সাগর দত্ত হাসপাতালে এক রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই রোগী মারা যান, রোগীদের তরফে অভিযোগ বহুক্ষণ অপেক্ষার পরেও অক্সিজেন সিলিন্ডারটুকুরও ব্যবস্থা হয়নি, তাঁদের অভিযোগ চিকিৎসকদের গাফিলতিতেই মারা গেছেন সেই রোগী। এই ঘটনার পরে উত্তেজনা ছড়ায়, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সম্ভবত ডাক্তার বা কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হচ্ছে। ঘটনাস্থলে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ পৌঁছে যায়, থানার ওসি নিজে হাজির হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মিনিট ১৫-২০ এই ঘটনা চলেছিল। ডাক্তারদের অভিযোগ, কেউ একজন বলেছে, আরজি কর করে দেব। না, এই অভিযোগের সপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই যেমন প্রমাণ নেই যে ডাক্তাররা বলেছেন এত কিছু চাইলে নার্সিং হোমে নিয়ে যাও পেশেন্টকে, যা জানিয়েছেন স্থানীয় কিছু মানুষ। না, তারও কোনও প্রমাণ নেই। কিন্তু ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছেন, এরকম ঘটনা ঘটেই চলেছে, তাহলে ওঁরা আবার অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে নামতে পারেন। তার মানে এই বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে, এই ডেঙ্গি সংক্রমণের মধ্যে আবার সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি হতে পারে। আবার লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ অকূল পাথারে পড়তে পারেন যাঁরা মাত্র ক’দিন আগেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন, আবার তাদের কপালে ভাঁজ। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রুগি আসা বন্ধ হয়েছে, কাজেই অসুবিধেতে আছে কর্পোরেট হাসপাতালগুলো, তাদের খানিকটা অন্তত পুষিয়ে যাচ্ছে, তাঁরা কিছু রোগী পাচ্ছেন এই কর্মবিরতির ফলে। সবমিলিয়ে লাভ কর্পোরেট হাউসের আর ক্ষতি আম আদমির। সেটাই আজ বিষয় আজকে, কর্মবিরতির নামে সরকারকে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন তাঁদের সুরক্ষা চাই, কী ধরনের সুরক্ষা? রাজ্যের এই অসংখ্য বড় ছোট হাসপাতালে বহু এমন ঘটনা ঘটে। না ঘটলে ভালো হত কিন্তু ঘটে। অনেক সময়েই রোগী, রোগীদের পরিবার, পাড়ার লোকজনদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে হাজির ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়, তা কখনও সখনও ধাক্কাধাক্কি, কখনও তারচেয়েও বেশি কিছু, মারপিট ভাঙচুরও হয়। আর সেসব নতুন কিছু নয়, এমন নয় যে আগের জমানাগুলোতে তা হত না, এখন হয়, বা আগে হত এখন হয় না।
আরও পড়ুন: Aajke | কলকাতা পুলিশ করলে বিলা, আর সিবিআই করলে লীলা?
আসলে রোগীদের কাছে যিনি মারা যাচ্ছেন তিনি আত্মীয়, বন্ধু, কাছের লোক। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে যিনি মারা যাচ্ছেন তিনি একজন রোগী, কাজেই এই দ্বন্দ্ব এই বিরোধ সাধারণভাবে মেটানো প্রায় অসম্ভব। একজন মরণাপন্ন রোগী মারা যাওয়ার পরেও বাড়ির লোকজন বলেন হাসপাতালে ঢোকার আগেও তো কথা বলছিলেন। আবার অন্যদিকে ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলতিও তো কম নয়, তাও বারবার দেখেছি। কিন্তু এই ঘটনার জন্য যদি সুরক্ষার কথা বলা হয় তাহলে প্রতিটা হাসপাতালে সিআরপিএফ পোস্টিং করাতে হবে বা পুলিশ ফাঁড়ি খুলে দিতে হবে। সেটা কি সম্ভব? আমরা কি এক পুলিশ রাজ্যে বসবাস করি? ওঁরা বলছেন ওঁরা সুরক্ষিত নয়, কখন বলছেন যখন কমবেশি রাজ্যের ৪০ শতাংশ মানুষ সরাসরি বন্যার জলের মুখোমুখি, ঘরছাড়া, ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। কখন বলছেন যখন কলকাতাতে আবার ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। এটা কি থ্রেট? এটা কি ভয় দেখানো? এটা কি ব্ল্যাকমেল? কী চাইছেন এই জুনিয়র ডাক্তারেরা? রাজ্যের মানুষের মুখোমুখি দাঁড়াতে? অন্য রাজ্য হলে এসমা জারি করে, পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে আন্দোলন ভেঙে দিত, এ রাজ্যের সরকার সেটা করছে না বলেই কি এই ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে? আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে রাজ্য জুড়ে বন্যা পরিস্থিতি, যা আগামী সপ্তাহে নাকি আরও খারাপ হতে চলেছে, কলকাতার বিভিন্ন অংশ থেকে ডেঙ্গির খবর আসছে। এরকম একটা সময়ে জুনিয়র ডাক্তারেরা এক জায়গার সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় কর্মবিরতির হুমকি দিচ্ছেন। এটা কি থ্রেট? না ব্ল্যাকমেল? রাজ্য সরকারের কী করা উচিত বলে আপনারা মনে করেন?
এক অন্যায় যুদ্ধ আমরা দেখেছিলাম মহাভারতে। ছল কপট করেই কর্ণের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সেদিন যুদ্ধে হেরে যেত অর্জুন, কিন্তু রথের চাকা মাটিতে ঢুকে গিয়েছিল, সূর্যপুত্র কর্ণ বলেছিলেন আমাকে একটু সময় দাও, আমি নিরস্ত্র। কিন্তু সেই নিরস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করেছিল অর্জুন। অত বড় বীর, কিন্তু এই কর্ণবধের কলঙ্ক তিনি মুছে ফেলতে পারেননি। না, বীর অর্জুন সেদিন এক নিরস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করেছিলেন। ডাক্তারবাবুরা লড়ছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষার দাবিতে, কিন্তু সামনে অসহায় মানুষ, বানভাসি মানুষ, অসহায় মানুষ, রোগে আক্রান্ত মানুষ, এই সময়ে ডাক্তারদের কর্মবিরতি এই অসহায় মানুষদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ ঘোষণা যাতে মারা যাবেন সেই সাধারণ মানুষই। এ জিনিস কাম্য নয়, আমরা চাইব হুঁশ ফিরুক ডাক্তারবাবুদের, চাইব এরকম হুমকি দিয়ে আর কর্মবিরতিতে না নেমে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যের দাবিতে আন্দোলন করুন, সে আন্দোলনে আপনারা নিশ্চিত বিজয়ী হবেন আর এই থ্রেট দিয়ে ভয় দেখিয়ে এক সামাজিক ভাঙন ডেকে আনছেন যা কারও কাছেই খুব ভালো নয়।