পুর্ব বর্ধমান: সারা দেশ যখন দোল পূর্ণিমার দিন রঙের উচ্ছ্বাসে (Holi 2025) মাতোয়ারা, তখন বর্ধমান (Burdwan) শহর থাকে শান্ত, স্বাভাবিক। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তে যখন মানুষ আবিরে রঙিন হয়ে ওঠে, তখন বর্ধমানের পথঘাট থাকে একেবারে সাধারণ দিনের মতো। কারণ, বর্ধমানবাসীর জন্য রঙের উৎসবের দিন দোল পূর্ণিমা নয়, বরং তার পরের দিন। শতবর্ষ প্রাচীন এই রীতি (Ancient Ritual) আজও সমানভাবে বহমান।
কিন্তু কেন এমন ব্যাতিক্রমী দোল উৎসব? আসলে বর্ধমানের দোল উৎসবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে রাজবাড়ির ইতিহাস। বর্ধমান রাজবাড়িতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কুলদেবতা রাধাগোবিন্দ জিউ-এর আরাধনা করে চলেছেন। দোল পূর্ণিমার দিন লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। রাজ পরিবারের ঐতিহ্য অনুসারে, এই দিনে কেবলমাত্র দেবতাদের পায়ে আবির নিবেদন করা হয়। এরপর দেবতার আশীর্বাদ নিয়ে পরের দিন শহরবাসী রঙের উৎসবে মেতে ওঠেন।
আরও পড়ুন: দোলের গভীর রাতে দেবীর আবির্ভাব!
এই রীতি শুরু হয় মহারাজ মহাতাব চাঁদের আমল থেকে। তখন দোল পূর্ণিমার দিন পূজার আয়োজন এতটাই ব্যস্ততায় ভরা থাকত যে, রাজ পরিবারের সদস্যদের বা সাধারণ মানুষের রং খেলার সময়ই মিলত না। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আর রং খেলার উপযুক্ত পরিবেশ থাকত না। তাই এক অভিনব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—পরের দিন, যখন আর পূজার বাধ্যবাধকতা থাকবে না, তখনই রং খেলা হবে। সেই থেকেই বর্ধমানে দোলের রঙের উৎসব পালিত হয় পূর্ণিমার পরের দিন।
এখন আর রাজা নেই, রাজত্বও নেই, কিন্তু প্রথা রয়ে গেছে একইরকম। বর্ধমানের মানুষ আজও এই ঐতিহ্য মেনে চলেন। দোলের দিন শহর স্বাভাবিক থাকলেও পরের দিন সকাল থেকেই শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি। কালের বিবর্তনে সেই আড়ম্বর অনেকটাই কমেছে, তবুও আজও সন্ধ্যায় ভোগ নিবেদনের পর তা দর্শনার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
দেখুন আরও খবর: