নয়াদিল্লি: তালিকায় থাকা কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ আর বেসরকারিকরণ কেন ততটা জলদি এগোচ্ছে না, সে ব্যাপারে বিভিন্ন মন্ত্রকের কাছে রীতিমত কৈফিয়ত চাইতে শুরু করলেন নরেন্দ্র মোদি। চলতি আর্থিক বছরে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে ৬৫০০০ কোটি টাকা রাজকোষে ঢোকানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
গত ১২ অগাস্ট ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণ বিষয়ক কাজ কতটা জরুরি ভিত্তিতে এগোচ্ছে সে বিষয়ে একটি পর্যালোচনা বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ক্যাবিনেট সচিব জানিয়ে দেন যে সমস্ত মন্ত্রকের আওতায় থাকা রুগ্ন সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের কাজ এখনও এগোয়নি, তাদের কারণ দেখিয়ে জানাতে হবে কেন দেরি হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ করে মোট ২৫,৪৪৪ কোটি টাকা পেয়েছে মোদি সরকার। ওই তিনটি সংস্থা হল ওএনজিসি, এলআইসি এবং পারাদ্বীপ ফসফেটস লিমিটেড। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অর্থ অবশ্য এসেছে এলআইসি-র শেয়ার বিক্রি করে। দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ অবশ্য মনে করেন, এলআইসি অর্থাৎ জীবন বিমা নিগমের মত সংস্থার বেসরকারিকরণ অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের পক্ষে মোটেই ভাল লক্ষণ নয়।
কেন্দ্রের উদ্বেগের মূল কারণ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি চিহ্নিত মোট ৬৯৭টি সরকারি উদ্যোগ আছে এই বেসরকারিকরণের তালিকায়। অথচ লক্ষ্যের তুলনায় কাজ এগোচ্ছে অত্যন্ত শ্লথ গতিতে। ওএনজিসি, এলআইসি আর পারাদ্বীপ ফসফেটস ছাড়ায় একমাত্র এয়ার ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্বিঘ্নেই বেসরকারি হাতে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: মোদির ভারতে ৯৭ কোটি মানুষ ভালো করে খেতে পান না
তাঁদের এই সরকারি সংস্থা বেচে দেওয়ার পক্ষে অজুহাত খাড়া করতে গিয়ে চলতি বছরের জুন মাসে নিজের বক্তব্যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ জানিয়ে দেন, এভাবে বিলগ্নিকরণের মূল উদ্দেশ্য কখনই সরকারি সংস্থার গণেশ ওল্টানো নয়। আসলে তাঁরা চাইছেন, ওই সব প্রতিষ্ঠান যাতে আরও দক্ষ ও পেশাদার পথে লাভজনক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ পায়।
যদিও দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই কেন্দ্রের এই আশ্বাস সত্ত্বেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। কারণ তাদের আশঙ্কা মোদি সরকারের এই লাগাতার সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণের উদ্যোগ আসলে দেশের বুনিয়াদী আর্থিক কাঠামোটাকেই শিকড় সুদ্ধ উপড়ে ফেলে এক সম্পূর্ণ নতুন ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনার অংশ মাত্র।