নয়াদিল্লি: একটি গাড়ি কীভাবে জীবনের অঙ্গনে নিজেই চরিত্র হয়ে উঠতে পারে তা ঋত্বিক ঘটকের অযান্ত্রিক সিনেমায় বিমল চরিত্রে দেখেছেন দর্শকরা। বৃহস্পতিবার ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। এবার সামনে এল কীভাবে একটি সাধারণ পুরনো গাড়ি মনমোহন সিংয়ের (Manmohan Singh) জীবনে শিকড় জড়িয়ে থাকার চরিত্র হয়ে উঠেছিল। কোটি কোটি টাকা দামের বিএমডব্লিউয়ের বদলে পুরনো মারুতি গাড়িকে আঁকড়ে ধরতে চাইতেন তিনি। দীর্ঘদিন ওই গাড়িকে আগলে রেখেছিলেন। মনমোহন সিং ১৯৯৬ সালে ওই গাড়িটি কিনেছিলেন। মৃত্যুর আগে দীর্ঘ ২৮ বছর গাড়িটি আগলে রেখেছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভার মনোয়নপত্রে মনমোহন জানিয়েছিলেন, ওই গাড়ির দাম ছিল ২১ হাজার ৩৩ টাকা।
জার্মান চ্যান্সেলর থেকে প্রাক্তন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মনমোহন সিংয়ের আর্থিক সংস্কার, সার্বিক কাজের প্রশংসা করেছেন। তাঁদের কথাতেও উঠে এসেছে, মনমোহন সিং বিজ্ঞাপন ছাড়াই কাজ করে গিয়েছেন নীরবেই। দেশের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। সামাজিক সুরক্ষায় একের এক প্রকল্প চালু করেছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর প্রয়াণের পর যে বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হল, মনমোহন সিং নিজের শিকড় ভুলে যাননি। শৈশবে গ্রামে কাটানো মধ্যবিত্ত জীবনকে ভুলতে পারেননি। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে যখন ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে এসপিজি বলেছিল দামি বিএমডব্লিউ গাড়ি চড়তে। তিনি সাধারণ মারুতি ৮০০ গাড়িকে বেছে নিতে চেয়েছিলেন। মনমোহনের সেসময়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার অসীম অরুণ শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক দৃষ্টিতে মনমোহন তাকিয়ে থাকতেন মারুতি গাড়ির দিকে। তিনি মধ্যবিত্ত শিকড়কে ভুলতে পারেননি।
আরও পড়ুন: মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাড়িতে উপস্থিত মোদি-শাহ
এখন উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী ওই প্রাক্তন আইপিএস অসীম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই একটিই গাড়ি ছিল নিজের। যখন ওটার পাশ দিয়ে যেতাম তিনি বিএমডব্লিউর দিকে তাকিয়ে বলতেন, অসীম এই গাড়িতে যেতে আমার ভালো লাগে না। মারুতি আমার নিজের গাড়ি। সাহেব (মনমোহন সিং) মারুতিতে খুঁজে পেতেন নিজের সত্ত্বা। মনমহোন সিং বলতেন, আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। সাধারণ মানুষের যত্ন নেওয়া আমার কাজ। মারুতি তাই আমার কাছে গাড়ির চেয়েও বেশি কিছু।
একইসঙ্গে মনমোহন সিংয়ের এই প্রাক্তন নিরাপত্তা আধিকারিক জানিয়েছেন,সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে গাড়িটা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পরিচিতির প্রতীক। সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে দেখতেন ওই গাড়িকে। তাঁর শৃঙ্খলাপরায়ণ জীবন ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। সবসময় তাঁর মধ্যে ছাত্র সত্বা বিরাজ করত। জ্ঞানের প্রতি তাঁর অন্বেষণ ছিল সর্বদা। সবসময় স্টুডেন্ট মুডে থাকতেন। তিন বছর প্রধানমন্ত্রীর দেহরক্ষী তথা নিরাপত্তা আধিকারিক থাকার সময়ের কথা তুলে ধরে ওই প্রাক্তন আইপিএস বলেন, তাঁকে কাছ থেকে দেখে বুঝেছি বিশাল দায়িত্ব সামলে, ওইরকম ক্ষমতার অধিকারী হয়েও কীভাবে সরল থাকতে হয়।
দেখুন অন্য খবর: