ্ধবিমান। এমনিতে সুদানে গৃহযুদ্ধ নতুন কিছু নয়। কিন্তু এবার দেশের দুই নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তা নজিরবিহীন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অক্টোবরে সেনা প্রধান বুরহানের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের (Coup) মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। দেশের আধাসামরিক বাহিনীও তাতে সামিল ছিল। কিন্তু তারপর থেকে দেশে এখনও গণতন্ত্রের শাসন ফেরেনি। আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে এবিষয়ে সমাধান সূত্রে আসতে পারেনি সেনা। দুই পক্ষই একে অপরের বিরোধিতা করে যাচ্ছে।